বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ব্যবস্থা নিন

কুয়াকাটায় জেলেদের জালে আটকা পড়ে যেভাবে ডলফিনসহ অন্যান্য জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রাণ হারাচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বুধবারের সমকালে প্রকাশ, কয়েক দিন ধরে কুয়াকাটা সৈকতে উল্লেখযোগ্য জলজ প্রাণী মৃত পাওয়া গেছে। এই চিত্র স্বভাবতই সচেতন নাগরিকদের উৎকণ্ঠিত করে তুলেছে। আমরা জানি, জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী তথা তিমি, ডলফিন, শুশুক ও পরপয়েসের অভয়াশ্রম কুয়াকাটা সৈকতের আন্ধারমানিক মোহনা ও রামনাবাদ। কিন্তু আবাসস্থল নিরাপদ ও স্থায়ী না হওয়ায় প্রতি বছর বিশেষত বর্ষা মৌসুমে কুয়াকাটার সমুদ্র চ্যানেলে জেলেদের জালে এবং হাজারি বড়শিতে আটকা পড়ে মারা পড়ছে এসব জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী।

সমকালের প্রতিবেদনে এসেছে, চলতি বছর কুয়াকাটা সৈকতে বিভিন্ন প্রজাতির যে আটটি ডলফিনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, এগুলোর প্রতিটির মুখে জাল প্যাঁচানো ছিল। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন এবং ঠোঁট রক্তাক্ত থাকার মাধ্যমে এটা প্রমাণ হয়, সেগুলো জালে পড়ে কিংবা বড়শিতেই মারা গেছে। এভাবে ডলফিন হত্যা দুঃখজনক। অনেক দিন ধরে ডলফিন সুরক্ষায় আন্দোলন আমরা দেখে আসছি। বিশেষ করে শুশুক বা গাঙ্গেয় প্রজাতির ডলফিন পৃথিবীতে বিরল এক প্রজাতি হিসেবে রূপ নিচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে এখানে বহু প্রজাতির বিরল ডলফিন রয়েছে, যেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। বস্তুত নদী বা সাগরের যেসব এলাকায় মাছের আধিক্য, সেখানেই ডলফিনের বিচরণ বেশি। আবার মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করার কারণে জেলেরাও সেসব এলাকায় বেশি জাল ফেলে। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ এলাকায় জেলেদের অবাধ মাছ ধরা বন্ধ রাখতেই হবে।

প্রশাসনকে এটা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জেলেরা ওইসব এলাকায় ডলফিনের জন্য ক্ষতিকর এমন মাছ ধরার সরঞ্জাম ব্যবহার না করে। দেখা যায়, জেলেরা সাগরে জাল ফেলে তিন-চার ঘণ্টা অপেক্ষা করে জাল তোলে। অনেক সময় বোঝার কোনো উপায় থাকে না, জালে কিছু আটকে আছে কিনা। জাল তুললে দেখা যায়, ডলফিন জালে আটকে মরে আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি ডলফিন জালে আটকে গিয়ে ১০ থেকে ২০ মিনিট শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারলে মারা যায়। আমরা মনে করি, সমুদ্রে ডলফিনসহ সব ধরনের জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী সুরক্ষায় জেলেদের করণীয় সর্বাধিক। একদিকে জেলেদের সচেতনতা জরুরি,একই সঙ্গে বন ও মৎস্য বিভাগের দায়িত্বও কম নয়। ডলফিন সুরক্ষায় তাদের তদারকি বাড়াতে হবে। আইনে ডলফিন শিকার ও বিক্রি দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও এসব প্রাণী হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। সমুদ্রের পাশাপাশি নদীতে বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকায়ও ডলফিন হুমকির মুখে। যদিও সুন্দরবনের ডলফিন বাঁচাতে ইতোমধ্যে বন বিভাগের বিশেষ প্রকল্পে সুফল এসেছে বলে প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়। তারপরও স্বস্তিতে থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এমনকি চট্টগ্রামের হালদা নদীতেও ডলফিন হত্যার খবর আসে প্রতি বছর।

সেখানে গত বছর ডলফিন হত্যার ঘটনায় প্রথমবারের মতো করা হয় এক মামলা। যার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন আদালতকে ৯টি পদক্ষেপের কথা লিখিতভাবে জানায়। নদীতে দূষণ, মাত্রাতিরিক্ত শিকার, পাচার, আবাসস্থল বিনষ্ট, মাত্রাতিরিক্ত যান চলাচল ও বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরার কারণে ডলফিন হুমকির মুখে পড়ে। কিন্তু সমুদ্রে জাল দিয়ে মাছ ধরার পাশাপাশি জেলেরা পলিথিন বা ছেঁড়া জাল ফেলে দেওয়ায় তাতে আটকেও জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটতে পারে। তাই এখনই জেলেদের সচেতন করে সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি সমুদ্রের ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্দিষ্ট এলাকায় সৈকতে স্থায়ীভাবে জাল পাতা বন্ধ ও অপসারণ করতে হবে। প্রয়োজনে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যেতে পারে। সংশ্নিষ্ট এলাকায় নিয়মিত টহলের জন্য বন বিভাগের নৌযান ও জনবল বাড়ানোর পাশাপশি স্থানীয়দেরও ডলফিন সুরক্ষায় সচেতন করা দরকার। যে কোনো উপায়ে এসব জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। না হলে জীববৈচিত্র্যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে এবং বিপন্ন হবে প্রতিবেশ।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: