রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২১ অপরাহ্ন

ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের হিমেল হাওয়ায় বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :: বাংলা ক্যালেণ্ডারে সবেমাত্র পৌষের শুরু। কিন্তু অগ্রহায়ণের মাঝ পথেই উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও এবং এর আশপাশের এলাকায় জেঁকে বসে শীত। দিনে মেঘলুপ্ত সূর্যের খরতাপ আর রাতে পড়ছে হালকা থেকে ঘন কুয়াশা। মেঘলা আকাশে বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে কুয়াশা। হঠাৎ চলে আসা এই ঠান্ডার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঠাকুরগাঁওয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২২-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১২-১৬ সেলসিয়াসে উঠানামা করছে।

দিন দিন তাপমাত্রা আরো কমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সন্ধ্যায় তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে শীতের দাপট। এই দাপট থাকে সকাল পর্যন্ত। প্রতিদিন সকালেই দেখা মিলেছে ঘন কুয়াশার। এই কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। সকাল নয়টা পর্যন্ত থাকছে কুয়াশার আমেজ।এদিকে শীতের দাপট বাড়ায় বিপাকে পড়েছে শিশু, বৃদ্ধ এবং খেটে খাওয়া মানুষ। শীতের প্রকোপ আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারদিক কুয়াশায় ঢাকা। রাস্তায় লোকজন তেমন নেই। ফসলি জমিতে অল্পসংখ্যক কৃষক কাজ করছেন। শীতে জড়োসড়ো হয়ে গেছে গবাদি পশুও। সকাল ১০টা বাজলেও মহাসড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। শীতে কাজ করতে অসুবিধা হওয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। একটু গরম পেতে আবার খড়কুটোতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে কেউ কেউ।

সাধারণ মানুষ বলছেন, শীতের কারণে তারা বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। ফলে তাদের খেয়ে- না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। গরম কাপড়ের অভাবে যবুথবু দিন কাটছে তাদের।এদিকে শীত আসতেই উড়তে থাকা কাঁচাবাজার নেমে এসেছে মাটিতে। পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও ক্রেতার অনুপস্থিতির কারণে হতাশ কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা। বলছেন, এখন সবজির দাম কম। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যাও কম।শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় কিনতে ফুটপাতের শীতের পুরনো কাপড়ের দোকানগুলোতে কদর বেড়েছে মধ্যম আয়ের মানুষদের। তারা বলছেন, দাম নাগালের ভিতরে থাকায় ইচ্ছেমত সবার জন্য গরম কাপড় কিনতে পারছি।

জেলায় আবহাওয়া অফিস নেই। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন জানান, নভেম্বর মাসের শেষদিক থেকেই জেলায় আবহাওয়ায় ঠান্ডা ভাব বিরাজ করছে। উত্তরের হাওয়া না বইলেও ঝিরঝির বৃষ্টি শীতের অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। হেমন্তে সন্ধ্যা-রাত-ভোরে কুয়াশা থাকা বা হালকা বৃষ্টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। ঝিরঝির বৃষ্টির প্রবণতা কমে এলেও আগামী তিন দিন রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে পারে।ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক কে.এম. কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে পাঁচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ২৫ হাজার কম্বল বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আরও কম্বলের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাই বেশি। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহজাহান নেওয়াজ বলেন, শীতের কারণে শিশুরা শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। আমরা তাদের চিকিৎসায় কোন ঘাটতি রাখছিনা।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: