মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৯ অপরাহ্ন

বৃষ্টির বাধাতেও চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড়

বাঙলার জাগরণ ডেস্ক :  ঈদের ছুটিতে আগারগাঁও থেকে চার বন্ধু এসেছিলেন চিড়িয়াখানায় ঘুরতে। সারাদিন ঘোরাফেরা শেষে ঘটে বিপত্তি। হারিয়ে যায় হাসান নামে এক বন্ধু। ঘণ্টাব্যাপী খোঁজাখুঁজি শেষে অন্য বন্ধুরা আসে তথ্য কেন্দ্রে।

মঙ্গলবার (৩ মে) ঈদের দিন দুপুরের পর চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীর ভিড় বাড়তে থাকে। শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে চিড়িয়াখানা। ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়ারও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে।

মিরাজ নামে এক বন্ধু জানান, হাসানের কাছে মোবাইল নেই। জিরাফের খাঁচার কাছে যাওয়ার পর থেকে তার কোনো পাত্তা পাচ্ছি না। এক ঘণ্টা খুঁজেছি। না পেয়ে তথ্য কেন্দ্রে এলাম।

মোতালেব ও আলী হোসেন নামে অপর বন্ধুরা জানান, তারা ৬০ ফিটের একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ঈদের দিন চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছিলেন। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে তাদের বন্ধু হারিয়ে যান।

অতিমারীর চোখ রাঙানি পেরিয়ে দুই বছর পর এসেছে আনন্দের ঈদ। সকাল ৯টা থেকে চিড়িয়াখানা খুললেও বৃষ্টির কারণে দুপুরের পর চিড়িয়াখানায় ভিড় বাড়তে শুরু করে।

চিড়িয়াখানা সংশ্লিষ্টরা জানান, সকাল ৯টায় চিড়িয়াখানা খোলা হয়। বৃষ্টির কারণে এবার লোকসমাগম কম। তবে বিকেলের দিকে লোকসংখ্যা বেড়েছে। অন্যান্য সময়ে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীর সংখ্যা থাকে ৮-১০ হাজার। তবে ঈদের দিন এ সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

বাঘ, সিংহ, বানরের খাঁচার সামনে ভিড় বেশি।

চিড়িয়ানায় ঢুকতে হাতের বাঁ দিকে হরিণের খাঁচা। হরিণের বাচ্চার ছোটাছুটি মোবাইল ফোনে বন্দি করেছে দর্শনার্থীরা। আরেকটু এগিয়ে গেলেই বানরের খাঁচা। এ খাঁচার সামনে ছিল শিশুদের ভিড়। মানা থাকলেও অনেককে বানরের উদ্দেশ্যে বাদাম ছুড়তে দেখা গেছে।

বৃষ্টির বাধাতেও চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড়

ময়ূরের খাঁচার সামনেও ছিল দর্শনার্থীর ভিড়। ময়ূরের পাখা মেলা দৃশ্য উচ্ছ্বাসিত করে দর্শকদের। আফ্রিকান লায়নের খাঁচার নিরাপত্তা বেড়া টপকে খাঁচার কাছে গিয়ে অনেককে ছবি তুলতে দেখা গেছে। এছাড়া জিরাফ, ইমু পাখির খাঁচার সামনেও ছিল ভিড়।

চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায়, পরিবার-পরিজন ও আত্মীয় নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ এসেছেন। যারা ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি, শিশুদের বিভিন্ন প্রাণীর সঙ্গে পরিচয় করাতে এসেছেন। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন। সবার গায়ে ছিল নতুন পোষাক।

ঈদ বিনোদনের কথা মাথায় রেখেই চিড়িয়াখানায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি প্রস্তুতি। টিকিট কাউন্টার, হাঁটার পথ, বসার জায়গা, খাবার স্থানসহ সব জায়গাই পরিষ্কার করে রঙ করা হয়েছে। তবে সকালে ঝড়ের কারণে একাধিক স্থানে ভাঙা গাছপালা চোখে পড়ে।

বাস চালক রাব্বি মিয়া স্ত্রী, কন্যা ও ভাতিজা নিয়ে এসেছেন সকালে। দুপুরে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফিরছিলেন। তিনি বলেন, বাচ্চারা ক্লান্ত হয়ে গেছে। বাঘ, সিংহ, হরিণ সব দেখেছে। অনেকদিন পর বেড়াতে পেরে খুব ভালো লাগছে।

ব্যবসায়ী মশিউর রহমান বলেন, আমার পরিবার ও পাশের ফ্ল্যাটের আরেক পরিবার নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে এসেছি। গরম থাকবে ভেবেছিলাম। কিন্তু সকাল বেলা বৃষ্টি হওয়ায় এখন পর্যন্ত ভালো লাগছে।

জাতীয় চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. মাহফুজুল হক বলেন, সকালে বৃষ্টির জন্য উপস্থিতি কম ছিল। কিন্তু দুপুরের পর চিড়িয়াখানা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। সুশৃঙ্খল রাখার জন্য অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। হকার মুক্ত করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। ভেতরে ৪টা হাত ধোয়া ও খাবার পানির শেডের ব্যবস্থা করেছি।

বৃষ্টির বাধাতেও চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড়

তিনি বলেন, ভেঙে যাওয়া গাছের ডালপালা শিগগির সরানোর ব্যবস্থা করেছি। দর্শনার্থীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেই দিকে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছি।

হারিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মাহফুজুল হক বলেন, চিড়িয়াখানা থেকে হারানোর সম্ভাবনা নেই। কারণ এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা একটাই। কেউ দলছুট হতে পারে। সেক্ষেত্রে তথ্য কেন্দ্রে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, ১৮৬ একর জায়গা জুড়ে চিড়িয়াখানা। তবে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে অনেকেই হারিয়ে যায়। সেজন্য পুরো চিড়িয়াখানা জুড়ে ১৬টি মাইক বসানো হয়েছে।

১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় চিড়িয়াখানায় ৩৮ প্রজাতির ৩৮টি প্রাণী, ১৯ প্রজাতির ২৭১টি বড় তৃণভোজী প্রাণী ও ১৮ প্রজাতির ১৯৮টি ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। আরও আছে ১০ প্রজাতির ৭২টি সরীসৃপ, ৫৬ প্রজাতির এক হাজার ১৬২টি পাখি ও অ্যাকুরিয়ামে রক্ষিত ১৩৬টি প্রজাতির দুই হাজার ৬২৭টি মাছজাতীয় প্রাণী। ১৩৭টি খাঁচায় এসব প্রাণী রাখা হয়েছে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: