শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম
চৌদ্দগ্রামে বৃষ্টির প্রার্থনায় ইসতিসকার নামাজ, প্রখর রোদে মুসল্লিদের কান্না হাতিয়ায় সৈকতে দেখা মিলল ‘ইয়েলো বেলিড সি স্নেক’ ফসলি জমি কেটে মাটির ব্যবসা: ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই লাখ টাকা জরিমানা মাটি ব্যবসায়ীর লাখ টাকা জরিমানা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদে কুমিল্লার মফিজুর রহমান বাবলু সিনেমা হলে দেখা যাবে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের গল্প দেশে পৌঁছেছেন টাইগারদের নতুন কোচ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়া : ডাব্লিউএমও নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল জাতি হিসেবে আমাদের সকল প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচন করে গেছে মুজিবনগর সরকার-ধর্মমন্ত্রী

সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন খাঁটি জাতীয়তাবাদী – আনোয়ার হোসেন মনির, কৃষ্ণপুরী

১৭৫৭ সালে ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রে বেঈমান মীর জাফরের সহযোগিতায় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে নির্মম হত্যা কান্ডের মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতার সোনালী সূর্য অস্তমিত হয়। নবাবের পতনের পর বাংলা বিহার ও উড়িষ্যাসহ ভারতবর্ষ চলে গেল ইংরেজ বেনিয়াদের হাতে। তার সাথে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসন ও শোষন করতে থাকে ভারত উপমহাদেশ। ব্রিটিশদের শাসন ১৯০ বছর স্থায়ী হয়। তাদের শাসন শোসন থেকে মুক্তি লক্ষ্যে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। দীর্ঘ একশত বছর মুসলমানেরা চালিয়ে যায় আজাদীর আন্দোলন। যেমন তিতুমীরের ফকির বিদ্রোহ ১৮২৭ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রথম লেখকের বংশের দাদা নোয়াব আলী দাদামহর বড় ভাই গাজী শফিউল আলম হাজী তিতুমীরের সহযোদ্ধা ছিলেন। আন্দোলন ব্যার্থতার পর হুলিয়া মাথায় নিয়ে মক্কায় চলে যান। শরীতুল্লাহ (দুদু মিঞার) ফরায়েজী আন্দোলন ব্যর্থতার রূপ নেয়। পরে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিষ্ফোরন ঘটালো ১৮৫৭ সিপাহী বিপ্লবে। এর মাঝে বাংলা ভাষাবাসী হিন্দু সমাজ থেকে বিদ্রোহ শুরু হয় জীবন দিয়ে প্রমান করে ক্ষুদিরাম, প্রফুল্যচাকী, বাঘাযতীন নাম না জানা যুবক যুবতীর দল। একে একে আত্মহুতি দিলেন স্বাধীনতার বেদীমূলে। ঐ সময়ে ভারতের অন্য প্রান্ত থেকে এক যোগে ভারতবাসী বিদ্রোহ করলে ইংরেজ শাসকচক্র অনেক আগেই ভারত উপমহাদেশ থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হতো। ওদের ছিল হিংসা লর্ড ক্লাইবের উক্তি ভারত বাসী আমাদের কে একটি করে ডিল মারিলে আমাদের পরাজয় হইতো কিন্তু তারা নিরবে পরাজয় মেনে নিয়েছে। বিদ্রোহ কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশদের শত্রু, কারণ তার কবিতা- গান দিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করেন। এবং জেলে যেতে হয়, তিনি হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে গাইলেন অসহায় জাতি মরেছে ডুবিয়া জানে না সন্তরণ কান্ডারী আজ দেখিবে তুমার মাতৃ মুক্তিপন। হিন্দু না ওরা মুসলিম? এই জিজ্ঞাসা কোনজন। কান্ডারী বলো, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।

এক পর্যায় ভারত উপ মহাদেশ কে মুক্ত করার জন্য হিন্দু-মুসলিম ও বাংলা ভাষাবাসী হিন্দুরা এক হয়ে কংগ্রেস নামক একটি রাজনীতিক দল গঠন করেন। ভারতবর্ষ যখন ব্রিটিশদের অত্যাচারের শ্বশনে পরিনত হয়। ঠিক সেই সময় উড়িষ্যার কটকে ১৮৯৭ সালে ২৩ শে জানুয়ারী বাংলা ১৩০৩ সনের ১১ মাঘ তারিখের আজ থেকে ১২৫ বছর আগে সুভাষ চন্দ্র বসু জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন খাঁটি জাতীয়তাবাদী। প্রাথমিক শিক্ষা কটকের ইউরোপীয় স্কুলে। ১৯১৩ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ২য় স্থান অধিকার করেন। ১৯১৫ সালে আই এ প্রথম শ্রেণীতে উন্নিত হন। পাশ করার পর প্রেসিডেন্ট কলেজে দর্শণে অনার্স ভর্তি হয়। নিজ চরিত্রে গুনে ছাত্রদের মাঝে নেতার স্থান অধিকার করেন। ঐকলেজের ইংরেজী অধ্যাপক ওটেন প্রায় বাঙালী জাতি ও বাঙলা কৃষ্টি কালচারকে অবজ্ঞা করতেন। তরুন সভাষ চন্দ্র বসু প্রতিবাদ করেন। একে অধ্যাপক ক্ষিপ্ত হয়। যে কথা বলেছি সুভাষ চন্দ্র বসু খাঁটি জাতীয়তাবাদী-দেশ প্রেমিক তিনি এডওয়ার্ড ফলে ওটেনের গায়ে হাত তুলতে দ্বিধা করে নাই। ইংরেজ শাসনের মধ্যে ইংরেজ অধ্যাপকের গায়ে হাত তোলা ও কলেজে ধর্মঘট করার অপরাধে সুভাষ চন্দ্রকে রাসটিকেটেড এতে তার লেখা-পড়া বন্ধ থাকে। এর পর স্যার আশুতোষের চেষ্ঠায় পড়ার অনুমতি পেয়ে দশণে অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়। বি এ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ ২য় স্থান অধিকার করেন। রাজনীতি হাতে খড়ি দেশবন্ধু চিত্ত রঞ্জন দাসের দক্ষিন হস্থরূপে যোগ দেন। দেশকে ভালোবেসে মাতৃভূমির চরণে জিবন উৎসর্গ করে। এবং ১৯২১ সালে কংগ্রেসে যোগদান করার পর দেশ বন্ধুর সাথে কারারুদ্র হন। মুক্তির পর কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হয়। অল্পদিনের মধ্যে তিনি সকলের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠলেন। সুভাষ চন্দ্র বসুর উত্থান শাসক চক্রের সহ্য হলোনা। ১৯৪২ সালে ২১শে অক্টোবর ভারত রক্ষা আইনে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ জেলের পর মুক্তি পেয়ে ১৯২৮ সালে পূর্ন সামরিক পদ্ধতিতে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি ১৯২৯ -১৯৩৩ সালের এর মধ্যে বার-বার কারারুদ্ধ হয়। এবং কঠিন রোগে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। সরকার বাধ্য হয়ে মুক্তি দেয়। ভারত ত্যাগ করে চিকিৎসার জন্য ইউরোপ যেতে হবে। ইউরোপ যাত্রাকালে সুভাষ চন্দ্রের উক্তি বাংলা মরিলে কি বাঁচিবে? বাংলা বাচিলে মরে কে? ১৯৩৫ সালে সরকারের বিনা অনুমতিতে ভারতে আগমন করায় সুভাষ চন্দ্রকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৩৭ সালে পুনরায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন চিকিৎসার জন্য বিলেত গমন করেন। ১৯৩৮ সালে কংগ্রেস সভাপতিত্ব করার আহবানে সাড় দিয়ে দেশে ফিরে এল স্বদেশবাসী শ্রেষ্ঠ মুকুট পরিয়ে দিলেন।

তিনি ২য় বার প্রতিদ্ব›দ্বীতা করলেন তাহার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন কংগ্রেস নেতা ড. পটুভি। সুভাষ চন্দ্র বসু ২য় বার নির্বাচিত হলেন। ড. পটুভির পরাজয় গান্ধীজী মেনে নিতে পারে নাই। সেই সময় সাধু মানুষটির উক্তি এ পরাজয় আমার পরাজয়। শুরু হয় হিংসার রাজনীতি। মুসলিম নেতাদের কে অবজ্ঞা করতেন বলেই কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্না কংগ্রেস ছেড়ে মুসলিম লীগ গঠন করেন। যাতে মুসলমানদের দাবী দাওয়া উত্থাপিত হতে থাকে তাই মুসলমাদের আলাদা আবাস ভূমি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। গান্ধীজীর কুট চালে সুভাষ চন্দ্র বসু পদত্যাগ করেন। এত দক্ষিন পন্থিদের জয় হয়। বাকি সময় টুকুর জন্য সভাপতি নির্বাচিত হলেন গান্ধীজীর হাতের পুতুল রাজেন্দ্র প্রসাদ। সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন স্বাধীন চেতা বিপ্লবী প্রাণ পুরুষ। তিনি বাংলা ভাষাবাসী মানুষের নেতা। গান্ধিজীর ধারনা ছিল সুভাষ চন্দ্র বসু জিন্নার পথ অনুসরণ করবে। তাই এই ছোকরা টিকে সরিয়ে দিতে হবে যে কথা সে কাজ। তিনি ফরওয়ার্ড বøক গঠন করে। প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী অনেকে নতুন দলে যোগ দিলেন। এর পর হলওয়েল মনুমেন্ট আন্দোলন এই আন্দোলনকে ওরা উপহাস করলেন। বাঙালি নবাব সিরাজ উদ দৌলার কলঙ্ক হিসেবে সুভাষ চন্দ্র নিকট বাঙালী হিন্দু মুসলমান সমান। এরা এক মায়ের দুই সন্তান। সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন জন মানুষের নেতা ও সংগ্রামী এক মহান পুরুষ। গান্ধীজী -নেহেরু-বল্লাল ভাই ও আবুল কালাম আজাদ ওরা ছিল প্রসাদ রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। তাই এই দুই এর মাঝে মিল পাওয়া কঠিন। সুভাষ চন্দ্র বসু বুঝলেন ভারত বর্ষ স্বাধীনতার জন্য সব দিক থেকেই যোগ্যতা অর্জন করেছেন কেবলমাত্র অভাব একটি নিজস্ব সেনাবাহিনীর। সেনাবাহিনী ছিল বলেই জজ ওয়াশিংটন যুদ্ধ করে আমেরিকাকে জয় করেছেন।

ইতালি স্বাধীন হয়েছে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায়। পরবর্তী কালে আজাদ হিন্দু ফৌজ গঠনের মাধ্যমে যে জাতীয়তা বোধের চেতনা রচিত হয়েছিল তা বাঙালীর মধ্যে সুদুর প্রসারী প্রভাব ফেলেছিল। সুভাষ চন্দ্র বসুকে দেশের বাহিরে গিয়ে বিদেশী শক্তির সাহায্য নিয়ে পরাধীন জাতিকে মুক্ত করতে চেয়ে ছিলেন। সুভাষ চন্দ্র বসু গৃহবন্ধি অবস্থায় ১৯৪১ সালে ২৩ শে জানুয়ারী জন্মদিনে জানা গেল তিনি নিরুদ্দেশ। ইংরেজ শাসক হতভম্ব। ভারত রত্ন মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসুর মৃত্যু সংবাদ ১৮ ই আগষ্ট ১৯৪৫ সালে। তিনি হোকুতে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান সংবাদ প্রচারে সাথে সাথে বাংলা মায়ের আকাশে অন্ধকার রূপ নেয়। স্বাধীনতার উষালগ্নে বাংলার নীল আকাশে সূর্য ডুবে যায়। সুভাষ চন্দ বসু ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বেছে থাকলে ইতিহাস অন্য রূপে দাড়াতো। সেই ডুবন্ত সূর্য উকি দিয়ে ছিল ১৯৭১ সালের মুজিব নগর সরকার ও জয় বাংলা শ্লোগানের মধ্য দিয়ে। ক্ষনজন্মা মহাপুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্বে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী যিনি বাংলার এক অংশ স্বাধীন দেশ হিসাবে উপহার দিয়েছেন বাঙালী জাতিকে। সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বেছে থাকলে ভারতের মানচিত্র অন্যরূপে দেখা যেতো আমাদের স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন দিয়েছে তাদেরকে জানাই হাজার হাজার সালাম। সুভাষ চন্দ্র বসু ১৮৯৭ সালে ২৩ শে জানুয়ারী জন্ম। তার ১২৫ তম জন্ম বার্ষিকীতে জানাই লাল গোলাপ শুভেচ্ছা।

লেখক : কলাম লেখক, সমাজচিন্তক।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: