শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৬ অপরাহ্ন

বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নিয়োগ পরীক্ষায় স্ত্রী, সার্বিক তত্ত্বাবধান কমিটিতে স্বামী

ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ যেন পিছু ছাড়ছে না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)। এর আগে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে খোদ উপাচার্যের বিরুদ্ধে। এবার বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার নিয়োগ পরীক্ষার কমিটিতেও নিকটাত্মীয় থাকার অভিযোগ উঠেছে।

পরীক্ষার সার্বিক তত্ত্বাবধান কমিটিতে ছিলেন হাসপাতালের এক মেডিকেল অফিসার। তার নাম ডা. শাহ নিজাম উদ্দিন শাওন। নিয়োগ পরীক্ষায় তার স্ত্রী পরীক্ষার্থী হলেও কমিটিতে ছিলেন তিনি। অথচ বিএসএমএমইউয়ের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো নিকটাত্মীয় পরীক্ষার্থী হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপক, শিক্ষক অথবা কর্মকর্তা ওই পরীক্ষার কোনো দায়িত্বে থাকতে পারবেন না।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, সর্বশেষ গত শুক্রবার (২০ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত মেডিকেল অফিসার নিয়োগ পরীক্ষায় স্ত্রী পরীক্ষার্থী থাকলেও কমিটিতে ছিলেন ডা. শাহ নিজাম উদ্দিন শাওন। বিএসএমইউয়ের গত ৭ অক্টোবর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, পরীক্ষা সার্বিক তত্ত্বাবধানে কমিটির ১১ নম্বর সদস্য হলেন ডা. শাহ নিজাম উদ্দিন শাওন। স্মারক নম্বর বিএসএসএমএমইউ/২০২৩/১২৯৯৬।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো আপন মানুষ পরীক্ষার্থী হলে আগেই ঘোষণা দিতে হয় এবং পরীক্ষার সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হয় কিন্তু এখানে সে নিয়ম মানা হয় না। প্রতিবছর পরীক্ষার সময় এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

নিয়োগ পরীক্ষায় স্ত্রী, সার্বিক তত্ত্বাবধান কমিটিতে স্বামী

স্ত্রী পরীক্ষার্থী হওয়ার পরও কমিটিতে কেন ছিলেন- জানতে চাইলে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহ নিজাম উদ্দিন শাওন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরীক্ষা কমিটিতে আমাদের থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমি একজন মেডিকেল অফিসার। সে কারণে হাসপাতালের প্রশাসনিক কিছু কাজ করি। প্রশ্নপত্রের সঙ্গে আমার কোনো সংযোগ নেই। আর আজ রেজাল্ট প্রকাশ হয়েছে। এখানে আমার স্ত্রী কিন্তু টিকতে পারেনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, পরীক্ষার সার্বিক তত্ত্বাবধান কমিটির দায়িত্বে ছিলেন ডা. শাহ নিজাম উদ্দিন শাওন। তবে তার কোনো দায়িত্ব ছিল না। যেখানে প্রশ্ন হয় সেখানে মোবাইল নিয়েও যেতে পারে না। কারণ দূর থেকে সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং হয়। আগে আমাদের নিয়মে একটু গলদ ছিল। এবার আমরা যে পরীক্ষা নিয়েছি তাতে শতভাগ স্বচ্ছতা ছিল।

এর আগেও এ নিয়ম একাধিকবার ভাঙার অভিযোগ আছে। বিএসএমএমইউয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ নিজেও এ নিয়ম মানেননি। অধ্যাপক শারফুদ্দিনের ছোট ছেলে তানভীর আহমেদ ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত স্নাতকোত্তর (এমডি/এমএস) কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা যায়, ওই পরীক্ষার সার্বিক তত্ত্বাবধান কমিটির প্রধান ছিলেন উপাচার্য নিজেই।

এমন অভিযোগ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ইফতেখার আলমের বিরুদ্ধেও। বিএসএমএমইউ সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং ২০১৩ সালে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিয়োগ পান ইফতেখার আলম। ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত রেসিডেন্সি কোর্স ইএনটি পরীক্ষায় তার মেয়ে জামাই বি এম নাসিম করিম সিদ্দিক পরীক্ষা দিলেও তিনি তা গোপন করেন।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: