বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন

ঠাকুরগাঁওয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নেই করোনা সচেতনতা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই জনমনে আতঙ্ক বেড়ে চলেছে। কিন্তু বাড়েনি সচেতনতা। এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ে মার্কেট-শপিংমল খোলার এক সপ্তাহের যেতেই আবারও বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু থেমে নেই ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের ঈদ শপিং। ভোরের সকাল ফর্সা হতে না উঠছে দোকানগুলোর সাঁটার। এটাই ঠাকুরগাঁওয়ের বর্তমান চিত্র।

অন্যদিকে সাধারণ মানুষ যখন ঈদ শপিংয়ে ব্যস্ত তখন ঠাকুরগাঁওয়ের কোভিড১৯ যোদ্ধারা ব্যস্ত জীবনের মায়া ত্যাগ করে সাধারণ রোগী, করোনা উপসর্গে আক্রান্তসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায়। মহান এই পেশায় আগতরা যেন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় অতিক্রম করছে।

তাদের একজন মোঃ জিয়াউল হক জিয়া। তিনি ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের একজন স্বাস্থ্যকর্মী। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে মানবজাতি যখন ভয়ে আতঙ্কিত তখন তিনি স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে রয়েছেন প্রথম কাতারে। গতকাল তিনি টানা ১৬২ ঘন্টা করোনা আইসোলেশন ইউনিটে দায়িত্ব পালন শেষে ঘরে ফিরেছেন, আক্রান্তদের খুব কাছাকাছি ছিলেন টানা ৭দিন। বর্তমানে তিনি ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে আছেন।

করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়া সম্মুখ সারির এই যোদ্ধার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের সুরক্ষার কথা ভেবে প্রাথমিকভাবে রাজি ছিলেন না। প্রতিবেদককে শর্ত দেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসতে। তাঁর বাসার গেটে এলাম। তিনি এলেন, দাঁড়ালেন আমার থেকে তিন মিটারের বেশি দুরত্বে।

তিনি যা বললেন তা শোনার জন্যে আমি প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি জানান, এতদিন ধরে যা শুনে এসেছি তার সবটাই ছিল ভুল। যদি করোনায় আক্রান্ত ১০০ রোগীর মাঝে থেকেও সামাজিক দুরত্ব মানি, সংস্পর্শে না আসি তাহলে আমার করোনা আক্রান্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

তিনি আরও জানান, আমরা করোনা আইসোলেশন ইউনিটে থাকা রোগীদের ইমিউন সিস্টেম বাড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি, ভিটামিনযুক্ত খাবার ও হাই প্রোটিন ডায়েট প্রদান করেছি। কারণ হিসেবে তিনি জানান, আমাদের শরীর (ইমিউন সিস্টেম) এই ভাইরাসের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে প্রাণপনে চেষ্টা করে। নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম শরীরের অভ্যন্তরে ক্রমাগত প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি বা যোদ্ধা সেল তৈরি করতে থাকে ভাইরাসকে পরাস্ত করতে। ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির গতি অপেক্ষা আক্রান্তের ইমিউন সেলের বংশবৃদ্ধির গতি বেশি হলে দ্রুত এ ভাইরাস থেকে মুক্তি মেলে। আর দুর্বল ইমিউন সিস্টেম হলে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি বেড়ে যাবে ও ফুসফুস ক্রমান্বয়ে পরাস্ত হতে থাকবে ভাইরাসের হাতে।

তিনি তাঁর কথার মাঝে বারবার সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা ও নাকে-মুখে হাত দিতে মানা করেন। সংস্পর্শে আসা রোধ করাটাই করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকার একমাত্র হাতিয়ার। সেই সাথে ইমিউন সিস্টেম বাড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।

একই রকম কথা শোনা গেল ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. মো.মাহফুজার রহমান সরকারের কন্ঠেও। তিনিও পূর্বপশ্চিমকে জানালেন সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা ও নাকে-মুখে হাত না দেওয়ার কথা। ইমিউন সিস্টেম বাড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনিও। সংস্পর্শে আসা রোধ করাটাই করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। ঠাকুরগাঁওবাসীকে সাবধান করার সুরে এই মহামারিতে হাটবাজার, মার্কেট, ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভিড় না জমানোর অনুরোধ করেন সিভিল সার্জন।

অনেকেই হয়ত বলছেন এগুলো ২-৩মাস আগেও শুনেছি। কিন্তু মেনেছি কি আসলে? পুরাতন কথা নতুনভাবে বলার পিছনে রয়েছে বিস্তর কারণ। কেননা, করোনা এখন ঠাকুরগাঁওবাসীর নিকট এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: