শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৩ অপরাহ্ন

গাজীপুর সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি

জেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর : গাজীপুর সদর সাব রেজিষ্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম এর ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এর আগে তিনি নোয়াখালী সদরের সাব রেজিষ্ট্রার ছিলন। সেখানেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, নামে-বেনামে ঢাকা-কুড়িগ্রামে রয়েছে তার বিপুল সম্পদ।

গাজীপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম রেকর্ড রুমের দায়িত্বে আছেন। একই সঙ্গে তিনি যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন ।

অফিস তথ্য মতে, যুগ্ম অফিসসহ গাজীপুর রেকর্ড রুমে দৈনিক ৪শ-৫শ নকলের আবেদন জমা পড়ে। সরকারি ছুটি বাদ দিলে মাসে আবেদন পড়ে আট হাজার থেকে ১১ হাজার। নকলগুলো থেকে গড়ে ৮৫০ টাকা করে মাসে আদায়কৃত ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় পৌনে এক কোটি টাকার বেশি।

স্বাক্ষর বাবদ নকলের সংখ্যা গুণে ওই টাকার বড় অংশ নেন সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম। বাকি টাকা রেকর্ড কিপারসহ অন্যরা পদ অনুযায়ী ভাগ পান।

সাব রেজিষ্ট্রার জাহাঙ্গীর এর দপ্তরে দলিল রেজিস্ট্রেশন করার ক্ষেত্রে, ওই জমা খারিজে আবাসিক থাকলে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। কোন ব্যাক্তির আয়কর যদি না থাকে ভুয়া নন্বর বসিয়া প্রতিটা ই-টিন নান্বার বাবত ৫ হাজার ঘুঘ দিতে হয় তাকে। এছাড়া হেবা, পাওয়ার, বায়নাপত্র দলিলে তাকে ৩০থেকে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ না দিলে রেজিষ্ট্রেশন করেন না তিনি।

এ ছাড়াও গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের রেকর্ড রুমে ব্যাপক ঘুষ-দুর্নীতি চলছে। এ নিয়ে তল্লাশিকারকরা একাধিকবার কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করলেও কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।

জানা যায়, জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় আগে ছিল নগরীর জোড়পুকুর মোড়ের অল্প উত্তরে। ভাড়া ভবনটির নিচ তলায় দ্বিতীয় যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যক্রম এখনো চলমান। কিছুদিন আগে জমির দলিলের সইমোহর নকল তোলার রেকর্ড রুম মারিয়ালী এলাকার নবনির্মিত ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

সেবাপ্রার্থীরা নকলের জন্য তল্লাশিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ২০ টাকার কোর্ট ফি ও স্ট্যাম্প দিয়ে আবেদন করতে হয়। একই সঙ্গে রেকর্ড কিপারের কাছে প্রতি নকলে ১৩৫০ টাকা করে জমা দিতে হয়।

জমির রেজিস্ট্রিকৃত মূল্য ও পাতা অনুযায়ী নকলপ্রতি গড়ে সরকার রাজস্ব পায় ৪শ থেকে ৫শ টাকা। বাকি ৮শ থেকে ৯শ টাকা ঘুষ হিসেবে জমা হয়।

বর্তমান রেকর্ড কিপার শামীমা সুলতানা এক বছর যাবত এখানে কর্মরত আছেন। তার চেয়ারের পাশেবসে একাধিক নকলনবিশ টাকা আদায় করে হিসাব বুঝিয়ে দেন।

তল্লাশিকারকরা জানান, দুর্নীতির দায়ে পলাতক সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের আমল থেকে ওই রেট ছিল ১১শ টাকা। বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার গত জুলাইয়ে ২শ টাকা বাড়িয়ে ১৩শ টাকা নির্ধারণ করেন। পরে তল্লাশিকারক সমিতি তাদের ফান্ডে কিছু সহযোগিতার দাবি জানালে আরও ৫০ টাকা বাড়ানো হয়।

তারা আরও জানান, আগস্ট মাসে বাড়তি ৫০টাকা থেকে সমিতি নকলপ্রতি ৪০ টাকা করে পেয়েছে। বাকি ১০ টাকায়ও ভাগ বসিয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম।

কয়েকজন সেবাপ্রার্থী জানান, আগে কম টাকায় দলিলের নকল পাওয়া যেত। পর্যায়ক্রমে ঘুষের রেট বাড়ায় এখন আড়াই হাজার টাকার নিচে নকল তোলা যায় না। এতে মানুষের ভোগান্তি অনেক বেড়েছে।

রেকর্ড রুমে দৈনিক ৬০ টাকা মজুরি ভিত্তিতে আটজন উমেদার নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে সোহেল, কাশেম, রিপন ও রাব্বি বেপরোয়া এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোহেল দুদকের মামলার আসামি সাব-রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের লোক ছিলেন বলে প্রচার রয়েছে।

একাধিক তল্লাশিকারক জানান, বালাম বই অনেক আগের হলে উমেদার সোহেল, কাশেম, রিপন ও রাব্বিকে ৫শ থেকে ১হাজার টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে বই পাওয়া যায় না। তারা নিজেরাও লোকজনের সঙ্গে নকল দেওয়ার চুক্তি করেন।

এছাড়া গাজীপুর রেকর্ড রুম মারিয়ালীতে স্থানান্তর নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে এক পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা ও সদরের নকলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে একই সঙ্গে নকল তুলতে না পারায় জমিজমা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রয়োজনে জনসাধারণ ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন।

তল্লাশিকারক ও দলিল লেখকরা জানান, নকলের কার্যক্রম মৌখিক নির্দেশে বন্ধ করা হয়েছে। কোথাও কোন নোটিশ টানানো হয়নি। কবে কার্যক্রম চালু হবে, তা-ও কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন না। তবে যুগ্ম অফিসের নকলের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। সেখানে নকল তুলতে ১৩৫০ টাকা লাগে। অভিযুক্ত সদর ও যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার জানান, আইন অনুযায়ী নকলে ১৩৫০ টাকা নির্দিষ্ট হওয়ার কথা না। দলিলের পৃষ্ঠার ওপরে নির্ভর করে কোনটা ৭শ টাকা, কোনটা ৮শ টাকা আসবে। একই অংক হবে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি জানান।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: