মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম
ক্রীড়াবিদরা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে- ধর্মমন্ত্রী উজিরপুরে সৎসঙ্গ ফাউন্ডেশনের সেমিনার অনুষ্ঠিত শিবালয়ে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিবাড়ি খেলা অনুষ্ঠিত লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে ৫ জনের মৃত্যু : আসামিদের তিন দিনের রিমান্ড ঈদের দিনে সদরঘাটে দুর্ঘটনায় ঝরল ৫ প্রাণ সৌদির সাথে মিল রেখে নোয়াখালীর ৪ গ্রামে ঈদ উদযাপন নোয়াখালীতে দুর্বৃত্তরা ঘর আগুনে পুড়ে দিয়েছে, ১০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি সুবর্ণচরে মানব কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে হতদরিদ্র ও অসহায়দের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ  ঢাকা আরিচা মহাসড়কের মসুরিয়ায় নামে এক অজ্ঞাত ব্যাক্তি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চাটখিলে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ

রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ব্যক্তির ভোগে

বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পত্তি বেহাতের ঘটনা পুরোনো এবং এ নিয়ে নানা সময়ে আলোচনা হলেও দখল থেমে নেই। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশ- নারায়ণগঞ্জে প্রভাবশালীদের দখলে রেলওয়ের সম্পত্তি। সেখানে সোনারগাঁয়ের মদনগঞ্জ-নরসিংদী রেল সড়কে রেলওয়ের প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। মদনপুর থেকে প্রভাকরদী পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকায় জমিগুলো স্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা প্রভাব খাটিয়ে দখল করে রেখেছেন। বস্তুত বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রভাবশালীদের দ্বারা রেলের সম্পত্তি দেশের সর্বত্র দখল হয়ে আছে। এ বছরের মাঝামাঝিতে রেলের সৈয়দপুর অঞ্চলের সাড়ে তিনশ একর জমি দখলের খবর প্রকাশ পায়। তা ছাড়া চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় রেলের সম্পত্তি দখলের খবর ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমে আমরা দেখেছি। আমরা জানি, ব্রিটিশ আমল থেকেই রেলওয়ে জনপ্রিয় পরিবহন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অধিকাংশ ভূ-সম্পত্তিই বলা চলে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। তা ছাড়া অধিগ্রহণ কিংবা অন্য কোনোভাবেও দেশব্যাপী রেলওয়ে সম্পত্তি লাভ করে। এসব থেকে এক সময় রেলওয়ের ভালো আয়ও হতো। বিভিন্ন অসাধুচক্র রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি দখল করে আছে। এসব জমি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহূত হলেও বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এসব জমি দখল করে কোথাও মার্কেট, কোথাও বাজার আবার কোথাও বস্তি করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। অনেক জায়গায় আবার রাজনৈতিক কার্যালয়ও আছে। বছরের পর বছর চলে গেলেও এসব জমি রেলওয়ে উদ্ধার করতে না পারার পেছনে বহুবিধ কারণ দেখছি আমরা। দখলকারীদের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ কারণেই অধিকাংশ সময় এসব সম্পত্তি দখলমুক্ত করা যায় না। তবে রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশেও জমি দখলের অভিযোগ আছে। তা ছাড়া জমি উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য বরাদ্দ ও জনবল উভয়ই কম।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৭৬ সালে রেলওয়েতে পৃথকভাবে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয় করে যে জনবল কাঠামো করা হয়, সে জনবল এখন নেই বললেই চলে। বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলে জনবলের অভাবে অধিকাংশ জমির ওপর রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণ নেই। রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ বেদখল হয়ে যাচ্ছে। অথচ সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা থেকেই রেল শত শত কোটি টাকা আয় করতে পারত। অনেকে রেলের জমি লিজ নিয়ে ব্যবহার করে। নিয়ম অনুযায়ী, কৃষিজমি লিজ নিয়ে শুধু কৃষি আবাদ করতে পারবেন। তা না করে সেখানে রাস্তা, বিপণি বিতান, পাকা কোনো স্থাপনা, মার্কেট নির্মাণ বা দেয়াল দিয়ে দখলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এগুলো করে থাকলে সবই অবৈধ দখলদার হিসেবে গণ্য হবে। সে হিসেবে সমকালের প্রতিবেদনে নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ থেকে নরসিংদী সড়কে রেলের বেহাত যে ভূমির কথা বলা আছে, সেখানে দখলদার সবাই অবৈধ হিসেবে দখলে আছে। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিবেদক নিশ্চিত করেছেন- কোনো শিল্প মালিককে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে।

ওই সড়কে কোনো শিল্প মালিক শ্রেণি পরিবর্তনের কোনো প্রকার অনুমতি নেননি বলে সমকালের প্রতিবেদক জানিয়েছেন। আমরা চাই, যেসব শিল্প মালিক অবৈধ দখলদার হয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছেন, তাদের বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিবহনের জন্য এখনও জনপ্রিয় মাধ্যম। দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর ব্যাপক লোকসান দিয়ে চলেছে। রেলের সম্পত্তি বেহাত, তেল চুরি, সেবার নিম্নমান, দিন দিন রেলের গতি কমাসহ নানা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সেবার মান উন্নয়ন ও লোকসান থেকে রেলকে বাঁচাতে ব্যবস্থাপনাগত সংস্কার জরুরি। তবে বেহাত হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারের মাধ্যমে রেলের লোকসান কমানো সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমরাও একমত। বছরের পর বছর ধরে এভাবে রেলের জায়গা-জমি অবৈধভাবে দখল, বিক্রি বা লিজ দেওয়ার ঘটনা চলতে পারে না। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি রেলওয়ের বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সরকার রেলের জমি উদ্ধার পক্ষ ঘোষণা করে সব অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করলে এর সুফল পাওয়া যেতে পারে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: