বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৯ অপরাহ্ন

অগ্রিম আয়করের কারণে লোকসান প্রথমবারের মতো লভ্যাংশ দেবে না হাইডেলবার্গ

সিমেন্টের অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর সমন্বয়ের সুযোগ না থাকায় ২০১৯ হিসাব বছরে লোকসান গুনতে হয়েছে সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডকে। যদিও আগের বছরের তুলনায় ২০১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে। এর ফলে প্রথমবারের মতো সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে হাইডেলবার্গ ১ হাজার ১৯৮ কোটি টাকার সিমেন্ট বিক্রি করেছে, যেখানে এর আগের বছর বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকার। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির গ্রস মুনাফা হয়েছে ১২২ কোটি টাকা, যা এর আগের বছরে ছিল ১৯৩ কোটি টাকা। কর পরিশোধের পর ২০১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির ১৮ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে, যেখানে এর আগের বছরে মুনাফা ছিল ৮০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৩০ পয়সা, যেখানে আগের বছর ইপিএস ছিল ১৪ টাকা ৩৩ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৭১ টাকা ৮৮ পয়সা, যা এর আগের বছরে ছিল ৮২ টাকা ৬৮ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট পরিচালন নগদ প্রবাহ (এনওসিএফএস) হয়েছে ৪ টাকা ৬৫ পয়সা, যা আগের বছরে ছিল ১১ টাকা ৩১ পয়সা। আগামী ২৪ জুন বেলা ১১টায় কোম্পানিটির নারায়ণগঞ্জের কারখানায় বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুুষ্ঠিত হবে। বিনিয়োগকারী বাছাইয়ের জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ মে। ২০১৮ হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৭৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এর আগে ২০১৭ সালে ১৫০ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৩০০ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৩০০ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ৩৮০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।

জানতে চাইলে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) জসিমউদ্দিন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, মূলত অগ্রীম আয়করের কারণেই আমাদের ২০১৯ সালে লোকসান হয়েছে। যদিও গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর অগ্রীম আয়করের হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু এটিও আমাদের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে যায়। কারণ আগে অগ্রীম আয়কর পরবর্তী সময়ে সমন্বয়ের সুযোগ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এটি চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানির ওপর ৫ শতাংশ হারে অগ্রীম আয়কর থাকলেও সেটি ন্যূনতম করদায় হিসেবে বিবেচিত হতো না। এর ফলে করযোগ্য আয়ের ওপর প্রদেয় করের সঙ্গে আমদানি স্তরে প্রদত্ত অগ্রীম আয়কর সমন্বয়ের সুযোগ ছিল। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে অর্থবিলে সংশোধনীর মাধ্যমে সিমেন্ট উৎপাদনে ব্যবহূত কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আদায়কৃত ৫ শতাংশ অগ্রীম আয়কর ন্যূনতম করদায় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে এ প্রদত্ত কর চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচিত হবে। যদিও পরবর্তী সময়ে সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এসআরও জারির মাধ্যমে সিমেন্ট খাতের অগ্রীম আয়কর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করে। তবে এতে করভার কিছুটা কমলেও চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচনার কারণে এখনো বাড়তি কর দিতে হচ্ছে সিমেন্ট উৎপাদকদের।

এদিকে, চলতি ২০২০ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) হাইডেলবার্গ সিমেন্টের বিক্রি বাড়লেও গ্রস মুনাফা মার্জিন কমার পাশাপাশি সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে আগের বছরের তুলনায় কর-পরবর্তী মুনাফা কমে গেছে। প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ৩৮২ কোটি টাকা, যেখানে এর আগের বছরে বিক্রি হয়েছিল ৩৬১ কোটি টাকা। আর আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৪ কোটি টাকা, যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ১৯ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৭৭ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ টাকা ৪২ পয়সা।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: