বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৪ পূর্বাহ্ন

প্রতিমা তৈরিতে ব্যাস্ত সিরাজগঞ্জের কারিগরেরা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :: সনাতন ধর্মাবলম্বিদের সর্ববৃহৎ ধমীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে প্রতিমা তৈরির ব্যাস্ততা চলছে সিরাজগঞ্জের পালপাড়া ও মন্দিরগুলোতে। প্রতিমা কারিগড়েরা রাত-দিন কাজ করছেন অপরুপ রুপে দেবী দুর্গা, স্বরস্বতী, লক্ষি, কার্তিক ও গণেশকে সাজিয়ে তুলতে। দূর্গাপূজার পরই অনুষ্ঠিত হবে লক্ষি ও কালিপূজো, ফলে এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে ব্যাস্ততা বেশি হওয়ায় পুরুষের পাশাপাশি পালপাড়ার নারী ও শিশুরাও কাজ করছেন রাত-দিন।

কিন্তু প্রতিমা তৈরির উপকরনের মুল্যবৃদ্ধি ও করোনার অযুহাতে প্রতিমার দাম কম দেওয়ায় লাভ হচ্ছে না বলে দাবি কারিগড়দের। আর ক’দিন বাদেই ভক্তদের আশা আকাংখা পুরন করতে শান্তির বার্তা নিয়ে মর্ত্যলোকে আসছেন দেবী দুর্গা। দেবী দুর্গার যে অবয়বে ভক্তির মাধ্যমে দেবীর মন জয়ের প্রার্থনা করবেন ভক্তরা সেই অবয়ব বা প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়োজিত সিরাজগঞ্জের প্রতিমা কারিগরেরা এখন ব্যাস্ত সময় পার করছেন। মান ভালো হওয়ায় এ জেলার কারিগরেদের তৈরি প্রতিমায় জেলার সকল পূজা মন্ডবের পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি পাশের পাবনা, নাটোর ও বগুড়া জেলার পূজামন্ডপগুলোতেও যাবে এখানে তৈরি দুর্গা প্রতিমা। এছাড়া এবার দুর্গাপূজোর এক সপ্তাহ পরই হবে লক্ষি ও কালিপূজা। আর তাই এখানকার পাল ও কুমার বাড়ির ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজগামীরা রাত-দিন পরিশ্রম করছেন ভক্তদের চাহিদা অনুযায়ি প্রতিমা তৈরি করতে।

অধিকাংশ প্রতিমারই প্রতিকৃতি তৈরী হয়েছে এখন অপেক্ষা শুধু রং আর তুলির আচরের। অথচ নিপুন হাতের ছোয়া আর কঠোর পরিশ্রম করে যারা তৈরী করেছেন প্রতিমা, তাদের অনেকেই আজ বিমুখ। কারন প্রতিমা তৈরির অন্যতম উপকরন মাটি, কাঠ, খড়, বাশ, লোহা ও রংসহ সকল পন্যের মুল্য যে হারে বেড়েছে সে হারে বাড়েনি প্রতিমার দাম। তার উপর এ বছরে করোনার অযুহাতে অনেকটাই কম প্রতিমার দাম। এবার বড় প্রতিমা ৭০-৮০ হাজার ও ছোট প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ হাজার টাকায়। ফলে লাভ হবে না কারিগড়েদের, তারপরও ধর্মীয় আবেগ ও পেশার প্রতিশ্রæতির কারনে বছরের পর বছর প্রতিমা তৈরি করছেন প্রতিমা শিল্পিরা।

প্রতিমা কারিগড় শ্রীকান্ত পাল জানান, পালপাড়াতে প্রতিমা তৈরির ধুম পড়েছে। প্রতিটি বাড়িতেই তৈরি করা হচ্ছে একাধিক দুর্গা প্রতিমা। কারিগড়েরা রাত-দিন প্রায় ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা কাজ করছে অর্ডার নেয়া প্রতিমা তৈরি শেষ করতে।

প্রতিমা কারিগড় লক্ষি পাল জানান, পালবাড়ির পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানভাবে কাজ করছে। দেবী মাকে সাজাতে শত ব্যাস্ততায়ও যত্ন সহকারে কাজ করা হচ্ছে।

প্রতিমা কারিগড় নারায়ন পাল জানান, ৫০ বছর ধরে আমরা প্রতিমা তৈরি করে। এখন প্রতিমা তৈরি করে আর লাভ হয় না, যে হাড়ে উপকরনের দাম বেড়েছে সেহারে প্রতিমার দাম বাড়েনি। তারপরও পৈত্রিক পেশা আকড়ে ধরে আছি।

সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু জানান, চলতি বছর দেবীদুর্গা ধরাধামে আসছেন ঘোড়ায় চড়ে, যাবেন দোলায় চেপে, সনাতন ধর্মাবলম্বিদের মতে এটি অশুভ লক্ষন। ফলে এবার জেলার ৪৮৭টি মন্ডপের পাশাপাশি বিভিন্ন বাড়িতেও দেবী মায়ের সন্তানরা আরাধনা করবেন তার আশিষ পেতে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দূর্গা পূজার প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়োজিত কারিগরদের নায্য মজুরি নিশ্চিতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ঠদের।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: