বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩০ অপরাহ্ন

শিরোনাম
হাতিয়ার উন্নয়নে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচিকে কাজে লাগানো হবে – মোহাম্মদ আলী এমপি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ৩৯ বছর পর জমি ফিরে পেলেন যদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার শিবালয়ে ১৫তম  মাই টিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত  ক্রীড়াবিদরা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে- ধর্মমন্ত্রী উজিরপুরে সৎসঙ্গ ফাউন্ডেশনের সেমিনার অনুষ্ঠিত শিবালয়ে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিবাড়ি খেলা অনুষ্ঠিত লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে ৫ জনের মৃত্যু : আসামিদের তিন দিনের রিমান্ড ঈদের দিনে সদরঘাটে দুর্ঘটনায় ঝরল ৫ প্রাণ সৌদির সাথে মিল রেখে নোয়াখালীর ৪ গ্রামে ঈদ উদযাপন নোয়াখালীতে দুর্বৃত্তরা ঘর আগুনে পুড়ে দিয়েছে, ১০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

আমার মেয়র আনিসুল হক

আনিসুল হক। একটি ভালোবাসার নাম, একটি আবেগের নাম। তিনি ছিলেন জনতার নগরপিতা। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষের প্রিয়মুখ ছিলেন। আরও ছিলেন সফল উদ্যোক্তা এবং দর্শকপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক।

আনিসুল হক জন্মেছিলেন ১৯৫২ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জে। নোয়াখালীর ছেলেটিই স্বপ্ন দেখেছিলেন রাজধানী ঢাকাকে বদলে দেওয়ার। ব্যবসায়ী থেকে হয়ে উঠেছিলেন ঢাকার নগরপিতা।

ফেনীর সোনাগাজীর নানাবাড়িতে শৈশব কেটেছে তার। আর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

আনিসুল হকের কর্মজীবন শুরু হয় টেলিভিশনে উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে। ১৯৮০ সালে টেলিভিশনে উপস্থাপক হিসেবে অভিষেক হয় তার। ১৯৯০-এর দশকে বিনোদন জগতে বেশ পরিচিতি লাভ করেন। আশির দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন আনিসুল হক। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন সফল ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। ১৯৮৬ সালে গড়ে তোলেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘মোহাম্মদী গ্রুপ’। ২০০৭ সালের জরিপ অনুযায়ী মোহাম্মদী গ্রুপে কাজ করছেন প্রায় ৭ হাজার মানুষ।

২০০৫ সালে আনিসুল হক বিজিএমই’র সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেখানে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন ২০০৬ সাল পর্যন্ত। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি নির্বাচিত হন। সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিআইপিপিএ’রও সভাপতি ছিলেন।

২০১৫ সালে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন আনিসুল হক। তিনি চেয়েছিলেন একটি পরিকল্পিত ঢাকা গড়ে তুলতে। সে কারণেই রাজনীতিতে নামেন। ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন লাভ করেন। নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকার একাংশের মেয়র নির্বাচিত হন। খুব দ্রুত পৌঁছে যান মানুষের কাছে। উত্তর সিটির উন্নয়নে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সবুজ ঢাকার। এ জন্য ৫ লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক। বর্তমানে তার স্ত্রী মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আনিসুল হক ছিলেন চার সন্তানের গর্বিত পিতা- দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। মেয়ে তানিশা ফারিয়ামান ও অয়ানিক উমাইরা। বড় ছেলের নাম নাভিদুল হক। তবে ছোট ছেলে শারাফ বেঁচে নেই। তার ছোট ভাই আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন।

২০১৭ সালের ২৯ জুলাই সপরিবারে যুক্তরাজ্যে সফরে যান আনিসুল হক। সেখানেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৩ আগস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা যায় মস্তিষ্কের রক্তনালি প্রদাহের সমস্যায় (সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস) ভুগছেন তিনি। সেখানে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে রাখা হয়। ৩১ অক্টোবর অবস্থার উন্নয়ন হলে আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ২৮ নভেম্বর ফের আনিসুল হকের অবস্থার অবনতি হয়। রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার থেকে তাকে আবার আইসিইউতে সরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ৩০ নভেম্বর, বাংলাদেশ সময় তখন রাত ১০টা ২৩ মিনিট- চিকিৎসাধীন অবস্থায় লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে আনিসুল হকের মৃত্যু হয়।

আজ তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। তার জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি। তিনি ওপারে ভালো থাকুন। তার স্বপ্নগুলো যেন থেমে না যায়। বর্তমান নগরপিতার হাতেই গড়ে উঠুক আনিসুল হকের স্বপ্নের সবুজ ঢাকা।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: