রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২০ অপরাহ্ন

২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনের দাবিতে কেশবপুরে মানববন্ধন

যশোর প্রতিনিধি :: ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনের দাবিতে মানব বন্ধন করেছেন ভবদহের ভূক্তভোগী মানুষ। যশোর তথা কেশবপুর উপজেলার ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনের দাবিতে এই মানব বন্ধনের আয়োজন করা হয়। শনিবার দুপুরে ২৭ বিল বাঁচাও সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে উপজেলার পাঁজিয়া ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা এলাকার মানুষের বাড়িঘরে উঠে আসা পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে ওই মানব বন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

জলাবদ্ধ সমস্যা সমাধানে মানব বন্ধনে নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর ১৩টি দাবি উত্থাপন করেন। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ এই মানব বন্ধনে অংশ নেন। শ্রীহরি নদীর অববাহিকায় অবস্থিত ২৭ টি বিল। একে পূর্ব ও পশ্চিম বিল খুকশিয়াও বলা হয়। এ বিলে ৪০ হাজার বিঘার উপরে জমি রয়েছে। আশির দশক থেকে পলি জমে নদী ভরাট হওয়ার কারণে এ বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে তা স্থায়ি রূপ ধারণ করেছে।

জলাবদ্ধতা দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে নদী খননসহ নানা প্রকল্প গ্রহণ করে কয়েকশত কোটি টাকা ব্যয় করেও কোন সুফল আসেনি। ২৭ বিলের চারপাশে ছয়টি ইউনিয়নের ৬৮টি গ্রামে মানুষের বসবাস। এর মধ্যে কেশবপুরের মাদারডাঙ্গা, মনোহর নগর, বাগডাঙ্গা ও ডোঙ্গাঘাটা গ্রামের প্রায় ৭০০ শত পরিবার এখনো পানিবন্দি। এছাড়া
মণিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে।

এ সমস্ত এলাকার মানুষ প্রায় এক মাস পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন। সম্প্রতি টানা বৃষ্টির পানি বাগডাঙ্গা-মনোহরনগর খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হতে না পেরে খাল উপচে মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মানব বন্ধনে ২৭ বিল বাঁচাও সংগ্রাম কমিটির ১৩টি দাবি হলো বাগডাঙ্গা-মনোহরনগরের ডায়ের খালের আট ব্যান্ড এইচ গেটের নদীকূলের দিকে শ্রীহরি নদি জরুরি ভিত্তিতে খনন করা।

পানি নিষ্কাশনে সকল খালের বাধাসমূহ অপসারণ করা। গেটের জলকপাট সংস্কার/মেরামত ও যথাযথভাবে জোয়ার-ভাটার সময় গেট পরিচালনা করা। আগামী মাঘী পূর্ণিমার আগে বিল কপালিয়ায় জোয়ারাধার (টিআরএম) প্রকল্প চালু করতে হবে। সকল নদী অববাহিকায় একটি করে জোয়ারাধার কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

জোয়ারাধারকৃত বিলের জমি মালিকদেরকে সহজ শর্তে ক্ষতি পূরণ প্রদান করতে হবে। পদ্মা, ভৈরব ও মাথাভাঙ্গা নদীর সঙ্গে এ অঞ্চলের নদীগুলোর সংযোগ স্থাপন করতে হবে। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জন সম্পৃক্তকরণ নিশ্চিত করতে হবে। সমস্যা সমাধানে লোকজ জ্ঞানের সমন্বয় ঘটাতে হবে। সকল নদ-নদী দখল মুক্ত করতে হবে। সমস্যা সমাধানে আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয় কমিটি গঠন করতে হবে। জলাবদ্ধ এলাকায় ছয় মাস ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ করতে হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতি পূরণ দেয়াসহ গো খাদ্যের ভর্তুকী দিতে হবে। ২৭ বিল বাঁচাও সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক বাবুর আলী গোলদারের সভাপতিত্বে মানব বন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন সংগঠনের উপদেষ্টা ও উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী। এ সময় আরো বক্তব্য দেন সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক সনজিৎ বিশ্বাস, ইউপি মেম্বার বৈদ্যনাথ সরকার, খলিলুর রহমান, মাসুদা বেগম বিউটি, আব্দুল গফফার, শাহরিয়ার বাবর বাঁধন প্রমুখ।

বাগডাঙ্গা গ্রামের সুশান্ত সরকারের স্ত্রী চায়না সরকার বলেন, ঘর থেকেপাকা রাস্তায় উঠতে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে তীব্র সমস্যা হচ্ছে। আমরা গ্রামবাসি ত্রাণ চাই না, পানিবন্দি দশা থেকে মুক্তি পেতে চায়। তপতি সরকার বলেন, প্রায় একমাস ধরে বাড়ির উঠানে হাঁটু জল। চুলার ভেতরেও জল উঠে গেছে। আলাদা চুলা তৈরি করে রান্না করতে হচ্ছে। মনোজ সরকার বলেন, বাড়ি ঘরে পানি উঠার পর গোয়াল থেকে গরু বের করিনি। তবে গোখাদ্য ফুরিয়ে আসায় বাধ্য হয়েকম দামে একটা গরু বিক্রি করে দিয়েছি। বাথরুম তলিয়ে গেছে।

খুব সমস্যার মধ্যে আছি। কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী কৃষ্ণা সরকার বলেন, দীর্ঘদিনপর কলেজ খুললেও পানির মধ্যে আটকা পড়ে পড়াশোনায় ঠিক মতো মন বসছে না। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সী আছাদুল্লাহ জানান, গত বছর অক্টোবরে ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে ডায়ের খাল পুনঃ খনন করা হয়েছিল। বিল কমিটির পক্ষ থেকে এবার পলি অপসারণের একটাব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে ভবদহ থেকে খর্ণিয়া পর্যন্ত নদী খনন করে গভীর না করলে এ সমস্যা থেকে যাবে। ডায়ের খালের পানি শ্রীহরি নদী দিয়ে যাওয়ায় নদীটি খননের বিষয়ে ভবদহ প্রকল্পের একটি প্লানিং জমা দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ওই এলাকা সম্প্রতি পরিদর্শন করে দেখেছি নদীর ভয়াবহ অবস্থা। শ্রীহরি নদী পুনঃখননের প্রয়োজন। নয়তো এ জলাবদ্ধতার হাত থেকে বাঁচা যাবে না।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: