শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন

অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে: প্রধান বিচারপতি

জেলা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ : অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বলেছেন, স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ ও চর্চা করতে হবে।

শনিবার (১ জুন) দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বাবার বাড়ি মোহনগঞ্জ হলেও ময়মনসিংহ শহরেই আমার জন্ম। আনন্দমোহন কলেজে পড়াশোনা করেছি। এ শহরের অনেক স্মৃতি আছে। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর ময়মনসিংহের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। অসাম্প্রদায়িকতার অনন্য নজির ময়মনসিংহ।

প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রত্যেক নাগরিকেরই দেশে আইনের আশ্রয় লাভ ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার আছে। মানুষের সেই অধিকার নিশ্চিত করতে জেলা জজগণ সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন তিনি।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুল হকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালামের সঞ্চালনায় সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করতেন। এই অসাম্প্রদায়িক চেতনা আমরা সবাই ধারণ করি। আসুন বাংলাদেশকে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করি। সামরিক শাসন একটি অসাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থা। আমরা বিচার বিভাগ সেই অসাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলেছি। সুপ্রীমকোর্ট পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের দুর্বলতা আছে, বিচার বিভাগেরও দুর্বলতা আছে। আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে গিয়ে অন্তত বারোজন বিচারক বিব্রতবোধ করেছি। এই বিচার বিভাগ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আলবদর, আলসামসদের বিচার করেছে, বিচার এখনো চলমান রয়েছে। স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিষয়টি আমাদের মাথায় থাকতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারবে।

আইনজীবীদের উদ্দ্যেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, একজন আইনজীবীর ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই শুধু আাদলতে সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না বরং একজন সুনাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতিটি মানুষের জন্য ন্যায়বিচার ভিত্তিক জীবনমান উপহার দেওয়া একজন আইনজীবীর দায়িত্ব। বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে এই ভেবে যে, আমরা সৎ থাকতে পারছি কীনা। আমার প্রত্যশা থাকবে, আপনারা প্রতিনিয়ত নিজেকে আত্মজিজ্ঞাসার সম্মুখিন করবেন। আমি দায়িত্বভার গ্রহণের আমি বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশন, বিচার সেবাপ্রাপ্তি সহজীকরণ তথা বিচার বিভাগের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যারা আইনের গবেষণা করতে চান, তাদের জন্য সুপ্রীমকোর্ট থেকে একটি রিচার্স অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট খুলেছি। সেখাকে আইনজীবী ও বিচারকগণ গবেষণার সুযোগ পাবেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, রেজিস্টার মশিউর রহমান, সিনিয়র অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, অ্যাডভোকেট এ এইচ এম খালেকুজ্জামান, অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট কবির উদ্দিন ভূইয়া, অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন খান, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা ও শেরপুর জেলা ও দায়রা জজ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণসহ বিচারক ও সিনিয়র আইনজীবীগণ উপস্থিত ছিলেন।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: