বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৮ অপরাহ্ন

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : তৃতীয় দিনের মতো আজ শুক্রবারও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির শ্রমিকরা তাদের পরিবার পরিজনকে সঙ্গে নিয়ে দুইদফা দাবিতে খনি গেটে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।

আন্দোলনকারি শ্রমিকদের সঙ্গে খনির অভ্যন্তরে কর্মরত পাঁচ শতাধিক শ্রমিকও সংহতি জানিয়ে অভ্যন্তরে বিক্ষোভ-সমাবেশ শুরু করায় গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) থেকে খনির ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলন কার্যক্রম পুরোপরি বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে পূর্বের মতোই এবারও গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) এক হাজার ১০০ জন শ্রমিককে পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন খনি কর্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকদেরকে ৫৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে খনি কর্তৃপক্ষকে।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক ও কর্মচারি ইউনিনের ব্যানারে দুইদফা দাবিতে আন্দোলনকারি শ্রমিকরা গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই কর্মসূচি পালন করেন খনি গেটে অবস্থান নিয়ে। মাঝে মধ্যেই শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে খনির কোল ইয়ার্ড, আবাসিক এবং প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর ইসলাম, শ্রমিক নেতা এহসানুল হক সোহাগ, এরশাদ আলী, আবু তাহের প্রমুখ।

একই সময়ে আন্দোলনরত বাইরে অবস্থানকারি শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে খনির অভ্যন্তরে থাকা (কর্মরত) শ্রমিকরাও তাদের কাজ বন্ধ করে খনির ভেতরের অংশে দুইদফা দাবির সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। খনির গেটগুলোর বাইরের অংশে আন্দোলনকারিরা আর ভেতর অংশে আন্দোলনের সমর্থনকারি শ্রমিকরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন।

এদিকে খনির অভ্যন্তরের শ্রমিকরা আন্দোলনকারিদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কাজ বন্ধ করায় গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) থেকে খনির ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর ইসলাম বলেন, পূর্ব ঘোষণানুযায়ী গত বুধবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ১১ টা থেকে খনি গেটে শ্রমিকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে দুইদফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। যা এখন অব্যাহত রয়েছে। বেকার শ্রমিকদের কাজে যোগদানসহ তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদান এই দুইদফা দাবির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কথা বলেননি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে খনি গেটে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে পবিত্র ঈদ উল ফিতরও খনি গেটেই পালন করবে শ্রমিকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে। তবে খনি কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) শ্রমিকদের মোবাইলে মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা করে পাঠিয়েছেন।

এদিকে দুইদফা দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন এখন খনির বাইরে থেকে ভেতরে চলে যাওয়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে। যা যেকোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনার রুপ দিতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছে।

ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ হওয়ার কথা স্বীকার করে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খন বলেন, চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধিনে কর্মরত বর্তমানে খনির অভ্যন্তরে অবস্থানরত পাঁচ শতাধিক শ্রমিক খনি গেটের বাইরে আন্দোলনকারিদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ভেতরে আন্দোলন শুরু করায় গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দু-চারদিন পরই ওই কোল ফেইসের কয়লা উত্তোলন এমনিতেই বন্ধ হয়ে যেতো। আন্দোলনকারিদের কারণে দুইদিন আগেই বন্ধ করতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মানবিক কারণে পবিত্র ঈদের অর্থ সহায়তা হিসেবে জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে ৫৫ লাখ টাকা গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) প্রদান করা হয়েছে।

কয়লাখনির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকাল থেকেই কয়লাখনি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: