মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন

শিরোনাম
চাটখিলে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে অব্যাহতি দেয়ায় আনন্দ মিছিল  চৌদ্দগ্রামে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে গৃহবধূর মৃত্যু ট্রেনে পায়ের আঙুল কাটা পড়েছে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের ঈদে ১৪ টি মিউজিক ভিডিও মুক্তি পেয়েছে প্রিন্স খানের চাটখিলে পৈত্রিক সম্পত্তি জবরদখলে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তপ্তদেহ শীতল করতো গাছের নিচে বসেই, গাছ না থাকায় এত গরম সরকার হজযাত্রীদের সর্বোত্তম সেবা দিতে বদ্ধপরিকর-ধর্মমন্ত্রী দেশের স্বার্থ বিরোধী কাজের সাথে যারাই জড়িত, তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী – আনু মুহাম্মদ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে  প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে- সুবর্ণচর উপজেলা আ.লীগ হাতিয়ার উন্নয়নে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচিকে কাজে লাগানো হবে – মোহাম্মদ আলী এমপি

শর্ত সাপেক্ষে চলছে বাবুরহাটে বেচাকিনা

মোঃ রাসেল মিয়া, নরসিংদী প্রতিনিধি : শর্ত সাপেক্ষে খুলে দেয়া বাবুরহাটের ১০ দিনের আজ শেষ দিন। তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে হাট খুলে দেয়ার আবেদন করেছিল ব্যবসায়ী মহল, তাদের সেই কাক্ষিত প্রত্যাশা পুরন হয়নি বলে দাবী ব্যবসায়ীদের।

করোনা প্রাদুর্ভাব রোধে সারাদেশে লগডাউন অব্যাহত থাকায় দেশের প্রায় সকল শিল্প-কারখানা, হাটবাজারই বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতে প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত নরসিংদীর শেখেরচরে অবস্থিত উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় পাইকারী কাপড়ের বাজার বাবুরহাটও বন্ধ ছিল। বাবুরহাটকে ঘিরে এ অঞ্চলে গড়ে উঠা শিল্প কারখানাগুলোও বন্ধ। শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের শ্রমিকরা হয়ে পড়ে কর্মহীন। ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধে দুশ্চিতায় পড়ে যায় শিল্পমালিক । অপ্রত্যাশীত এ দুর্যোগ মোকাবেলা করতে বাবুরহাট বণিক সমিতি ও নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি হাট খুলে দেয়ার জন্য নরসিংদী জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে শর্ত সাপেক্ষে হাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত দেন জেলা প্রশাসক।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ এপ্রিল থেকে খুলে দেয়া হয় এবং তা আজ ৫ মে পর্যন্ত চালু থাকার কথা। শর্তে উল্লেখ করা ছিল, বাবুর হাটে কোন ক্রেতা সমাগম হবেনা। স্বল্পপরিসরে দোকান খোলা রেখে মোবাইল ফোন বা অনলাইনে শুধুমাত্র পাইকারী ক্রেতাদের অর্ডারের ভিত্তিতে মালামাল পরিবহনের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হবে গন্তব্যে। হাটকে মনিটরিং করার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছে।

সোমবার বাবুরহাট বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের মত নেই কোন ক্রেতার ভিড়, নেই কুলির হাকডাক। হাটের অধিকাংশ দোকান খোলা থাকলেও বেঁচাকেনা খুব একটা চোখে পড়েনি। এ অবস্থায় অনেক দোকানদারকে দোকানে বসেই অবসর সময় কাটাতে দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে বিভিন্ন অলিগলিতে বসা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যারা পাইকারি ব্যবসা করছেন তাদের অনলাইন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো অনলাইন প্রক্রিয়া চালু না করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। লাভবান হচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

ডিআরপি টেক্সটাইলের পরিচালক শুভ্র সাহা জানান, বাজার খুলে দেয়া হলেও এ বছর নতুন নতুন কোন ক্রেতা নেই। ফলে আমাদের নগদ বিক্রিটা নেই বললেই চলে। ব্যাংক লেনদেন কিংবা বাকিতে আমাদের নির্দিষ্ট কিছু ক্রেতার কাছেই পন্য বিক্রি করতে পারছি। অধিকাংশ বকেয়ার টাকা কবে পাব তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই পরিস্থিতিতে সরকার কাপড় ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে ব্যাংক ঋণের সুদ, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল মওকুফ করলে আমরা টিকে থাকতে পারবো।

ঈগল টেক্সটাইলের মালিক এনামুল হক মনির বলেন, ‘লগডাউনের ফলে সারাদেশ অচল হয়ে আছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে। ঈদের আগে সেগুলো খুলতে পারবে কিনা তারও কোন নিশ্চিয়তা নেই। এ পরিস্থিতিতে অনেক দোকানীই আমাদেরকে অর্ডার দিচ্ছেনা। তাই যেমনটা আশা করেছিলাম তার অনেকটাই পূরণ হয়নি।’

আমানত শাহ লুঙ্গি ও ফেব্রিক্স এর শো-রুমের ম্যানেজার মো: ফিরোজ মিয়া জানান, লকডাউনের ফলে সারা দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে তারা আশানুরোপ অর্ডার পাচ্ছে না। আবার ক্রেতার অর্ডারের ভিত্তিতে মাল পাঠালেও রাস্তায় পুলিশের ব্যারিকেটের ফলে কিছু কিছু এলাকা থেকে মাল ফেরত নিয়ে আসে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে করে ১০ দিনের কর্মসূচির কোন সুফলতা আসেনি। গত বছরের এ সময়টিতে আমাদের যে পরিমান বিক্রি হয়েছিল, এবার তার দুই ভাগও বিক্রি হয়নি।

সামনে ঈদ শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও বোনাস কিভাবে পরিশোধ করতে পারবে সেটাই ভাববার বিষয়।
বাবুরহাটের ফুটপাতে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো: শাহরিয়ার বলেন, “হাট খুলেছে দেইখ্যাই দোকন খুইল্যা বইছি। কিন্তু ইকটু পরপর পুলিশ ও বাজার কমিটির হেরা আইয়্যা দোকান বন্দ কইর্যা দিতে কয়। দোকান যদি বন্দ কইর‌্যা দেই তবে খামু কি। আমাগোও তো পেট আছে, বউ পুলাপাইন আছে”।

 

নরসিংদী চেম্বার্স অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশির বলেন, লকডাউনের ফলে স্থবির হয়ে পড়া দেশের সবচেয়ে বড় কাপড়ের পাইকারী বাজার বাবুরহাট গত ২৬ এপ্রিল জেলা প্রশাসনে অনুমতিক্রমে শর্ত সাপেক্ষে খুলে দেয়ার ফলে বাজারে ব্যবসায়ীদের মাঝে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে। প্রতিবছর রোজার ঈদকে উপলক্ষ করে একমাসে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়, সারাদেশে লকডাউন অব্যাহত থাকাকালীন সময়ে এ বাজারেও প্রায় ২ শ কোটি টাকা লেনদেন হবে বলে আমি আশা করছি।

তিনি আরো জানান, সাধারণ ছুটি ১৫ মে পর্যন্ত বর্ধিত করায় একই পদ্ধতিতে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ক্রমে বাবুরহাটের বেচকেনা ১৫ মে পর্যন্ত চলবে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: