সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

ঠাকুরগাঁওয়ে টোলের নামে চলছে চাঁদাবাজি, কোন পদক্ষেপ নেই প্রশাসনের

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি, রেদওয়ানুল হক মিলন : ঠাকুরগাঁওয়ে প্রশাসনকে কোন তোয়াক্কা না করেই স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র প্রকাশ্যে টোল আদায়ের নামে (ব্যাটারি চালিত) অটো চার্জার ও ট্রাকে অবৈধভাবে চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেছে শ্রমিকরা।

চাঁদাবাজি বন্ধে শ্রমিকরা একাধিকবার প্রশাসনকে অবগত করলেও এসব বন্ধে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি বলেও জানান তারা।

সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১০টি পয়েন্টে লাঠি হাতে ট্রাক ও অটোবাইক আটকিয়ে জবরদস্তি টোল আদায়ের নামে চলছে চাঁদাবাজি। শুধু ঠাকুরগাঁও পৌর শহরেই নয়, জেলার পাঁচ উপজেলার সকল সড়কেই এখন বিভিন্ন সংগঠনের নামে প্রকাশ্যে চলছে এসব। আর এই চাঁদাবাজির সাথে জড়িত স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র।

সদর উপজেলার পৌর শহরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সমাজ কল্যাণসহ বিভিন্ন তহবিলের নামে চালকদের কাছ থেকে বিভিন্ন স্থানে জোড় করে চাঁদা আদায় ও হয়রানি করে আসছে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, একজন শ্রমিক সারা দিন গাড়ি চালিয়ে যা উপার্জন করেন তা থেকে বিভিন্ন স্থানে চাঁদা আর মালিকের পাওনা শোধ করে আর তেমন কিছু টিকে না। এঅবস্থায় সংসার চালানো খুবই কষ্ট হয়ে গেছে তাদের। চাঁদা দিতে না চাইলে তাদের উপর চালানো হয় শারিরিক নির্যাতন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি।

শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা মাহবুব আলম রুবেল জানান, প্রতিদিন গড়ে অটো চার্জার প্রতি রশিদ ১০টাকা হারে ৫হাজার চালকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা উঠানো হয়। যা মাসে ১৫ লক্ষ টাকা আর বছরে দাড়ায় ১কোটি ৮০ লক্ষ টাকা।

অন্যদিকে প্রতিটি ট্রাক ও ট্যাংলরির কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৫০ টাকা করে। শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের এসব চাঁদার টাকা ভোগ করে ক্ষমতাসীন দলের একটি চক্র।

ভুক্তভোগী শ্রমিক বেলাল হোসেন জানান, করোনার জন্য প্রায় দুইমাস তারা রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারে নাই। লকডাউন শিথিল হলে রাস্তায় অটো চালাচ্ছেন। কিন্তু তাতেও চাঁদাবাজদের হাত থেকে রেহাই নেই তাদের। প্রতিদিন মালিকের জমা খরচ ও নিজের সংসারের খরচ উঠানোই যেখানে অনেক কষ্টের বিষয়, সেখানে সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে লাঠি হাতে জোড় করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন সব দেখেও চুপচাপ থাকছে।

শ্রমিক আনোয়ার হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের শ্রমিকরা এখন চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি। রাস্তায় গাড়ি নামালেই দিতে হচ্ছে চাঁদা। যেখানে সরকার বিভিন্ন মিডিয়ায় বলে আসছেন করোনা পরিস্থিতির জন্য সড়ক ও মহাসড়কে কোন চাঁদা উঠানো যাবে না, শ্রমিকদের হয়রানি করা যাবেনা। সেখানে প্রকাশ্যে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা চাঁদাবাজি করছে।

জেলা অটো চালক সমিতির সাধারন সম্পাদক এসএম লাবু জানান, সড়কে লাঠি হাতে জোড় করে চাাঁদা উঠানো এবং চাঁদা না পেলে শ্রমিকদের নির্যাতন করা এটা দেশের অন্য কোথাও আছে বলে তার জানা নেই। চাঁদা বন্ধের দাবিতে সকল শ্রমিকরা অনেক দিন ধরে আন্দোলন করে আসছে, কিন্তু প্রশাসন এবিষয়ে তেমন কোন ভূমিকা পালন করছেনা।

সম্প্রতি চাঁদা বন্ধে মানবন্ধন, বিক্ষোভ ও পৌর মেয়রের পুত্তলিকা দাহ সহ জেলা প্রশাসককে স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছেনা। তাই দরিদ্র শ্রমিকদের বাঁচাতে দ্রুত এই অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করার ব্যাবস্থা গ্রহণ না করা হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

ট্রাক ও অটো টোল আদায়কারি (চাঁদাবাজ) মোহাম্মদ বিপ্লবের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আমি শুধুমাত্র টোল আদায়কারি হিসেবে কাজ করি। স্থানীয় একটি সংগঠনের নেতার নির্দেশে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। গোবিন্দনগর বিসিক মোড় এলাকার দুটি পয়েন্টের প্রতিদিনের চাঁদার টাকা স্থানীয় সংগঠানের নেতাদের দেয়া হয়।

পৌর মেয়র মির্জা ফয়সাল আমিন জানান, সরকারের নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডারের মাধ্যমে পৌরটোল আদায় করা হয়। তবে অন্য নামে পৌর এলাকায় কেউ টোল আদায় বা চাঁদাবাজির কথা শুনেছেন। অন্য সংগঠনের নামে পৌর এলাকায় কেউ টোল করে থাকলে আইনশৃঙ্খলা সংস্থার সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগ ব্যাবস্থা গ্রহণ
করা হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ কামাল হেসেন জানান, করোনা পরিস্থিতিতে সড়ক ও মহাসড়কে সরকার সকল প্রকার চাঁদা আদায় বন্ধ ও অবৈধ ঘোষনা করছেন। এরপরও যদি সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কেউ প্রভাব খাটিয়ে বা দলীয় পরিচয়ে চাঁদা উত্তলোন করে। তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: