বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১০ অপরাহ্ন

শিবালয়ে দরিদ্র ও মৃতদের নামের চাল উত্তোলন করার অভিযোগ-তদন্ত চলছে

মানিকগঞ্জ থেকে আকাশ চৌধুরী :: শিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল আত্মসাতের একাধিক অভিযোগ উঠেছে ডিলার মনোরঞ্জন শীল নকুলের বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে ডিলারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী দেশের অতিদরিদ্রদের মাঝে কম দামে খাদ্য সামগ্রী প্রদানের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী চালু করে মাত্র দশ টাকা কেজি চাল অসহায়দের মাঝে বিতরণ করতে থাকেন। সুষ্টুভাবে চাল বিতরণের জন্য সারাদেশে ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে তালিকাভুক্তদের মাঝে দশ টাকা কেজি চাল বিতরণের জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এমন মহৎ উদ্যাগ বিতর্কিত ও নিন্দিত করছে শিবালয়ের এই ডিলার মনোরঞ্জন শীল নকুল। তার স্বেচ্চাচারিতায় বিগত পাচ/ছয় এমনকি সাত/আট বছর যাবত দরিদ্র, অসহায়রা তাদের ন্যায্য চাল পায়নি।

এসব ব্যাপারে বিগত দিনেও এই ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার গোডাউন থেকে বিপুল সংখ্যাক কার্ড উদ্ধার করে অসহায়দের মাঝে বিতরণ করে। তার পরও ডিলার নকুলের নিকট বেশ কিছু কার্ড থেকে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিগত সাত -আট বছর যাবত কার্ডধারীরের মাঝে কার্ড এবং চাল বিতরণ না করে ডিলার এসব চাল আত্মসাত করেছে বলেও অভিযোগে জানা গেছে। এসব কার্ডধারীদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন ।

কিন্তু অতি লোভী ও দুর্ত ডিলার নকুল শীল মৃত ব্যাক্তিদের নামের কার্ডের চাল তুলেও আত্মসাত করতে দ্বিধা করেননি। এভাবে সব মিলিয়ে কয়েক বছরে অসহায়-দরিদ্রদের প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকার চাল ডিলার নকুল শীল আত্মসাত করেছে বলে জানা গেছে। নকুল শীল এর আত্মসাত করা তালিকাভুক্ত কার্ডধারীদের মধ্যে মৃত ব্যাক্তিদের নামও রয়েছে। খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর তালিকাভুক্ত শতাধিক কার্ডধারী নারী – পুরুষদের কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য এবং ডিলার নকুল শীলের দুর্ব্যবহারসহ কার্ডধারীদের নিকট হতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কথা। তালিকাভুক্ত মৃত ব্যাক্তিদের আত্বীয়-স্বজনদের সাথে কথা বললে তাদের অনেকেই বলেছেন, আমার আব্বা তো দুই বছর আগেই মারা গেছেন, তাইলে সে চাল তুলে কেমনে? আবার কেউ বলেছেন, আমার মা তো সাত বছর আগেই মারা গেছে। সে প্রতি মাসে নকুল শীলের দোকানে চাল নিতো জানলে আগেই তার দোকানে বসে থাকতাম-তাইলে মাকে এক নজর দেখতে পারতাম। এমন শত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ডিলারের কোন শাস্তি হচ্ছে না ।

এই বিষয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এক লিখিত অভিযোগ হয়েছে। অভিযোগে দেখা গেছে, চর শিবালয়ের মোশারফ মোল্লা বিগত আট বছর কোন চাল পাননি। অথচ তালিকায় ২০১৩ সাল হতেই তার নাম লিপিবদ্ধ আছে। সে চাল চাইলে ডিলার তাকে গালিগালাজ করেছেন বলেও তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন ডিলার নকুল শীল তাকে তার স্ত্রী নিয়ে অশোভন কথা বলেছে।

বিষয়গুলো নিয়ে শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, কার্ডধারী ভুক্তভোগী অনেকের অভিযোগ শুনেছি এবং সব কথা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলেছেন।

শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ড সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, বহুদিন যাবত এই ডিলারের নামে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এবং তার সত্যতাও পাওয়া গেছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তবে এবার শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহিদুর রহমান কথা দিয়েছেন ব্যবস্থা নিবেন।

এসব অভিযোগ এর বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেছেন, অভিযোগ পেয়েছি এবং বিষয়টি তদন্ত করার জন্য খাদ্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত শেষ হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে । একই বিষয়ে খাদ্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেছেন, আমি এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। এদিকে অভিযোগকারীকে ডিলার নকুল শীল হুমকি দিচ্ছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে তার ক্ষতি করা হবে বলে অভিযোগকারী মোঃ মোশারফ হোসেন জানান।

দাখিলকৃত অভিযোগ এবং অভিযোগকারীকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে ডিলার মনোরঞ্জন শীল নকুল বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন । যে অভিযোগ করেছে সে ইচ্ছাকৃত ভাবেই চাল নেয়নি।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: