বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৯ অপরাহ্ন

মেয়াদী আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির কম হবে না : বাংলাদেশ ব্যাংক

নিউজ ডেস্ক :: মেয়াদী আমানতে এখন থেকে কোনো ব্যাংক আর মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম সুদ দিতে পারবে না। তিন মাস বা তার বেশি মেয়াদের জন্য ঘোষিত আমানতের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।

তবে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহারের সীমা বর্তমানের মতো ৯ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে। রোববার এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।

আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং ব্যাংকিং খাতে দায়-সম্পদের ভারসাম্যহীনতা রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মেয়াদী আমানতে বর্তমানে তিন থেকে ৫ শতাংশ সুদ পাওয়া যাচ্ছে। বেশি মেয়াদী আমানতে ৬ শতাংশ সুদ নির্ধারিত আছে। অথচ সাম্প্রতিক গড় মূল্যস্ম্ফীতি রয়েছে ৬ শতাংশের মতো।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যক্তি পর্যায়ের মেয়াদী আমানত এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকতা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, অবসরোত্তর পাওনাসহ বিভিন্ন পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে গঠিত তহবিলের যেকোনো পরিমাণের মেয়াদী আমানতের ওপর সুদহার কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম নির্ধারণ করা যাবে না। তবে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।

এতে বলা হয়, ৩ মাস ও তদূর্ধ্ব মেয়াদী আমানতের ওপর সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা মানতে হবে। যে মাসের সুদহার নির্ধারণ করা হবে তার তিন মাস আগের ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিতে হবে। উদহারণস্বরূপ- আগস্টের আমানতের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে মে মাসের গড় মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিতে হবে। গত মে মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকের তহবিলের প্রধান উৎস আমানতকারীদের থেকে সংগৃহীত অর্থ। আমানতের ওপর সুদহার অতিমাত্রায় কমলে ভবিষ্যতে ব্যাংকের আমানতের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। ফলে ব্যাংকের দায়-সম্পদ ব্যবস্থাপনায়ও ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে।

ব্যাংক থেকে পাওয়া বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ ব্যাংক মেয়াদী আমানতের ওপর মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম সুদ দিচ্ছে। ক্ষুদ্র আমানতকারীসহ অন্যান্য আমানতকারীদের একটি অংশ তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ব্যাংকে রক্ষিত আমানতের সুদের ওপর নির্ভরশীল। ব্যাংকে রক্ষিত মেয়াদী আমানতের ওপর মূল্যস্ম্ফীতির হারের চেয়ে কম সুদ দেওয়ায় আমানতকারীদের ক্রয় ক্ষমতা কমছে। এতে করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া মেয়াদী আমানতের ওপর সুদহার অত্যধিক হ্রাস জনসাধারণের সঞ্চয় প্রবণতাকে নিরুৎসাহিত করে। ফলে আমানতকারীরা তাদের সঞ্চিত অর্থ ব্যাংকে রাখার পরিবর্তে ঝুঁকিপূর্ণ খাতসহ বিভিন্ন অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের প্রবণতা বাড়ছে।

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় জানানো হয়, ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৯ শতাংশ। তবে আমানতে সুদহার নির্ধারণের ক্ষমতা ব্যাংকগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর নিজেদের মুনাফা ধরে রাখতে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ ব্যাপক কমাতে শুরু করে।

এর মধ্যে করোনা শুরু হওয়ায় ব্যাংকগুলোর সিআরআর দেড় শতাংশ কমানো, প্রণোদনার আওতায় ঋণ বিতরণের জন্য প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পুন:অর্থায়ন তহবিলসহ বিভিন্ন নীতি সহায়তার কারণে বাজারে তারল্য বেড়েছে।

আবার গত অর্থবছর রেমিট্যান্সে রেকর্ড ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়।

এসব কারণে ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ব্যাপক বেড়েছে। অথচ গত জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এসব কারণে গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর অলস তারল্য দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। ফলে বেশিরভাগ ব্যাংক এখন আমানত নিতেই অনীহা দেখাচ্ছে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: