বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৪ অপরাহ্ন

‘ভোটের পরিবেশ না দাঁড়ালে ইভিএম কোনো সুষ্ঠু ফলাফল দেবে না’

নিউজ ডেস্ক :: ব্রি জে (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। আন্তর্জাতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক। সাবেক নির্বাচন কমিশনার। লিখছেন, গবেষণা করছেন রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইভিএম সিস্টেমে ভোট গ্রহণ করার যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন সে প্রসঙ্গে মুখোমুখি হনদৈনিক বাঙলার জাগরণ নিউজের। তার মতামত নিয়ে লিখছেন সায়েম সাবু

দৈনিক বাঙলার জাগরণ নিউজ : আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) সিস্টেমে ভোট গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

এই পদ্ধতির প্রধানতম ত্রুটি হচ্ছে পুনরায় ভোট গণনায় অপারগতা। এদেশে ভোট গণনা নিয়েই অধিকাংশ মামলা হয়। সাধারণত প্রার্থীরা এ বিষয় নিয়েই চ্যালেঞ্জ করেন। আদালত এই অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এবং ভোট পুনরায় গণনার সুযোগ দেন। কিন্তু ইভিএমের ভোট নিয়ে যদি কেউ চ্যালেঞ্জ করে, তাহলে তখন কী হবে?

এম সাখাওয়াত হোসেন: মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম আগামী নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট করতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন গত কয়েকটি নির্বাচনে আস্থাহীনতায় ভুগছে। মানুষের কাছে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে মানুষের যে ধারণা তা বুঝতে হবে। সম্প্রতি এক মন্ত্রী বললেন, ‘পুলিশের জন্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পেরেছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, ‘ভারতবর্ষের সরকারকে বলে এসেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’

এমন অবস্থায় ইভিএম পদ্ধতিতে যাওয়া মানে জনআস্থা আরও ধস নামানো এবং নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা।

দৈনিক বাঙলার জাগরণ নিউজ : এমনটি কেন মনে করছেন? এটি তো আধুনিক পদ্ধতি বলে বিবেচ্য হচ্ছে?

এম সাখাওয়াত হোসেন: ইভিএম একটি আধুনিক পদ্ধতি মানলাম। কিন্তু বাংলাদেশের ইভিএম তো ত্রুটিপূর্ণ। প্রমাণিত হয়েছে। আবার আধুনিক অনেক রাষ্ট্রই এই পদ্ধতি পরিত্যাগ করেছে।

ত্রুটিপূর্ণ ইভিএম ভোটে অনাস্থা আরও বাড়াবে। আমি আগের প্রশ্নেই প্রধান ত্রুটির কথা বলেছি। এই সিস্টেমে ২০-২৫ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে পারবে না। এর কারণ হচ্ছে সবার আঙুলের ছাপ এখানে কাজ করবে না। আবার প্রচুর সময় লাগবে। দিনের আলো থাকবে না। অনেকে ভোট না দিয়ে ফিরে যাবে।

দৈনিক বাঙলার জাগরণ নিউজ : ত্রুটির কথা বলছেন?

এম সাখাওয়াত হোসেন: এই পদ্ধতির প্রধানতম ত্রুটি হচ্ছে পুনরায় ভোট গণনায় অপারগতা। এদেশে ভোট গণনা নিয়েই অধিকাংশ মামলা হয়। সাধারণত প্রার্থীরা এ বিষয় নিয়েই চ্যালেঞ্জ করেন। আদালত এই অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এবং ভোট পুনরায় গণনার সুযোগ দেন। কিন্তু ইভিএমের ভোট নিয়ে যদি কেউ চ্যালেঞ্জ করে, তাহলে তখন কী হবে? এখানে তো ভোট পুনরায় গণনার কোনো সুযোগ নেই। কয়জন জাল ভোট দিয়েছে, তার কোনো হিসাব দেখাতে পারবে না। একবার বাটনে চাপ দিলেই ভোট হয়ে গেলো। কে ভোট দিলো তার তো কোনো প্রমাণ থাকছে না। ব্যালট হলে বাক্স খুলে ফের গণনা করা সম্ভব।

ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হতেই পারে। কিন্তু তার আগে ভোট সুষ্ঠু হওয়ার যেসব শর্ত রয়েছে, তা তো মানতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে, ভোট সংস্কৃতিতে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে, সেখান থেকে কেউ সুষ্ঠু ভোট প্রত্যাশা করতে পারে না। আর ভোটের পরিবেশ না দাঁড়ালে ইভিএম কোনো সুষ্ঠু ফলাফল দেবে না। এই অসম্পূর্ণ সিস্টেম নিয়ে আপনি নির্বাচনের বড় একটি অংশতে প্রয়োগ করতে পারেন না।

তারা আসলে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তার জবাব তারাই ভালো দিতে পারবেন।

দৈনিক বাঙলার জাগরণ নিউজ : ইভিএম পদ্ধতিতে যদি যেতেই হয়, তাহলে ৩শ আসনে না যাওয়ার কী কারণ থাকতে পারে? এম সাখাওয়াত হোসেন: ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) নেই। আমরা নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা সম্পর্কে অবগত। সাধারণ মানুষও অবগত।

দৈনিক বাঙলার জাগরণ নিউজ : বিরোধীপক্ষ অভিযোগ করছে সরকারি দলের জয় নিশ্চিত করতেই ১৫০ আসনে ইভিএম সিস্টেম, যা ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার মতো আরেকটি কৌশল।

এম সাখাওয়াত হোসেন: এটি রাজনৈতিক অভিযোগ। এমন অভিযোগের ব্যাখ্যা রাজনীতিকরাই দিতে পারবেন। আমি তো রাজনীতি করি না। আমি এই অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে পারবো না। কে কী বললো, তা নিয়েও আমি কিছু বলবো না।

আমি শুধু বলবো, ত্রুটিপূর্ণ ইভিএম ভোটে অনাস্থা আরও বাড়াবে। আমি আগের প্রশ্নেই প্রধান ত্রুটির কথা বলেছি। এই সিস্টেমে ২০-২৫ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে পারবে না। এর কারণ হচ্ছে সবার আঙুলের ছাপ এখানে কাজ করবে না। আবার প্রচুর সময় লাগবে। দিনের আলো থাকবে না। অনেকে ভোট না দিয়ে ফিরে যাবে। এর আগের ইভিএমে ৫০ শতাংশ ভোট পড়েনি। এই ত্রুটি প্রমাণিত। মানুষ ভোট দিতে পারেনি। শহর অঞ্চলেই এমন হয়েছে। তাহলে গ্রামাঞ্চলের কথা চিন্তা করেন। এই বাস্তবতা তো আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন না।

আপনি এই ত্রুটিগুলো নিয়েই আলোচনা করেন। রাজনৈতিক কৌশলের ব্যাখ্যা রাজনৈতিকভাবেই দিক। আমি যেসব ত্রুটির কথা বললাম, তা মারাত্মক। এই ত্রুটি রেখে কেউ ইভিএম ব্যবহার করতে পারে না।

দৈনিক বাঙলার জাগরণ নিউজ : তাহলে নির্বাচন কমিশন আসলে কী করতে যাচ্ছে?

এম সাখাওয়াত হোসেন: এটি আমি বলতে পারবো না। ইভিএম শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ। চূড়ান্ত প্রয়োগে কী হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। মানুষ আসলে এসবে আস্থা রাখতে পারছে না। সমস্যা আরও বাড়ছে, এটি অন্তত বলা যেতেই পারে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: