শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন

গবীব মানুষদের দেহার কেহ নাই

আনোয়ার হোসেন রাজবাড়ী থেকে : নিস্তব্ধ চারপাশ। লোকজন নেই বললেই চলে। শুধু লোকজন ই নয়, নেই প্রতিদিনের মতো রাস্তায় চলাচল করা কোন গাড়ির শব্দও। গত ১৪ এপ্রিল সারা দেশে মহামারী করোনা’র জন্য এক সপ্তাহ ব্যাপি দেয়া হয়েছে লকডাউন। আর এইজন্য ঘোষণা করা হয়েছে সরকার কর্তৃক নানা বিধিনিষেধ।

যেসকল বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে চলছে দেশ। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি বিধিনিষেধ সচল থাকলেও অনেক বিধিনিষেধ ই মানছে না দেশে বসবাসরত হতদরিদ্র শ্রেণির কিছু মানুষ। যারা দিন এনে দিন খায়। এমন হতদরিদ্র ও দিন মুজুর মানুষের কাছে লকডাউন কেবল নিছক এক অদৃশ্য বাধার বেড়াজালমাত্র। তাই সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ অমান্য করে অনেকেই নেমেছেন রাস্তায়, করছেন জীবিকার সন্ধান। তবুও হচ্ছেনা তেমন আশানুরূপ কোন আয়।লোকজন নেই। দোকানপাট বন্ধ। বাজারঘাটে হচ্ছে না তেমন বেচাকেনা। লোকজন ঘর থেকে বের হচ্ছে না।যে বা যারা ঘর থেকে বের হচ্ছে তারা নিজের কোন গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছে।

সাধারণত গ্রামের লোকজন যারা বের হবে কিছু করার জন্য তারাও এখন নানা উতকন্ঠা আর ভয়ের মধ্যে আছে। কখন না জানি প্রশাসনের লোক এসে ধরে নিয়ে যায় বা যে কোন অংকের টাকা জরিমানা করে। করোনাকালীন দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি কস্টে ভুগছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো।

আজ সরেজমিনে গিয়ে মুখে হাত দিয়ে খালি রিক্সা নিয়ে রাস্তার পাশে বসে থাকা এক রিক্সাওয়ালার কাছ থেকে জানা যায় কেমন কাটছে তার করোনাকালিন সময়। নাম সোহরাব আলী। বয়স প্রায় পায়তাল্লিশের উপরে। দুই মেয়ে আর এক ছেলেসহ চার সদস্যের সংসার তার। বড় মেয়ে পড়ে ক্লাস টেনে আর ছোট মেয়ে ক্লাস নাইনে আর সবার ছোট ছেলে ক্লাস টু তে পড়ছে। করোনার এমন দুসময়ে কেমন চলছে তার সংসার জানতে চাইলে দৈনিক বাঙলার জাগরণ কে দেয়া প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন মতে চালাইতাছি সংসার।

দিনে আয় কেমন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাত্র ১০০/১২০ টাহা কামাই করি। এতে কিচ্ছু ই অয় না। তারপরে আবার একহাজার পঞ্চাশ টাহার কিস্তি আছে। বড় মাইয়ার পেরাইবেট খরচ আটশ টাহা ছোট মাইয়াডার পাসশো। এতো টাহা ক্যামনে যোগার করি হেই চিন্তায় এহন দিন গুনতাছি। সরকার যদি এই রহম লকডাউন দেয় তাইলে আর কদিন পর আমরা ব্যাবাক লোক না খাইয়া মরুম।

সাংবাদিকের সাক্ষাৎকার নেয়া দেখে তরিঘরি করে কিছু একটা বলার জন্য ছুটে এলো আরও এক অটোড্রাইভার। মুখে দুখের ছায়া আর বেশ রাগের ক্ষোভ আর নানা অভিযোগের আক্ষেপ নিয়ে বলেই ফেললো সাংবাদিক ভাই আমি কিছু বলতে চাই। আমারে কি একটু সুযোগ দেয়ন যায়।যার কথা বলছি তিনি হলেন। সালাম খা। বয়স চল্লিশের দোর গোড়ায়।বাড়ি গোয়ালন্দ উপজেলার পৌর ৪নং ওয়ার্ড কুমড়াকান্দি গ্রামে। পেশায় একজন অটোবাইক ড্রাইভার। তার দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার। বড় ছেলে ক্লাস সেভেনে আর ছোট ছেলে পড়ে ক্লাস টু’ তে।

অস্থিরতা শরীরে বাধ না মানা ভাব প্রকাশের মুখের ছাপ দেখে বুঝাই যাচ্ছে বেগতিক কিছু বলবে সুযোগ দিলাম। কিছু বলবেন, বলতে না বলতেই লোকটি হাউমাউ করে কেদে বলে উঠলো, ভাই ভাড়া করা অটোবাইক চালাই। সারাদিন দুই থেকে আড়াইশ টাকার মতো কামাই করি। যেহানে মালিকের দেয়ন লাগে দুইশ টাহা আর নিজের থাহে একশ থাইকা দেড়শ টাহা। এই টাহা দিয়া ক্যামনে চলি বলেন। সরকার তো সারাদ্যাশ লোকডাউন দিয়া দিছে কিন্তু আমাগো প্যাটের খুদা মিটানোর জন্য কোন কামাইয়ের ব্যবস্থা কইরা দিলো না ক্যান। এহন পুলামাইয়া নিয়া প্রায় না খাইয়াই দিন কাটাইতে হইতেছে।

আপনি সরকারের কাছে কন আমাগো মত গরিব মানষের জন্য যেন কিছু করে। এভাবে সাক্ষাৎকার নিতে না নিতেই জোড় হয় আরও কয়েকজন। সবার ই একই কথা সারা দেশে এইরকম লোকডাউন থাকলে দেশের হগগোল গরিব মানুষ না খাইয়া মরবো।করোনার কথা বললে তাতক্ষনিক ষাট ঊর্ধ্ব বয়সের এক রিক্সাওয়ালা বলেন,” বাজান কামাই না করতে পারলে, পোলা মাইয়াগো খাওন দিতে না পারলে করোনায় মারা যাওয়াই ভালো।

এক কথায় বলা যায় লকডাউন শিথিল করলে তারা হয়তো সারাদিন গাড়ি চালিয়ে সংসার চালানোর মতো আয় করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারতো। এখন সবার ই আশা কবে যাবে এই মহামারী করোনা আর কবেই বা নতুনভাবে তারা বাচতে শিখবে এই আশায় দিন গুনছে রিক্সাওয়ালা অটোওয়ালাসহ দিনমজুর হতদরিদ্র মানুষগুলো।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: