শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন

গ্যাসের আগুনে একই পরিবারের ৮ জন দগ্ধ

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড সাহেবপাড়ায় গ্যাস থেকে লাগা আগুনে একই পরিবারের ৮ জন দগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে নুরজাহান বেগম (৭৫) নামে এক বৃদ্ধা হাসপাতালে মারা গেছেন। বাকি ৭ জনের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে।

তারা হলেন- কীরণ মিয়া (৫০), হীরণ, (২৮) মুক্তা (২১), ইমন (২২), আপন (১০), ইলমা (৩) ও কাওছার (১৬)। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাতজনের অবস্থাই সংকটাপন্ন।

স্থানীয়রা জানান, সাহেবপাড়া এলাকায় বেশিরভাগ সময় গ্যাস থাকে না। তাই অনেকেই গ্যাস আসছে কি না তা জানার জন্য চুলা খোলা রাখেন। গভীর রাতে যখন গ্যাস আসে তখন গৃহিণীরা ঘুম ঘুম চোখে উঠে রান্না সারেন।

সাহেবপাড়া বাজার সংলগ্ন বিদ্যুৎ কর্মকর্তা ফারুকের মালিকানাধীন বহুতল ভবনের নিচতলার ভাড়াটিয়া কীরণ মিয়ার বাসায়ও রোববার রাতে গ্যাসের চুলা খোলা ছিল। এতে বাড়ির ভেতরে গ্যাস জমে তিন রুমের পুরো বাসাটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়।

ভোরে কীরণের মা নুরজাহান বেগম পানি গরম করার জন্য চুলায় আগুন ধরাতে গেলে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর গোটা বাসায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার পর পরিবারের সবাই বাইরে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন।

কিন্তু নুরজাহান বেগম ভেতরে আটকা পড়ায় তাকে বাঁচাতে আবার তারা বাসায় প্রবেশ করেন। এরপরই তারা আটকা পড়েন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভান ও বাসার গ্রিল কেটে তাদের উদ্ধার করেন।

এরপর দগ্ধদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ১১টায় মারা যান নুরজাহান বেগম। তার শরীরের শতভাগ পুড়ে গিয়েছিল।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দগ্ধ ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ না করা গেলে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে না।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব সবাইকে সুস্থ করার জন্য। সবার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। তাই শঙ্কার ব্যাপার রয়েছে। দগ্ধদের উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস থেকে ছাড়িয়ে পড়া আগুনে বাসার সব ধরনের মালামাল পুড়ে গেছে। বিস্ফোরণের কারণে জানালার গ্লাস ও দেয়ালের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। দগ্ধদের স্বজন নাছির উদ্দিন জানান, প্রায়ই গ্যাস না থাকায় রাতে চুলা চালু রেখে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন।

পরদিন ভোরে রান্না করতে নুরজাহান বেগম চুলায় আগুন জ্বালাতে গেলে পুরো ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এসে বারান্দার গ্রিল ভেঙে সবাইকে উদ্ধার করেন। পরে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়।

আদমজী ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, ফারুক মিয়ার পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় রান্নাঘরের চুলা থেকে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে গোটা বাসায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, রান্নার চুলা বন্ধ না করে ওই পরিবারের লোকজন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ফলে চুলা থেকে গ্যাস বের হয়ে ঘরের ভেতর জমে থাকে। ভোরে রান্নাঘরে চুলায় আগুন ধরাতে গেলে জমে থাকা গ্যাসের বিস্ফোরণ হয়।

জানা যায়, কীরণ মিয়া গার্মেন্ট এক্সেসরিজের ব্যবসা করেন। ১০ সদস্যের এ পরিবারে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেবল তার স্ত্রী লিপি ও দেড় বছরের মেয়ে ইকরামণি অক্ষত রয়েছে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: