বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৩ পূর্বাহ্ন

প্রতিবেশীর সঙ্গে আচরণ

নিউজ ডেস্ক :: মানব সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর সঙ্গে কখনোই রূঢ় আচরণ করা যাবে না। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক হতে হবে ভ্রাতৃত্বের, ভালোবাসার। অথচ আজকাল শহুরে মানুষরা তো প্রতিবেশীকে চেনেও না। গ্রাম-গঞ্জের মানুষ প্রতিবেশীর খোঁজখবর রাখলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সামান্য বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে বছরের পর বছর। অথচ প্রতিবেশীর অন্যতম প্রধান অধিকার হচ্ছে, তার সঙ্গে উত্তম আচরণ ও ভালো ব্যবহার করা।

আসুন প্রতিবেশীর সঙ্গে আমরা কেমন আচরণ করবো তা জেনে নেই-
– আপনার বাসার চারপাশে (ডানে-বামে-ওপরে-নিচে-সামনে ও পেছনে) ৪০ ঘর হচ্ছে প্রতিবেশী। তাদের সাথে পরিচিত হোন। যোগাযোগ রাখুন।
– দেখা হলে আগে সালাম দিন। হাসিমুখে কুশল বিনিময় করুন।
– প্রতিবেশীর দেয়া যে-কোনো ছোট উপহার সাদরে গ্রহণ করুন।
– প্রতিবেশীর কাছ থেকে কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস তাকে না বলে আনবেন না। যদি অনুমতি নিয়ে কোনোকিছু আনতে হয়, তা অক্ষত অবস্থায় দ্রুত ফেরত দিন। ক্ষতি হলে বা হারিয়ে গেলে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করুন এবং সুযোগ থাকলে কিনে দিন।
– সবসময় নিজের জন্যে প্রার্থনা করুন- ‘আমি যেন আমার প্রতিবেশীর কষ্টের কারণ না হই’। প্রতিবেশীর সাথে কোনো ধরনের বিবাদে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকুন।
– ভালো কিছু রান্না করলে অল্প হলেও প্রতিবেশীকে পাঠান।
– নবীজী (স) বলেন- ‘প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে যে পেট পুরে খায়, সে বিশ্বাসী নয়’। প্রতিবার খাওয়ার আগে প্রতিবেশী অভুক্ত আছে কিনা খোঁজ নেয়া সম্ভব নয়। তাই ভাত রান্নার সময় এক মুঠো পরিমাণ চাল আলাদা পাত্রে উঠিয়ে রাখুন। মাস শেষে এই চালের সমপরিমাণ অর্থ দান করে দুস্থ ও এতিমদের অন্নের সংস্থান করুন।
– প্রতিবেশীর আনন্দে শরিক হোন। তার সাথে মমতার বন্ধন গড়ে তুলুন। আবার সম্পর্কের সীমা বজায় রাখুন।
– পাশাপাশি অবস্থানের কারণে পরস্পরের দোষগুণ সহজে জানা হয়ে যায়। এ-ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর দোষগুলো বলে বেড়ানো থেকে বিরত থাকুন।
– প্রতিবেশীর বিপদে যথাসাধ্য পাশে দাঁড়ান। কেউ তার ক্ষতি করতে চাইলে যথাসম্ভব প্রতিহত করুন। কেননা প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে তা আপনার ঘরকেও ছারখার করে দিতে পারে।
– অসুস্থ হলে দেখতে যান। পথ্য, শুশ্রূষাসহ যে সেবা তার প্রয়োজন তা সাধ্যমতো তাকে দিন।
– প্রতিবেশীর কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন। অবশ্য যদি বেআইনি ও সন্দেহজনক কিছু দৃষ্টিগোচর হয়, তাহলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানান।
– তার মন্দ আচরণের জবাবে আপনি সবসময় ভালো আচরণ করুন।
– নিত্যপ্রয়োজনীয় ছোটখাটো সাহায্য-সহযোগিতায় কখনো বিরক্ত হবেন না।
– নিজের বাড়ি বা জমি বিক্রি করার আগে প্রতিবেশীকে জিজ্ঞেস করতে পারেন তিনি কিনতে আগ্রহী কিনা। আগ্রহী হলে ন্যায্য দামে কেনার সুযোগ দিন।
– প্রতিবেশী কেউ মৃত্যুবরণ করলে সৎকার/ কাফন-দাফনের সাহায্যে এগিয়ে আসুন। জানাজায় অংশ নিন।
– বিপদে-আপদে প্রতিবেশীর প্রয়োজনে এগিয়ে আসুন, সান্ত্বনা দিন। প্রতিবেশীর কল্যাণে আপনাকে যদি কিছু ছাড়ও দিতে হয়, অম্লান বদনে তা করুন। প্রাকৃতিক নিয়মেই দানের উত্তম প্রতিদান আপনি পাবেন।

যা করা যাবে না :
– জানালা/ খোলা দরজার সামনে দিয়ে চলাফেরার সময় উঁকি দেয়া।
– প্রতিবেশীর বাসার সামনে ময়লা ফেলা।
– উচ্চশব্দে গান বাজানো ও টিভি দেখা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় হইহল্লা করে প্রতিবেশীর ঘুম বা বিশ্রামের ক্ষতি করা।
– প্রতিবেশীর চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া।
– প্রতিবেশীর ফসলের ক্ষতি করা কিংবা প্রতিবেশীর পশু এসে কিছু নষ্ট করেছে বলে পশুটিকে আঘাত করা। প্রতিবেশীকে গালমন্দ করা।
– নিজের বাড়ির/ জমির সীমানা পিলার, দেয়াল, জানালা, সিঁড়ি প্রতিবেশীর জমিতে বাড়িয়ে দেয়া।
– প্রতিবেশীর কাছ থেকে যখন-তখন টাকা বা বিভিন্ন দ্রব্যাদি ধার নেয়া।
এসএ/


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: