বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১০ পূর্বাহ্ন

পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় বসা উচিত

নিউজ ডেস্ক :: ডা. এ কে এম মাহফুজুল হাসান তানভীরের জন্ম কুড়িগ্রামের উলিপুরে ১৯৯৩ সালের ৭ ডিসেম্বর। বাবা মো. আবুল কাশেম ছিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপসহকারী প্রকৌশলী। তিনি ২০১০ সালে অবসর গ্রহণ করেন। মা মোছা. মাহমুদা বেগম গৃহিণী। মেধাবী তানভীর ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। তিনি ২০০৮ সালে বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পান। ২০১৬ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। বর্তমানে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘মেডিকেল অফিসার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলজিতে উচ্চতর ডিগ্রি ‘ডি-কার্ড’ কোর্স এবং মেডিসিনে ‘এফসিপিএস’ করছেন।

সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফিচার লেখক সাজেদুর আবেদীন শান্ত—

মাহফুজুল হাসান তানভীর: আমার ছোটবেলা অনেক আনন্দ ও দুরন্তপনায় কেটেছে। আমি ছিলাম তিন-ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তাই সবাই আমাকে খুব ভালোবাসতেন। আমার উপর কোনো চাপ বা কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। বেশিরভাগ সময়ই খেলাধুলা করে কাটিয়েছি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েই ছোটবেলা কেটেছে।

মাহফুজুল হাসান তানভীর: না। পড়াশোনার ব্যাপারে আমার কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। আমি ভালো ছাত্র হওয়ায় শিক্ষকরা আমাকে পছন্দ করতেন। আমার বাবা-মাও পড়ালেখার ব্যাপারে বেশ সচেতন ছিলেন।

মাহফুজুল হাসান তানভীর: আমার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। বাবার অফিসে আমি নিয়মিত যেতাম। সেখানে সময় কাটাতাম। বাবার প্রতি যে সবার ভালোবাসা ও সম্মান ছিল, তা দেখে অনেক ভালো লাগতো। আমিও ভাবতাম, বাবার মতো সরকারি কর্মকর্তা হবো। সেটা যে বিসিএস ক্যাডারই হতে হবে, তা নয়। সরকারি কর্মকর্তা হওয়াই লক্ষ্য ছিল।

মাহফুজুল হাসান তানভীর: বিসিএস যাত্রার গল্পটা আমি যতটা সহজ ভাবছিলাম; ততটা সহজ নয়। বাস্তবতা অনেক কঠিন। প্রথমে আমি ৩৭তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু তখন আমার ইন্টার্নি চলছিল। একদিকে ইন্টার্নের ডিউটি, আরেক দিকে বিসিএসের জন্য পড়া অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। যার জন্য ৩৭তম বিসিএস আমার হয়নি। এরপর ৩৮তম বিসিএসও আমার হয়নি। কিন্তু ৩৯তম বিসিএসে আমি চূড়ান্তভাবে সব ধাপ পর্যন্ত উত্তীর্ণ হই।

মাহফুজুল হাসান তানভীর: আমি ৩৯তম বিসিএসের স্বাস্থ্য ক্যাডারে আছি। বগুড়ার ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে আছি।

মাহফুজুল হাসান তানভীর: বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিসিএসটা সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। তাই এ পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আমার মতে বিন্দুমাত্র কোনো ঘাটতি রাখা চলবে না। যার যে প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকে; সেই দিকে নজর দিয়ে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় বসা উচিত। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম যেটা প্রয়োজন, তা হলো প্রচণ্ড ধৈর্যশীলতা এবং নিজের ওপর গভীর বিশ্বাস। এই সময় নিজেকে অন্যান্য সব সামাজিক কাজ থেকে সরিয়ে শুধু পড়াশোনায় প্রচুর সময় দিতে হবে। প্রথম থেকেই সিরিয়াস হতে হবে। প্রথমদিকে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়া যাবে না।

শুরুতে গণিতের জন্য ক্লাস সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত বোর্ড বইগুলো দেখলেই চলবে। ক্লাস নাইন-টেনের বাংলা ব্যাকরণ বইটি ভালোভাবে পড়তে হবে। প্রতিদিন কয়েকটি ইংরেজি শব্দ মুখস্থ করতে হবে। এতে ভোকাব্যুলারিতে একটা দক্ষতা আসবে। প্রতিদিন জাতীয় ইংরেজি পত্রিকা পড়ার চেষ্টা করতে হবে। মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়লে সাধারণ জ্ঞান সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি প্রতিমাসে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নগুলো দেখা যাবে। তাই নিয়মিত কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তে হবে। প্রিলি ও রিটেনের জন্য কোচিং করা দরকার, এতে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার সুযোগ হয়।

পাশাপাশি প্রিলি ও রিটেনের জন্য বিসিএস সিলেবাস অনুযায়ী বাজার থেকে মানসম্মত যেকোনো এক সেট বই কিনে একবার পড়া প্রয়োজন। মুখস্থ করার চেষ্টা না করে বুঝে পড়লেই বেশি ভালো। ভাইভায় একজন শিক্ষার্থীর পোশাক, আচার-আচরণ, ভাষা, দক্ষতা সব দেখা হয়। তাই ভাইভার জন্য সব বিষয়ে সার্বিক ধারণা রাখা প্রয়োজন। যেমন- ক্যাডার চয়েস, নিজের অনার্সের সাবজেক্ট, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়, নিজ জেলা ও উপজেলা, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সরকারের উন্নয়ন-সাফল্য, সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলেই ভাইভায় ভালো করা সম্ভব।

মাহফুজুল হাসান তানভীর: আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছি। আমার বাবা সব সময় আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। এ ছাড়াও আমার বড় ভাই যারা বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছেন; তারা অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকেও বিসিএসের অনুপ্রেরণা পাই।

মাহফুজুল হাসান তানভীর: আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে—আমি দেশসেরা কার্ডিওলজিস্ট হতে চাই। দেশের মানুষের সেবা করতে চাই। আমার চাকরি উপজেলা লেভেলে হলেও আমি সপ্তাহে একবার গ্রামে যাই। গ্রামের মানুষদের আমি ন্যূনতম মূল্যে সেবা দিয়ে থাকি। আমার ইচ্ছা আছে, গ্রামে এসে একটা হাসপাতাল করার। যেখানে মানুষ নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবে।

মাহফুজুল হাসান তানভীর: করোনাকালে আমি নিয়মিতভাবে ঝুঁকিতে থেকেও চিকিৎসাসেবা দিয়ে গেছি। চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে আমি ও আমার পরিবার করোনায় আক্রান্ত হই। তবুও আমি দমে যাইনি। নিয়মিতভাবে রোগীদের পাশে ছিলাম। তাদের করোনা বিষয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করি। তাদের সচেতন করার চেষ্টা করি।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: