বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন
নিউজ ডেস্ক : বন্যার দুর্যোগের দিনে বন্যার্ত মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসের মহামারি আর বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যার মধ্যে এসেছে এবারের কোরবানির ঈদ। অসহায় মানুষ যাতে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
শনিবার ঈদুল আজহার সকালে বঙ্গভবন থেকে এক ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রপতি এই আহ্বান জানান। বঙ্গভবনের দরবার হলে ঈদের নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ টেলিভিশিনের (বিটিভি) মাধ্যমে এই বার্তা দেন।
প্রতি ঈদে জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি ঈদের নামাজ আদায় করেন। তবে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রোজার ঈদের মত এবারও খোলা জায়গায় জামাতের আয়োজন ছিল না। সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে পরিবারের সদস্য এবং গুরুত্বপূর্ণ পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে ঈদের নামাজ পড়েন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রতি ঈদে বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও এবার ঈদে বঙ্গভবনের এই আনুষ্ঠানিকতাও বাদ দেওয়া হয়।
ভিডিও বার্তায় সবাইকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ঈদ মুসলমানদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ বড় ধর্মীয় উৎসব। প্রতিটি মুসলমান এই দিনটির জন্য বছরব্যাপী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। ঈদে সে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড় নির্বিশেষে সবার মাঝে। আনন্দ আর উৎসবের বার্তার পাশাপাশি ঈদ ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে বাস্তবায়নযোগ্য অনেক শিক্ষণীয় বার্তাও নিয়ে আসে। কোরবানি ত্যাগ ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়।
তিনি বলেন, আল্লাহর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা ও ত্যাগের আদর্শ আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলিত হলেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে সহমর্মিতা। কোরবানির আদর্শ ও মর্মার্থ অনুধাবন করে সমাজে শান্তি, সৌহার্দ্য ও কল্যাণের পথ রচনা করতে আমাদের সংযম ও ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতায় উজ্জীবিত হতে হবে। ত্যাগের মনোভাবকে প্রসারিত করতে হবে আমাদের কর্মে ও চিন্তায়।
আবদুল হামিদ বলেন, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় বানবাসী অনেক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। সরকার বানবাসী এসব মানুষের জন্য খাদ্য ও নগদ আর্থিক সহায়তাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
ঈদের আনন্দকে নিজের ও পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে বিত্তবান ও সামর্থ্যবান সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বন্যার্ত মানুষরাও যাতে ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে সে ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে কাজ করতে হবে।
পশু কোরবানির সময় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির লাভের আশায় সামর্থ্যবান সকলেই কোরবানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু কোরবানি করতে গিয়ে আমরা যেন পরিবেশ ও প্রতিবেশীদের সমস্যার কারণ না হয়ে উঠি সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমি আশা করব, আপনারা সরকার নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করবেন এবং কোরবানির বর্জ্য অপসারণসহ প্রতিটি কার্যক্রম করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্পন্ন করবেন।’
মহামারির এই সময়ে সবাইকে সচেতন থাকার পাশাপশি জীবনযাপনে ও চলাফেরায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপ্রধান।
সমাজ থেকে কুসংষ্কার দূর করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ধর্ম মানুষকে কল্যাণ ও আলোর পথ দেখায়। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা ও আচার-আচরণ সমাজে আলোকিত মানুষ তৈরি করে। সমাজ থেকে অন্ধকার ও কুসংস্কার দূর করে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মাঝে গড়ে তোলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য বন্ধন। তাই আসুন কোরবানির শিক্ষা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করি।