শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন

শিরোনাম
ঈদে ১৪ টি মিউজিক ভিডিও মুক্তি পেয়েছে প্রিন্স খানের চাটখিলে পৈত্রিক সম্পত্তি জবরদখলে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তপ্তদেহ শীতল করতো গাছের নিচে বসেই, গাছ না থাকায় এত গরম সরকার হজযাত্রীদের সর্বোত্তম সেবা দিতে বদ্ধপরিকর-ধর্মমন্ত্রী দেশের স্বার্থ বিরোধী কাজের সাথে যারাই জড়িত, তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী – আনু মুহাম্মদ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে  প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে- সুবর্ণচর উপজেলা আ.লীগ হাতিয়ার উন্নয়নে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচিকে কাজে লাগানো হবে – মোহাম্মদ আলী এমপি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ৩৯ বছর পর জমি ফিরে পেলেন যদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার শিবালয়ে ১৫তম  মাই টিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত  ক্রীড়াবিদরা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে- ধর্মমন্ত্রী

পান্তা তৈরি করে মাস্টারশেফে অস্ট্রেলিয়ায় তৃতীয় কিশোয়ার

নিউজ ডেস্ক :: বাংলাদেশের গ্রামবাংলার মানুষের আবহমানকালের খাবার পান্তাভাত আর আলুভর্তা পরিবেশন করে রান্না বিষয়ক একটি জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী। আর এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন জাস্টিন।

দুই দিন ধরে চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় জাস্টিন, পিট ও কিশোয়ার এই তিন ফাইনালিস্টকে নিয়ে। প্রথম দিন ফাইনাল ডিশে কিশোয়ার রান্না করেন ‘স্মোকড ওয়াটার রাইস, আলু ভর্তা ও সার্ডিন’। অর্থাৎ বাঙালির কাছে চিরচেনা পান্তা-ভাত, আলু ভর্তা আর সার্ডিন মাছ ভাজি।

ফাইনাল ডিশ রান্না নিয়ে কিশোয়ার বিচারকদের বলেন যে “প্রতিযোগিতায় এমন রান্না সত্যিই চ্যালেঞ্জের। সাধারণ রেস্টুরেন্টে এমন রান্না হয় না। কিন্তু বাঙালির কাছে এটা পরিচিত রান্না।” আর ফাইনাল ডিশ হিসেবে এটা রেঁধে নিজের তৃপ্তির কথাও জানান কিশোয়ার।

এই রান্না দেখে ও খেয়ে বিচারকের রীতিমতো অভিভূত হয়ে পড়েন। তিনজনেই দশে দশ দেন কিশোয়ারকে।

তিনি হাঁসের একটি পদ রান্না করা শুরু করেছিলেন। বিচারকেরা যখন তাঁর রান্না দেখতে এলেন সবকিছু দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন “এখানে কিশোয়ার কোথায়?”

তারপরেই তিনি তার মেন্যু চেঞ্জ করার চিন্তা করেন আর ফাইনাল ডিশ হিসেবে পরিবেশন করেন বাঙালির চির পরিচিত আলু ভর্তা, পান্তা ভাত আর সার্ডিন মাছ, যেই মাছের স্বাদ অনেকটা ইলিশ মাছের কাছাকাছি।

চূড়ান্ত পর্বে ফাইনাল ডিশ রেঁধে ৫১ নাম্বার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন, প্রথম স্থানে ছিলেন পিট ৫৩ নাম্বার নিয়ে। তবে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া’র ফাইনাল রেজাল্টের আগেই লাখ লাখ বাঙালির মন জয় করে নিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রামসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত – এবং একই সঙ্গে প্রচণ্ড জনপ্রিয় – কয়েক পদের রান্নার ভিডিও, আর সঙ্গে পরিচিতি পেয়ে যান এসবের রাঁধুনি।

লাউ চিংড়ি, বেগুন ভর্তা, খিচুড়ি, মাছ ভাজা, আমের টক, খাসির রেজালা – মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একের পর এক এমন মুখরোচক খাবার রান্না করে বিচারকসহ বিভিন্ন ভাষাভাষীর দর্শকের নজর কাড়েন এই শেফ।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশে প্রচলিত নানা ধরনের খাবারকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার কারণেই ৩৮ বছর বয়সী এই শেফকে অন্যসব প্রতিযোগী থেকে আলাদা করেছে।

রান্নাবান্নার প্রতি ঝোঁক এলো যেভাবে কিশোয়ার চৌধুরী একজন বিজনেস ডেভেলপার, পারিবারিক প্রিন্টিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন তিনি। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ায় হলেও তাঁর পারিবারিক আবহটা সবসময়ই ছিল বাঙালিয়ানা। কথায় কথায় জানালেন, তাঁর বাবার বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরের আর মা কলকাতার বর্ধমানের। তাঁরা দুজনে প্রায় ৫০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান।

তবে বিদেশে বসবাস করলেও নিজের দেশের ভাষা, সংস্কৃতি চর্চা সবকিছুই বজায় রেখেছেন কিশোয়ারের বাবা-মা, আর সেটা তারা নিজের সন্তানদেরও ধারণ করতে উৎসাহিত করেছেন।

“আমাদের বাসার ভেতরে শুধু রান্না না, বাজারটা কোথা থেকে আসে, কোন ইনগ্রেডিয়েন্ট কোথা থেকে কিনি, সেগুলোও সব সময় দেখানো হয়েছে আমাদের,” সম্প্রতি বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাতকারে বলেছিলেন তিনি।

“আমাদের বাগানে হার্বস থেকে শুরু করে শাকসবজি মরিচ-লাউ সব কিছুই আমরা নিজেরা উৎপাদন করি। ছোটবেলা থেকে আমাদের বাবা-মা এসব কাজে আমাদের সম্পৃক্ত করেছেন”।

কিশোয়ারের কখনও মনে হয়নি যে হঠাৎ করে তিনি রান্না শুরু করেছেন।

“যেগুলো সব সময় দেখে আসছি, করে আসছি, সেগুলোই রান্না করেছি। আমার বাবা মাছ ধরতে পছন্দ করেন, ছোটবেলায় তার সাথে মাছ ধরতে যেতাম। ওই যে ফ্রেশ মাছটা নিয়ে রান্না করা, সেটা দেখে বড় হয়েছি। আসলে এই পরিবেশটা সবসময় বাসার মধ্যেই ছিল” – আলাপকালে এভাবেই বলছিলেন কিশোয়ার।

মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় যাত্রা
চিন্তাটা দুই সন্তানের মা কিশোয়ারের মাথায় আসে ২০২০ সালে সারা দুনিয়ার মতো অস্ট্রেলিয়াতেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর।

“গত বছরেই একটা বিষয় বারবার মনে হচ্ছিল যে আমার বাবা-মা যে রকম করে তাদের সংস্কৃতি, খাবার-দাবার সবকিছু আমাদের মধ্যে ইনস্টল করেছেন, আমি সেটা সন্তানদের মধ্যে করে দিতে পারবো কি-না।

এটা শুধু আমার না, আমার মনে হয় দেশের বাইরে যেসব বাবা-মায়েরা থাকেন, সবার মধ্যেই এই চিন্তাটা থাকে”।

আর এমন চিন্তা থেকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা বই লেখার পরিকল্পনা করেন কিশোয়ার।

“আমার ছেলের বয়স এখন ১২, এ রকম একটা বয়সে নিজের সংস্কৃতি, পূর্ব-পুরুষ এই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। আমি সবসময় ভাবতাম ওদের জন্য কী রেখে যাওয়া যায়।”

তবে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় আবেদন করার কোন ইচ্ছাই কখনো ছিল না কিশোয়ারের। তার ভাষায়, “এটা আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল। সে আমাকে প্রায়ই বলতো মা তুমি এটা পারবা। তুমি অ্যাপ্লাই করো না কেন।

“আমার ছেলেকে আমি জুনিয়র মাস্টারশেফের জন্য চেষ্টা করতে বলছিলাম, কারণ সেও ভালো রান্না পারে। তারপর সে যখন বলছিল আমাকে অ্যাপ্লাই করতে, তখন ভাবলাম তাদের কাছে এক্সামপাল সেট করতে – একটা চেষ্টা করে আমি দেখতেই পারি।”

চার বছর বয়সী শিশুকন্যা সেরাফিনা ও বারো বছর বয়সী পুত্র মিকাইলের কথা ভেবে কিশোয়ারের এই চেষ্টায় যেন আরো গতি আসে। আর পাশে সবসময় ছিলেন তাঁর পরিবার ও জীবনসঙ্গী এহতেশাম নেওয়াজ। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসি


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: