মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ারদর আরো বাড়লেও মিলবে মার্জিন ঋণ

নিউজ ডেস্ক :: ঋণ করে যারা শেয়ারের ব্যবসা করেন, তাদের দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

কমিশন নতুন এক আদেশে বলেছে, প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৮ হাজার পয়েন্ট পর্যন্ত ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের বর্তমানের ন্যায় ১:০.৮০ বা ৮০ শতাংশ হারে মার্জিন ঋণ দিতে পারবে। তবে সূচক ৮ হাজার পয়েন্ট পার হলে মার্জিন ঋণের হার কমে ৫০ শতাংশে নামবে।

গত ১২ আগস্ট এ বিষয়ে আদেশ জারি করে বিএসইসি। যদিও শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় আগে তা প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।

গত বৃহস্পতিবার লেনদেনে শেষে ডিএসইএক্স সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৬৯৯ পয়েন্টে।

মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত ১২ আগস্টের আদেশটি এর আগের গত ৪ এপ্রিলের এ সংক্রান্ত জারি করা আদেশের পরিবর্তে জারি করা হয়েছে।

৪ এপ্রিলের আদেশে বলা হয়েছিল, ডিএসইএক্স সূচকটি ৭ হাজার পয়েন্ট পর্যন্ত থাকলে ৮০ শতাংশ হারে অর্থাৎ গ্রাহক তার নিজের ১০০ টাকার বিপরীতে আরো ৮০ টাকা মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনতে পারবেন।

ডিএসইএক্স সূচক সর্বশেষ ৬ হাজার ৬৯৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ বর্তমানের তুলনায় সূচক আরো প্রায় ১ হাজার ৩০০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পর্যন্ত শেয়ার ব্যবসায়ীদের দুঃশ্চিন্তার দরকার নেই।

বর্তমানের তুলনায় শেয়ারবাজার আরো বাড়লেও মার্জিন ঋণে আগ্রহী গ্রাহকরা বর্তমান হারে ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনতে পারবেন। মার্জিন ঋণ নিয়ে কমিশনের এ সিদ্ধান্ত বিশ্বের প্রচলিত সব শেয়ারবাজার, এমনকি কমিশনের নিজের নীতিরও পরিপন্থী।

সার্বিকভাবে শেয়ারদর বাড়তে থাকলে মার্জিন ঋণের হার কমবে এবং শেয়ারদর কমতে থাকলে মার্জিন ঋণের হার বাড়বে- এমন নীতির আলোকে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন মার্জিন ঋণ প্রদানের নীতিমালা করেছিল।

গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বরের আদেশে বলা হয়েছিল, শেয়ারবাজার সূচক যখন ৪ হাজার পয়েন্টের নিচে থাকবে, তখন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ১০০ টাকার বিপরীতে ১০০ টাকা পর্যন্ত মার্জিন ঋণ দিতে পারবে। অর্থাৎ শেয়ার ব্যবসায়ী তার নিজের টাকার দ্বিগুণ অঙ্কের টাকার শেয়ার কিনতে পারবেন। কিন্তু সূচক ৪ হাজার পয়েন্ট পার করলেই অর্থাৎ সার্বিক শেয়ারদর বেড়ে গেলেই মার্জিন ঋণের হার কমে যাবে। সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ হারে অর্থাৎ গ্রাহক তার ১০০ টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৭৫ টাকা ঋণ নিয়ে মোট ১৭৫ টাকার শেয়ার কিনতে পারবেন। সার্বিক শেয়ারদর আরো বাড়লে অর্থাৎ সূচক ৫০০০ পয়েন্ট পার হলে মার্জিন ঋণের হার কমে ৫০ শতাংশে এবং ৬০০০ পয়েন্ট পার হলে মাত্র ২৫ শতাংশে নেমে যাবে।

বর্তমান কমিশন মার্জিন ঋণ বিষয়ে আদেশ জারি করেছিল, তখন ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫ হাজার পয়েন্টে। ওই অবস্থানের তুলনায় ১ হাজার ৭০০ পয়েন্ট বা ৩৪ শতাংশ বেড়ে বর্তমানে সূচকটি ৬ হাজার ৭০০ পয়েন্ট ছুঁইছুঁই অবস্থানে।

সূচক ১ হাজার ৭০০ পয়েন্ট বৃদ্ধির মাঝে অনেক শেয়ারের বাজারদর ২ থেকে ১০ গুণ হয়েছে।

এখন থেকে ১০ মাস আগের মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত নীতি বহাল থাকলে বর্তমানের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগেরও কম মার্জিন ঋণ পেতেন শেয়ার ব্যবসায়ীরা।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, শেয়ারদরের ঊর্ধ্বগতিকে সহায়তা করতে কমিশন মার্জিন ঋণের নীতিতে পরিবর্তন আনল বিএসইসি।

এর আগে গত এপ্রিলে শেয়ারদর বাড়তে বাড়তে সূচক বার বার ৬০০০ পয়েন্টে মুখে গিয়ে থেমে গেলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত সেপ্টেম্বরের আদেশ পুরো আদেশটিই স্থগিত করে দিয়েছিল। বহু ধাপের পরিবর্তে মাত্র একটি ধাপে সূচকের ওঠানামায় মার্জিন ঋণের হার বেঁধে দেয় এ সংস্থা।

আবার শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের অনেকে মনে করেন, বিএসইসি মার্জিন ঋণ বিষয়ে আদেশটি জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সকল ব্যাংকের শেয়ারবাজার কার্যক্রম গভীরভাবে নজরদারিতে আনতে সার্কুলার জারির একদিন পর।

গত বৃহস্পতিবার জারি করা সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আদেশ করেছে, তারা যেন তাদের শেয়ারবাজার কার্যক্রমের প্রতিদিনের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠায়। পাঠানো তথ্যে ব্যাংকগুলোর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ কার্যক্রমের তথ্যও দিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সার্কুলারের পর ব্যাংক ও তার শেয়ারবাজার সহযোগী কোম্পানির (ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি) বিনিয়োগ কার্যক্রম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারিতে পড়ায় শেয়ারবাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কায় ছিলেন শেয়ার ব্যবসায়ীরা।

এ অবস্থায় কমিশন সম্ভাব্য ওই ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত নতুন আদেশ জারি করেছে বলে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: