শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন

আমার ভাই, আমার নেতা, আমার সহযোদ্ধা .. : নাসির উদ্দীন আহম্মদ নাসু

আমার বড় ভাই আফছার উদ্দীন আহম্মদ ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মেঝ ভাই
আশরাফ উদ্দীন আহম্মদ শুধু ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা নয়, আমৃত্যু মুক্তি সংগ্রামে নিবেদিত ছিলেন। বড় ভাই ভারতে গিয়েছিলেন। মেঝভাই দেশে থেকে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন কমরেড আহম্মদ হোসেন (পোস্ট মাস্টার) চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় প্রথম মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। তার নির্দেশে কমরেড অনিল লালার নেতৃত্বে কেলিশহর ও পটিয়া সদর খাসমহল পোড়ানোর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়।

কমরেড অনিল লালা ছিলেন কমরেড আহম্মদ হোসেনের অন্যতম রাজনৈতিক শিষ্য। কমরেড অনিল লালা মেনন গ্রুপ ছাত্র ইউনিয়ন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পটিয়া কলেজের প্রথম জিএস নির্বাচিত হন। উনারা পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি করতেন । মেঝভাই সেই ধারার সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন।

আমার দুই অগ্রজ রাজনীতির সাথে সাথে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও সক্রিয় ছিলেন। বড় ভাইকে গ্রামের দুই একটি নাটকে অভিনয় করতে দেখেছি। আমরা ভাইদের মধ্যে বড় ভাই খুব স্মার্ট ছিলেন। চলতেন খুব ফিটফাট, তবে অভিনয়ের ক্ষেত্রে খুব সাচ্ছন্দ ছিলেন না। মেঝভাই কিন্তু অসাধারণ অভিনয় করতেন। আমি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আবহের মধ্যে বেড়ে উঠেছি। শুনেছি ছোটকালে আমার বাবাও শখের অভিনেতা ছিলেন।

কলেজে পড়া অবস্থায় বড় ভাই ৬৯ এর গণ আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। জাসদের জন্মলগ্ন থেকে বড় ভাই আফছার উদ্দীন আহম্মদ জাসদ রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন।এক সময়ের অত্যন্ত সক্রিয় রাজনৈতিক ও প্রবীণ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব নাসির উদ্দীন চৌধুরী ছিলেন আমার বড় ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

একসময় তিনি আমাদের পরিবারের একজন হয়ে উঠেন। সেই থেকে তিনিও আমার বড়ভাই। আমি ও মেঝভাইকে তিনি ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করতেন। খুব ছোট থেকেই বিশেষ করে ৬৯ থেকে ৭৩ পর্যন্ত শ্রদ্ধেয় নাসির উদ্দীন চৌধুরী তথা জাসদ পরিবারের প্রভাব পড়ে আমার ওপর। সম্ভবত ৬৯ এ আমি সবে মাত্র হাই স্কুলে প্রবেশ করেছি। দুই ভাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ছোট অবস্থায় আমিও মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য রওনা দিয়ে ছিলাম। বাবা খুঁজে বের করে ধরে নিয়ে না আসলে হয়তো আমিই হতাম পটিয়ায় সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা।

সম্ভবত পটিয়ায় সর্বকনিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন আমার সহপাঠী সরওয়ার আলম (টিনসু)।৭৩ এর শেষের দিকে মেঝ ভাইয়ের রাজনীতি ও তাঁর বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হতে শুরু করি। মেঝভাই এর নেতৃত্বে আমি সংগঠন করেছি। এক পর্যায়ে মেঝভাইও আমার নেতৃত্বে রাজনীতি করেছেন। মেঝভাই বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আমিও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন করতাম। পরবর্তীতে নজরুল ভাই এরপর আমি বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি নির্বাচিত হই। মেঝভাই আমার লেখা ও পরিচালিত অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। আমার এখনও মনে আছে ৭৪ এর রক্ষীবাহিনীর চরম তান্ডবের সময় শুধু আমরা দুই ভাই মিলে রাতের অন্ধকারে গোপন পোষ্টার সেঁটেছি।

মেঝভাই আমার নেতা ও সহযোদ্ধা ছিলেন। দল ভাঙাভাঙিতে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী ও ছিলাম। পারিবারিক বা রাজনৈতিক কারণে মান অভিমান করেছি। তবে এমন কোনো নজির নেই যে আমরা ভাই ভাইয়ে দাঁড়িয়ে কথা কাটাকাটি বা সামান্য জোরেও কথা হয়েছে। একটি কথা বলা প্রয়োজন, সুখ কি ও কয় প্রকার আমরা দেখেছি দুঃখ কাকে বলে তাও জেনেছি। পরিবারের অনেক দুর্দিনে মেঝভাই একায় হাল ধরেছেন।

একে একে ১৭ দিনের মধ্যে দুই ভাই চলে গেলেন। দূর থেকে মান অভিমান করবো কার সাথে ? অভাবকে উপেক্ষা করেই এ পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছি । রাজু ভাইয়ের অসুস্থতায় মোচড়ে পড়েছিলাম। এবার মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছি। উঠে দাঁড়াতে পারবো কিনা ভাবছি। কারণ শরীর ঠিকঠাক চলছে না।

(চলবে)

লেখক : নাসির উদ্দীন আহম্মদ
আহ্বায়ক, গণমুক্তি ইউনিয়ন
সমন্বয়ক, বাম ঐক্য ফ্রন্ট


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: