শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম
চৌদ্দগ্রামে বৃষ্টির প্রার্থনায় ইসতিসকার নামাজ, প্রখর রোদে মুসল্লিদের কান্না হাতিয়ায় সৈকতে দেখা মিলল ‘ইয়েলো বেলিড সি স্নেক’ ফসলি জমি কেটে মাটির ব্যবসা: ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই লাখ টাকা জরিমানা মাটি ব্যবসায়ীর লাখ টাকা জরিমানা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদে কুমিল্লার মফিজুর রহমান বাবলু সিনেমা হলে দেখা যাবে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের গল্প দেশে পৌঁছেছেন টাইগারদের নতুন কোচ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়া : ডাব্লিউএমও নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল জাতি হিসেবে আমাদের সকল প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচন করে গেছে মুজিবনগর সরকার-ধর্মমন্ত্রী

কঠোর হচ্ছে সরকার বিদেশী কারিকুলামে চলা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পরিচালনায়

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে বিদেশী কারিকুলামে চলা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পরিচালনায় বিধিনিষেধের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কারণ সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও আইনের অভাবে ওসব প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কার্যকলাপ চালাচ্ছে। কিন্তু এখন ওই সকল প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কঠোর হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।এই লক্ষ্যে শিক্ষা অধিদফতর ও শিক্ষা বোর্ড ওই সকল প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন,আয়-ব্যয়ের হিসাব থেকে শুরু করে সকল কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

ইতিমধ্যেই আয়-ব্যয়ের হিসাব অভিভাবকদের দেয়ার আদেশসহ প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি বৈধ কাঠামোর মধ্যে আনার লক্ষ্যে একগুচ্ছ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এতোদিন ব্যক্তিগত বা পারিবারিকভাবে চললেও এখন থেকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে কর্মরত ইংরেজি মাধ্যমের অনেক বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন নেই। সেগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত হতে হয়। আইন অনুসারে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় এবং রেজিস্ট্রেশন করার সময় তাদের বিভিন্ন ধরনের ফি কতো সেটা অভিভাবকদের জানাতে হয়। কিন্তু ওসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের ফি নিয়ে মাঝে মাঝে অভিযোগ পাওয়া যায়।

অবশ্য বেসরকারি বিদ্যালয়ে সহপাঠ কার্যক্রম পরিচালনা, কোনো বিশেষ সুবিধা এবং উন্নতমানের যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি সুবিধা ব্যবহারের জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছ হতে ফি আদায় করা যাবে। তবে সেক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত তার পূর্ণাঙ্গ ব্যয় বিবরণী অভিভাবকদের লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।আর প্রতিষ্ঠানের সাময়িক নিবন্ধন আবেদন ফরমে প্রতি মাসে বা বছরে শ্রেণীভেদে আদায় করা টিউশন ফি, ভর্তি ফি, খেলাধুলা ফি, গ্রন্থাগার ফি, টিফিন ফি, মুদ্রণ ফি এবং অন্যান্য ফি’র পরিমাণ ও বিবরণী উল্লেখ করার নিয়ম রয়েছে।

এ অবস্থায় বিদেশী কারিকুলামে পরিচালিত বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালার বিধি ১৯ (৩) বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ধরনের নিবন্ধিত এবং নিবন্ধনহীন কতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার তালিকাও চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে একটি বৈধ কাঠামোর মধ্যে আনার লক্ষ্যে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন খাতে কত টাকা ফি আদায় করছে তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণী অভিভাবকদের লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ও মাউশির অধীন উপ-পরিচালকদের চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওই আদেশ ইতিমধ্যেই কর্মকর্তারা হাতে পেয়েছেন।

বিদেশী কারিকুলামে পরিচালিত বেসরকারি বিদ্যালয়ের নিবন্ধন নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত শিরোনামের ওই চিঠিতে বিদেশী কারিকুলামে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ইংরেজী মাধ্যমের পাঠ্যসূচি পরিচালিত ‘বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা, ২০১৭’ এর ১৯ (৩) ধারাটি মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য একগুচ্ছ নির্দেশনাও জারি করা করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করা, হিসাব বিবরণী তৈরি, ব্যয় বিবরণী অভিভাবকদের দেয়া, নিয়মিত কমিটি গঠন ও ইআইআইএন নম্বর সংগ্রহ স্কুলগুলোকে করতে বলা।

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর অধ্যক্ষ এবং প্রধান শিক্ষকদের ওসব নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। শিক্ষা বোর্ড থেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে দেয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নীতিমালা ২০১৭ অনুসারে করে সকল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু কিছু স্কুল এখনো নিবন্ধন করছে না। তাদের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধন ফি জমা দিয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে।

তাছাড়া ইতিমধ্যে নিবন্ধনকৃত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর ইআইআইএন নাম্বার ঢাকা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে জানিয়ে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইআইআইএন নাম্বার সংগ্রহ করে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে বোর্ড থেকে লগইন পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো বোর্ডের অনুমতি ছাড়া গঠন করা কমিটি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তাই নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের আবেদন করতে বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর টিউশন ফি, খেলাধুলা ফিসহ অন্যান্য ফিয়ের বিবরণী নিবন্ধন কর্তৃপক্ষকে জানানো বিধান থাকলেও তা করা হচ্ছে না। তাছাড়া বিশেষ যন্ত্রপাতি বা সহপাঠ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নেয়া ব্যয়ের হিসাব অভিভাবকদের দেয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এখন শিক্ষা বোর্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিশ্চিত করতে চায়। শিগগিরই এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে। মূলত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নিয়মের স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাধারণ স্কুলগুলোর মতো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলেরও ম্যানেজিং কমিটি থাকতে হবে। আর ম্যানেজিং কমিটিকে ব্যয় বিবরণী তৈরি করে প্রতি অর্থবছরের শেষে হিসাব নিরীক্ষা সম্পাদন করে রিপোর্ট নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে। কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরিচালিত হবে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এর মাধ্যমে কাজের গতিশীলতার পাশাপাশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে এতোদিন চললেও এখন থেকে একটি নিয়মের মধ্যে আনার লক্ষ্যেই কাজ করছে। যেখানে ইচ্ছেমতো বেতন ফি আদায় থেকে শুরু করে আয় ব্যয়ের সকল কার্যক্রম একটি শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরামের আহ্বায়ক এ কে এম আশরাফুল হক জানা, ইংরেজি মাধ্যমের কোনো প্রতিষ্ঠানই তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব অভিভাবকদের জানায় না। এটা অভিভাবকদের দাবির মধ্যে আছে। কোন খাতে কত ফি নেয়া হচ্ছে এবং কীভাবে তা খরচ করা হচ্ছে অভিভাবকদের তা জানানো হোক।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জি এম নিজাম উদ্দিন জানান, অনেক প্রতিষ্ঠানই আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয় না। তবে কেউ কেউ বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরে। যদি স্কুলগুলো মনে করে এটা প্রকাশ করা অসুবিধার, তাহলে সরকারের সঙ্গে বসতে হবে। আর যদি সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় না আসা যায়, তাহলে সরকারের যে সিদ্ধান্ত তা পালন করতেই হবে। অনেক প্রতিষ্ঠানই অভ্যন্তরীণ বিষয় সবাইকে জানাতে চায় না।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: