শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম
চৌদ্দগ্রামে বৃষ্টির প্রার্থনায় ইসতিসকার নামাজ, প্রখর রোদে মুসল্লিদের কান্না হাতিয়ায় সৈকতে দেখা মিলল ‘ইয়েলো বেলিড সি স্নেক’ ফসলি জমি কেটে মাটির ব্যবসা: ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই লাখ টাকা জরিমানা মাটি ব্যবসায়ীর লাখ টাকা জরিমানা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদে কুমিল্লার মফিজুর রহমান বাবলু সিনেমা হলে দেখা যাবে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের গল্প দেশে পৌঁছেছেন টাইগারদের নতুন কোচ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়া : ডাব্লিউএমও নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল জাতি হিসেবে আমাদের সকল প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচন করে গেছে মুজিবনগর সরকার-ধর্মমন্ত্রী

সাজা থেকে অব্যাহতি পেলেন নিরপরাধ কামরুল

নিউজ ডেস্ক :: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজার দায় থেকে অব্যাহতি পেলেন নিরপরাধ মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। ১৮ বছর আগের নম্বর জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের ভুল তদন্তে কারাদণ্ড হয়েছিল কামরুল ইসলামের। এই সাজা বাতিল করে তাকে অব্যাহতি দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ রায় দেন। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতের আদেশের বিষয় সাংবাদিকদের জানান।

তিনি বলেন, রায়ে কামরুলের ক্ষেত্রে সাজা পরোয়ানা (কারাদন্ড ও অর্থদন্ড) প্রত্যাহার করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই ভুল খতিয়ে দেখে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

তিনি জানান, মামলাটি নতুন করে তদন্ত করতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ে এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করলে তা দুদককে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।

দুদকের আইনজীবী জানান, মামলার বাদী শহীদুল আলম এজাহারে অনিচ্ছাকৃত ভুলে অভিযুক্তের ক্ষেত্রে পশ্চিম রাজারামপুরের পরিবর্তে পূর্ব রাজারামপুর এবং তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাহফুজ ইকবাল অভিযোগপত্রে ভুলবশত অভিযুক্তের ক্ষেত্রে পশ্চিম রাজারামপুরের পরিবর্তে পূর্ব রাজারামপুর উল্লেখ করেন। আদালত আজ আদেশে বিষয়টি খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্বে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

আদালতে কামরুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী বিজয়া বড়ুয়া। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।

আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী জানান, এর আগে দেয়া রুল যথাযথ (এ্যাবসিলিউট) ঘোষণা করে হাইকোর্ট আজ রায় দিয়েছেন। সাজা পরোয়ানার ভিত্তিতে মোহাম্মদ কামরুলকে হয়রানি ও গ্রেফতারের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। মোহাম্মদ কামরুলকে জড়িয়ে দেয়া সাজার রায় বাতিল করা হয়েছে। ফলে নিরপরাধ কামরুল এই মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পেলেন। দুদক আইনজীবী বলেন, মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রে ‘অনিচ্ছাকৃত’ অভিযুক্তের ক্ষেত্রে পশ্চিম রাজারামপুরের পরিবর্তে পূর্ব রাজারামপুর উল্লেখ করা হয়।

ঠিকানার ভুলে দুদকের মামলায় কারাদন্ড নিয়ে নিরপরাধ মোহাম্মদ কামরুল দিশেহারা হয়ে পড়েন। তবে তাকে কারাভোগ করতে হয়নি। এ অবস্থায় প্রতিকার চেয়ে গত বছর হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন তিনি।

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, এসএসসির ভুয়া নম্বর ও প্রশংসাপত্র তৈরি করে মাইজদী পাবলিক কলেজে একাদশ শ্রেণিতে (১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তির অভিযোগে কামরুল ইসলামের (ঠিকানা: পূর্ব রাজারামপুর) নামে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে সুধারাম থানায় মামলা করে। জব্দ করা ভর্তির আবেদনপত্রে কামরুলের জন্মতারিখ ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি ও গ্রাম পশ্চিম রাজারামপুর উল্লেখ রয়েছে।

তদন্ত শেষে প্রায় ১০ বছর পর দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর ওই মামলায় অভিযোগপত্র দেন, যেখানে কামরুল ইসলামের গ্রামের ঠিকানা পূর্ব রাজারামপুর উল্লেখ করা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল আদালতে পুলিশের (পিঅ্যান্ডএ) এক প্রতিবেদনে এক সাক্ষীর বরাত দিয়ে বলা হয়, আসামি মো. কামরুল ইসলাম, বাবা আবুল খায়ের, গ্রাম পূর্ব রাজারামপুর ঠিকানা সঠিক নয়। প্রকৃত আসামি কামরুল ইসলাম, বাবা আবুল খায়ের, গ্রাম পশ্চিম রাজারামপুর, যিনি দেশের বাইরে আছেন। এই মামলায় নোয়াখালীর বিশেষ জজ আদালত ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর রায় দেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কামরুল ইসলামকে (পিতা: আবুল খায়ের, গ্রাম: পূর্ব রাজারামপুর) দোষী সাব্যস্ত করে তিনটি ধারায় ৫ বছর করে (১৫ বছর) সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয় রায়ে। তবে সব কারাদণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে বলা হয়।

এরপর ওই মামলায় সাজা পরোয়ানার ভিত্তিতে হয়রানি ও গ্রেফতার না করতে গত বছরের অক্টোবরে মোহাম্মদ কামরুল (পূর্ব রাজারামপুর) রিট করেন। এতে যুক্ত এক প্রত্যয়নপত্রে দেখা যায়, তিনি বর্তমানে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত। তাঁর সার্ভিস বুক ও এসএসসি পাসের সনদ অনুসারে তিনি ১৯৯০ সালের ১৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। অর্থাৎ মামলায় উল্লেখিত শিক্ষাবর্ষ (১৯৯৮-৯৯) সময়ে তার বয়স ছিল ৮ বছর। নোয়াখালীর হরিনাথপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে মোহাম্মদ কামরুল এসএসসি পাস করেন বলে ওই প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ রয়েছে।

রিটটির প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্ট কামরুল বিষয়ে রুলসহ আদেশ দেন। ওই সাজাপরোয়ানার ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য মোহাম্মদ কামরুলকে কোনো ধরনের হয়রানি ও গ্রেফতার না করতে নির্দেশ দেয়া হয়। মোহাম্মদ কামরুলকে শনাক্তকরণ বিষয়ে দুদককে চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দুদক ভুল স্বীকার করে আদালতে বক্তব্যও দাখিল করে।
বিষয়টি নিয়ে আজ উচ্চ আদালতের রায় এলো।

এসি


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: