বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪২ অপরাহ্ন

রাজাকারের তালিকা প্রকাশ আটকে আছে আইনের সংশোধনীতে

নিউজ ডেস্ক :: মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের তালিকা প্রকাশ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঘটা করে ১০ হাজারের বেশি রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরে সেই তালিকা নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে মন্ত্রণালয়। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

জানানো হয়, ২০২০ সালের স্বাধীনতা দিবসের আগেই নতুন করে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, এ ধরনের তালিকা প্রকাশের এক্তিয়ারই নেই সরকারের। শেষ পর্যন্ত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন সংশোধন করে সেই সুযোগ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এমপির নেতৃত্বে একটি উপকমিটিও গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি রাজাকারের তালিকা সংগ্রহের প্রক্রিয়া ও প্রকাশের বিষয়টি নির্ধারণ করবে। এই কমিটির সুপারিশেই জামুকা আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, আইন সংশোধন করে রাজাকারের তালিকা তৈরি এবং তা প্রকাশের এক্তিয়ার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হবে। তালিকা প্রকাশের উদ্দেশ্যে জামুকা আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং নিয়ে সেটি সংসদে উত্থাপনের কথা ছিল গেল বিজয় দিবসের আগেই, কিন্তু তা হয়নি। আর এ নিয়ে কার্যত সব ধরনের উদ্যোগ থমকে রয়েছে।

গতকাল রবিবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ইত্তেফাককে জানান, সংসদের আগামী অধিবেশনে এটি বিল আকারে উপস্থাপন করা হতে পারে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই অধিবেশন শুরু হবে। তিনি বলেন, আইন পাশ না হওয়া পর্যন্ত রাজাকারের তালিকা প্রকাশের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব নয়। তবে তিনি বলেন, আগামী স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চের মধ্যে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরো বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির যেসব নথি থানা ও জেলা কালেক্টরেটে ছিল, সেসব নথির অনেকগুলোই সুকৌশলে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাই পরিপূর্ণ তালিকা পাওয়া কঠিন হচ্ছে। তিনি বলেন, তত্কালীন ১৯ জেলার রেকর্ডরুমে যেসব দালিলিক প্রমাণ ছিল, সেগুলো দিতে বলা হয়েছিল; কিন্তু তা-ও এখন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এসব তালিকা খুঁজে পেতে সরকারের একাধিক সংস্থা কাজ করছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাজাকারের তালিকা হিসেবে ১০ হাজার ৭৮৯ জনের নাম প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ঐ তালিকায় অনেক শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতার নামও প্রকাশ পায়। বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে সর্বমহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। আন্দোলন-সংগ্রামও শুরু হয়ে যায়। বিব্রত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐ তালিকা স্থগিত করার নির্দেশ দেন। তালিকাটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা এখন খুবই জটিল রাজনৈতিক বিষয়। এখন বেশির ভাগ রাজাকার বেঁচে নেই। ক্ষেত্রবিশেষে তাদের সন্তান ও আত্মীয়স্বজন আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠনের মধ্যে বেশ শক্তিশালী অবস্থানও তৈরি করে নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তান বাহিনীর দালালি করেছিল, তাদের একটি গেজেট সে সময় করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে ট্রাইব্যুনালে তাদের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলাও হয়েছিল। পাশাপাশি এমন অনেকেই ছিলেন, যারা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন আবার মুক্তিযোদ্ধাদেরও তথ্য দিতেন। পারস্পরিক বিরোধের কারণে সে সময় অনেক আওয়ামী লীগ নেতার নামেও থানায় দালাল আইনে মামলা হয়। সেসব ব্যক্তির নামও ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘রাজাকারের তালিকায়’ চলে আসে। ১৯৭০ সালের উপনির্বাচনে যেসব ব্যক্তিকে এমপিএ বা এমএনএ নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল, তাদেরও সেখানে রাজাকার বলে উল্লেখ করা হয়।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: