শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০১ অপরাহ্ন

শিরোনাম
চৌদ্দগ্রামে বৃষ্টির প্রার্থনায় ইসতিসকার নামাজ, প্রখর রোদে মুসল্লিদের কান্না হাতিয়ায় সৈকতে দেখা মিলল ‘ইয়েলো বেলিড সি স্নেক’ ফসলি জমি কেটে মাটির ব্যবসা: ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই লাখ টাকা জরিমানা মাটি ব্যবসায়ীর লাখ টাকা জরিমানা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদে কুমিল্লার মফিজুর রহমান বাবলু সিনেমা হলে দেখা যাবে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের গল্প দেশে পৌঁছেছেন টাইগারদের নতুন কোচ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়া : ডাব্লিউএমও নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল জাতি হিসেবে আমাদের সকল প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচন করে গেছে মুজিবনগর সরকার-ধর্মমন্ত্রী

করোনা প্রভাবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা লোকশানে জালি টুপি শিল্পে

আব্দুর রাজ্জাক, বগুড়া প্রতিনিধি : মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সাবার প্রিয় বাহারি রঙ্গের পঞ্জাবির সঙ্গে টুপি। তারই মধ্যে এখন রমযান মাস। এ মাসে মুসলমানরা কমবেশি সবাই মসজিদে নামায পড়ে, তাই বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে টুপি বিক্রি হয় সর্বাধিক।

এ ছাড়াও সামনেই আসছে ঈদ, পাঞ্জাবীর পাশাপাশী অবশ্যই টুপি চাই। আর এই সুযোগে টুপি দোকানদারদের পাশাপাশি প্রায় ৫লক্ষা গ্রাম্যবধূরা এর সঙ্গে জরিত। প্রতিবছর এ সময় টুপি তৈরিতে চরম ব্যস্ত সময় পার করে। গ্রাম্যবধূদের তৈরি এই সকল টুপি দেশের বাজরে চাহিদা মিটিয়ে সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, পাকিস্থান, ভারত সহ বেশ কয়েকটি দেশে সুনাম কুড়িয়ে আনছে।

বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে রফতানি হত হাতে তৈরিকৃত জালি টুপি। আর এই সকল টুপি তৈরির সঙ্গে জরিত ৫লক্ষাধিক নারি শ্রমিক এবং প্রায় ২শ ব্যাপারি। গ্রামের বধুরা ঘরের কাজ শেষ করে অবসর সময়ে নানা সুখ-দুঃখের আলাপচারিতা আর জমানো গল্পের আসরেই চলে তাদের রকমারি হাতের কাজ। ওদেরই নিপুন হাতের ছোঁয়া আর সুতা ও ক্রুশ কাটা এই দু’য়ের মিলিত বন্ধনেই তৈরি হচ্ছে রং-বে-রংয়ের রকমারি টুপি।

ওইসব রকমারি টুপি দেশের সীমানা পেরিয়ে আজ সূদুর সৌদি আরব, পাকিস্তান, দুবাই, কাতার, ভারতসহ মুসলিম সকল দেশেই প্রায় রপ্তানি হত। যা থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বৈদেশিক অর্থ আয় হত। সেই সাথে ওদের ভাগ্যের সঙ্গে দেশীয় অর্থনীতির চাকাও বেশ জোরোসোরেই ঘুরতো। কিন্তু এ বছর করোনার কারনে বিদেশে এই জালি টুপি পাঠাতে না পেরে গোডাউনে আটকে পরে আছে এই সকল জালি টুপি। বিক্রি করতে পারছেনা গ্রামের কারিগর। মানবেতর জীবন যাপন করছে কারিগররা।

জানা যায়, বগুড়ার শেরপুরের চকধলী, জয়লা-জুয়ান, জয়লা-আলাদি, কল্যাণী, চক-কল্যাণী ও গুয়াগাছী এবং ধুনটের বোহালগাছা, চৌকিবাড়ি, ফড়িংহাটা, কুড়হা-হাটা, বিশ্বহরিগাছা, চাঁনদার, ভূবনগাতি, চালাপাড়া, পাঁচথুপি, থেউকান্দি ও বাটিকাবাড়ি সহ এই দুই উপজেলায় ৬শ পরিবার এই টুপি শিল্পের সঙ্গে জরিত। ব্যাপরী রাজু আকন্দ জানান, ৫ লক্ষ নারী এ পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারো ঈদকে সামনে রেখে এ পেশায় আরো কয়েক হাজার নারী-পুরুষের আগমন ঘটেছে।

কিন্ত করোনার প্রাদর্ভাবে এ সকল টুপি বিদেশে রপ্তানি না হওয়ায় আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। আমাদের অর্থ আটকে পড়েছে, মানবেতর জীবন যাপন করছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে ওইসব গ্রামে টুপি বুনোনের কাজ শুরু হয়। বোহালগাছা গ্রামের বৃষ্টি খাতুন, মর্জিনা বিবি, হ্যাপি, রানা, শিরিন আকতার জানান, তারা জন্মের পর থেকেই নিজেকে টুপি বানানোর পেশার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। তাদের মতে, বাড়িতে কর্মহীন হয়ে বসে থাকার চেয়ে কিছু একটা করাই ভাল। এমন ভাবনা এবং বংশীয় ঐতিহ্যকে ধারন করতেই অনেকেই টুপি তৈরির শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।

বিথি, সাবিনা ইয়াসমিন, সুর্বনা ও শিউলি জানান, তারা স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি টুপি তৈরি করে থাকেন। এছাড়া গ্রামের গৃহবধূরা সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে টুপি বানিয়ে থাকেন। তা থেকে আয়ও মন্দ হয়না। বিশেষ করে রমযানে গ্রামে গ্রামে টুপি তৈরির হিড়িক পড়ে যায়। সবকিছু বাদ দিয়ে গৃহবধূরা টুপি তৈরির কাজ করেন। এ সময় বাড়ির অন্যান্যরাও বাদ থাকেন না। তারা কোন না কোন ভাবে ওই কাজে সহযোগিতা করেন। তারা জানান, বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সূতো দিয়ে আসেন। পরে সূতোর দাম কেটে রেখে অবশিষ্ট টাকা দিয়ে টুপি কেনেন।

ব্যাপারী মোঃ আব্দুল মান্নান জানান, ঠিকমত কাজ করলে দিনে ৩/৪টি টুপি বুনোনো সম্ভব। ৭০ টাকা দামের এক ববিন সূতা দিয়ে ১২টি টুপি তৈরি করে যার দাম ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। ব্যাপারীরা বাড়িতে গিয়ে সূতার ববিন দিয়ে আসেন এবং টুপি তৈরি শেষ হলে নিজেরাই খরিদ করে থাকেন। ওইসব রকমারি টুপি তারা সৌদি আরব, পাকিস্তান, দুবাই, কাতার, ভারত সহ মুসলিম সকল রাষ্ট্রে পর্যায় ক্রমে বিক্রি হয়।

বাংলাদেশ জালি টুপি এ্যাসেসিয়েশনের বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফিরোজ উদ্দিন সোহাগ জানান, সরকার যেমন গারমেন্স শিল্পকে রপ্তানিতে যে ভর্তুকি প্রদান করে তেমনইভাবে এই শিল্পকে টিকে রাখতে হলে সরকার এই জালি টুপিতে ভুর্তিকি দিতে হবে।

বাংলাদেশ জালি টুপি এ্যাসেসিয়েশনের বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি জুয়েল আকন্দ বলেন, প্রতি বছর প্রায় আমরা ৫০ কোটি টাকার অধিক বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনি। কিন্ত করোনার কারনে আমরা এ বছর সিজেন রমজানে এই কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা লোসকান হয়েছে। এরসাথে এই শিল্পের সঙ্গে জরিত ৫লক্ষাধিক নারী এবং ২শ ব্যাপারি লোসকান গুনছে এবং মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমরা সরকার থেকে কোন অনুদান বা কোন সহযোগিতাও পায়নি।

এই শিল্পকে টিকে রাখতে হলে এই দুর্দিনে সরকারকে পাশে দাড়াতে হবে। নইলে এই শিল্প ধ্বংস হবে। কোটি কোটি টাকা প্রতি বছর রাজস্ব খাত হতে বঞ্চিত হবে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: