বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১০ অপরাহ্ন

শিরোনাম
চৌদ্দগ্রামে বৃষ্টির প্রার্থনায় ইসতিসকার নামাজ, প্রখর রোদে মুসল্লিদের কান্না হাতিয়ায় সৈকতে দেখা মিলল ‘ইয়েলো বেলিড সি স্নেক’ ফসলি জমি কেটে মাটির ব্যবসা: ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই লাখ টাকা জরিমানা মাটি ব্যবসায়ীর লাখ টাকা জরিমানা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদে কুমিল্লার মফিজুর রহমান বাবলু সিনেমা হলে দেখা যাবে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের গল্প দেশে পৌঁছেছেন টাইগারদের নতুন কোচ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়া : ডাব্লিউএমও নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল জাতি হিসেবে আমাদের সকল প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচন করে গেছে মুজিবনগর সরকার-ধর্মমন্ত্রী

এসডিজি বাস্তবায়নে শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই : উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ – মো. আকতারুল ইসলাম

“নিশ্চিত করি শোভন কর্মপরিবেশ, সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২৮ এপ্রিল পালিত হচ্ছে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের সাথে সংহতি প্রকাশ ও কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সম্পর্কে সমন্বিত সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৬ সাল থেকে জাতীয়ভাবে এদিবসটি পালন করা হচ্ছে।

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট-৮ “সকলের জন্য ‘স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধি ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিশুশ্রম নিরসন করা”। টেকসই উন্নয়নের জন্য টেকসই, শোভন এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি তথা নিরাপদ শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। টেকসই উন্নয়নের অগ্রযাত্রার লক্ষ্য অর্জন এবং উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নিঃসন্দেহে বলা যায় জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য যথার্থ হয়েছে।

পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলও ২৮ এপ্রিল World Day for Safety and Health at Work পালন করে আসছে। সরকার বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬’কে ২০১৩ সালে সংশোধন করে কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো যুগোপযোগী করে। সরকার ঐ বছরই কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটির গুরুত্ব, স্টেকহোল্ডারদের ভূমিকা ও দায়িত্ব স্পষ্ট করে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে কারখানা পরিদর্শন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সময়ের চাহিদায় মাত্র নয় মাসের মধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তর করা হয়। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার বিষয়ে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। কারখানার কর্মপরিবেশ, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক স্থাপন, শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শ্রমিকের অধিকার আদায়ে সর্বোপরি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎপাদন বৃদ্ধিতে কলকারখানা অধিদপ্তর অপরিহার্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কলকারখানা পরিদর্শন কার্যক্রমে গতিশীলতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি আনয়নের জন্য লেবার ইন্সপেকশন ম্যানেজমেন্ট এপ্লিকেশন-লিমা অ্যাপস চালু করা হয়েছে। টোলফ্রি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে।

আইএলও সহযোগিতায় কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তর কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নয়নে চারটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। জাতীয় উদ্যোগের অধীনে তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানাগুলোর সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে, কারখানার কর্মরত শ্রমিকদের সুরক্ষায় নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শ্রম ও পরিদর্শন ব্যবস্থাকে মোবাইল অ্যাপস এর মাধ্যমে ডিজিটালইজ করা হয়েছে, এর মাধ্যমে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটির বিষয়কে নিশ্চিত করা হচ্ছে। এসডিজির অভিষ্টকে সামনে রেখে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০২১-২০৩০) প্রকাশ করা হয়েছে। জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অনুসরণ করে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ, শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে এ কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সকল শ্রমিকের ডিজিটাল ডাটাবেইজ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ডিজিটাল ডাটাবেইজ সম্পন্ন হলে কোন খাতে কত শ্রমিক নিয়োজিত তার প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে। শ্রমিকদের সকল প্রকার সুবিধা প্রদান সহজ হবে।

গত নভেম্বর পর্যন্ত ৬২৫০টি কারখানায় সেইফটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি এবং নারী শ্রমিকদের সামাজিক মূল্যায়ন ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী সারা বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজার ৬’শ কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। শ্রম পরিদর্শকগণ মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শোভন কর্মপরিবেশের পাশাপাশি ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের আশা করছে মন্ত্রণালয়। এজন্য ঝঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ের কাজের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দিয়েছে সরকার। গার্মেন্টস শিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল। পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে আমাদের তৈরি পোশাক খাত। বিশ্বে প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণে ‘গ্রীন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ প্রবর্তন করা হয়েছে। পরিবেশগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিপালন, উদ্ভাবনী কার্যক্রম বিবেচনা করে ৬টি সেক্টরের ৩০টি শিল্প-কারখানাকে গত বছর ৮ ডিসেম্বর ‘গ্রীন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়।

শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নিশ্চিতের জন্য রাজশাহীতে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ১৯ বিঘা জমির ওপর ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজ এবছরেই শেষ হবে। এ ইন্সটিটিউটের কাজকে সহজ করতে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি-ওএসএইচ প্রোফাইল তৈরি করা হয়েছে। এই প্রোফাইল দেশের শিল্প-কারখানার প্রকৃত অবস্থা জানার প্রামাণ্য দলিল। এ প্রোফাইল দেখেই কারখানার কর্মপরিবেশ স্বাস্থ্য, নিরাপত্তার উন্নতি, অগ্রগতির চিত্র পাওয়া যাবে এবং এর প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ গ্রহণ সহজ হবে।

বিশ্বে চতুর্থশিল্প বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে। এই শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বাংলাদেশের সরকার, মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ সকলকে প্রস্তুত হতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আগামীর বিশ্বে বাংলাদেশের সমস্যা ও সম্ভাবনা মূল্যায়ন করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। একদিকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ অন্যদিকে জনমিতিক লভ্যাংশ বা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এর সুবর্ণ সময় সমাগত। দেশের শিল্প এবং শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিক এবং আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এখাতে যুক্ত হবেন সকলের জন্যই আগামী ১৫-২০ বছর খু্বই গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্থ শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং জনমিতিক লভ্যাংশের বিষয়টি মাথায় রেখেই শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দক্ষ জনবল তৈরি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে কর্মসংস্থান অধিদপ্তর গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ অধিপ্তর কী কী কাজ করবে, কীভাবে করবে, কর্মপরিধি কেমন হবে এ বিষয়গুলো পরিষ্কার করার জন্য গত ০৬ এপ্রিল মন্ত্রীসভার বৈঠকে কর্মসংস্থান নীতিমালার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করা যায়।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমমান অনুযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রে কল্যাণমূলক ব্যবস্থাসমূহ নিশ্চিত করাসহ উৎপাদনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা জরুরি। এজন্য নিরাপদ ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই। এই উদ্যোগে সরকারের পাশাপাশি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানের মালিক, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক সংগঠন, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের সম্মিলিতভাবে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং কর্মক্ষেত্রে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি অনুশীলনকে জাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং রুপকল্প-২০৪১ অনুযায়ী বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে সরকারের পাশাপাশি মালিক-শ্রমিক, অংশীজন সকলকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটিকে প্রাধান্য দিয়ে শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন সহজ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

লেখক- তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: