শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩২ অপরাহ্ন

শিরোনাম
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে  প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে- সুবর্ণচর উপজেলা আ.লীগ হাতিয়ার উন্নয়নে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচিকে কাজে লাগানো হবে – মোহাম্মদ আলী এমপি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ৩৯ বছর পর জমি ফিরে পেলেন যদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার শিবালয়ে ১৫তম  মাই টিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত  ক্রীড়াবিদরা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে- ধর্মমন্ত্রী উজিরপুরে সৎসঙ্গ ফাউন্ডেশনের সেমিনার অনুষ্ঠিত শিবালয়ে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিবাড়ি খেলা অনুষ্ঠিত লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে ৫ জনের মৃত্যু : আসামিদের তিন দিনের রিমান্ড ঈদের দিনে সদরঘাটে দুর্ঘটনায় ঝরল ৫ প্রাণ সৌদির সাথে মিল রেখে নোয়াখালীর ৪ গ্রামে ঈদ উদযাপন

অভিবাসী আসলেই কমছে?

যুগ যুগ ধরেই জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গ্রাম থেকে মানুষ নগরে পাড়ি জমায়। মূলত চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্যের কারণে দেশের অভ্যন্তরে যেমন এ অভিবাসন ঘটে, ঠিক তেমনই দেশের বাইরেও ‘উন্নত জীবনের’ সন্ধানে পাড়ি জমান অনেকে। তবে গবেষণা বলছে, নগরের সুবিধা গ্রামে বসে পাওয়া গেলে স্বাভাবিকভাবেই অভিবাসনের হার কমে যায়। গত ৯ বছরে দেশে শহরের তুলনায় গ্রাম থেকে অভিবাসন কমেছে বলে সরকারের এক জরিপে উঠে এসেছে। অর্থনীতিবিদ ও অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন যারা তারা বলছেন— জরিপে কম আসার যৌক্তিক কারণ আছে। তবে গ্রাম ও শহরের কারণ ভিন্ন। তারা এও বলছেন, ইতোমধ্যে আবারও বাড়তে শুরু করেছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা ‘আয়-ব্যয়ের জরিপ ২০২২’ এর তথ্য বলছে, ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ পরিবার দেশের মধ্যেই (এক জেলা থেকে অন্য জেলা) বা বিদেশে অভিবাসনের কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত গত ১২ বছরে তিনটি খানা জরিপের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, গত ১২ বছরে শহর ও গ্রাম উভয় থেকেই অভিবাসনের মাত্রা কমেছে। ২০১০ সালে শহরের অভিবাসনের হার ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, আর গ্রামের ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০২২ সালে এসে সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে শহরে ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ ও গ্রামে ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। প্রায় দুই শতাংশ কম।

দেশের ভেতরে ও বাইরে অভিবাসন চিত্র

দেশের ভেতরে ও বাইরে অভিবাসন চিত্র

সাধারণত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব বলছে, অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সরকারি হিসেবে কেন কমছে বলা হলো, জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘এই কমে যাওয়াটা প্রচলিত ধারণার সঙ্গে মেলে না। কিন্তু অনেক কিছুই প্রচলিত ধারণার সঙ্গে নাও মিলতে পারে। কম কিনা সেই ব্যাখ্যা একটা পাওয়া যায়— যখন কিনা আমরা নগরায়ণের গতি কমতে দেখি। সেটা আমরা জনসংখ্যা জরিপ থেকেও বুঝতে পারি। ২০০১ সালে নগরায়ণের পরিমাণ ছিল ২৩ শতাংশ, ২০১১ সালে সেটা বেড়ে ২৮ হলেও ২০২২ সালে এসে সেই বাড়তির হার নিম্নগামী। অর্থাৎ ২০০১ থেকে ২০১১ এর মধ্যে ৫ শতাংশ বাড়লেও ২২ সাল পর্যন্ত তা মাত্র ৩ শতাংশ বেড়েছে। ফলে স্পষ্টতই নগরায়ণের গতি কমেছে। আর নগরায়ণের গতি কমাটা এক শহর থেকে আরেক শহরে অভিবাসন কমার কারণ হতে পারে।’

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার প্রকাশিত ‘বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২২’ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)। সেই তথ্য অনুসারে, অভিবাসন প্রবণতা বেড়েছে। এই প্রতিবেদন অনুসারে, আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা ১৯৭০ সালে বিশ্বব্যাপী ৮৪ মিলিয়ন থেকে ২০২০ সালে ২৮১ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা দুই মিলিয়নের মতো কম ছিল। প্রতিবেদন বলছে, ‘২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন কর্মী কাজের উদ্দেশে বিদেশে গেছেন। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত গেছেন ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন। ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছর অভিবাসন প্রবাহ বাড়বে ৮১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।’

রিফিউজি ও মাইগ্রেশন মুভমেন্টস রিসার্স ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, কোভিডের পর গত দুই বছরে দেশের বাইরের অভিবাসন বাড়ছে এবং সেটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। জরিপের পদ্ধতি বিষয়ে বিস্তারিত জানা গেলে আরেকটু স্পষ্ট হবে যে, আসলে কিসের ভিত্তিতে তাদের কাছে এমন তথ্য এলো যে, অভিবাসন কমছে। তবে একটা ধারণা করা যেতে পারে যে, যেহেতু পুরো বাংলাদেশের সব এলাকায় অভিবাসন সমান ঘটে না। যেহেতু বাংলাদেশে মূলত কয়েকটা এলাকায় এর হার বেশি। ফলে এর বাইরের জায়গা জরিপের আওতাধীন হলে সংখ্যা কম পাওয়াটা  স্বাভাবিক। আর দেশের মধ্যে জেলা থেকে জেলায় যে অভিবাসন, সেক্ষেত্রে ঢাকার বৃদ্ধির দিকে খেয়াল করলেই বুঝা যায় যে, অভিবাসন আসলে কমছে না।’

বাংলাদেশের অভিবাসন চিত্র নিয়ে বলতে গিয়ে ব্র্যাকের হেড অব মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম শরিফুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের অভিবাসনের চিত্রটা হচ্ছে— যারা বিদেশে কাজ করতে যায়, তাদের বড় অংশ যায় গ্রাম থেকে। শহরে যে অভিবাসন হয়, গ্রাম থেকে নানা কাজ নিয়ে শহরে আসে। অর্থ পাঠানোর কথা যদি বলি— বিদেশ থেকে টাকা গ্রামে যায়, আবার ঢাকা শহর বা বড় শহর থেকেও টাকা গ্রামেই যায়। অর্থাৎ গ্রামের অভিবাসন সবসময় বেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোভিডের সময়ে অভিবাসন কিছুটা কমলেও গতবছর আমাদের আন্তর্জাতিক অভিবাসন ১১ লাখ। গত ১৫ বছরে ৭০ লাখ লোক বিদেশে কেবল শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গেছে। অন্য অভিবাসনের কথা বাদই দিলাম। যারা কাজে যায় বড় অংশ যায় গ্রামের জনগোষ্ঠী। এই সংখ্যা শহরের থেকে অভিবাসীর তুলনায় বেশি।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: