শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন

সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হলো নতুন স্কিম ‘প্রত্যয়’

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় আগের চারটি স্ক্রিমের সঙ্গে এবার যুক্ত করা হয়েছে ‘প্রত্যয়’ নামের একটি নতুন প্যাকেজ। আগামী ১ জুলাই ও তার পরে যারা স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করবেন তাদেরকে এই স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করেছে সরকার। বুধবার (২০ মার্চ) অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, আগামী জুলাইয়ের পর স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থার চাকরিতে যাঁরা যোগদান করবেন, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় প্রত্যয় স্কিমে যুক্ত করা হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রত্যয় স্কিম চালুর ফলে বিদ্যমান কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না; বরং তাদের বিদ্যমান পেনশন বা আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুণ্ন থাকবে।

বিদ্যমান ব্যবস্থায় খুব কমসংখ্যক স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীনস্থ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে পেনশন স্কিম আছে। এ ধরনের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা আনুতোষিক স্কিমের আওতাভুক্ত এবং তাদের জন্য সিপিএফ ব্যবস্থা প্রযোজ্য।

এ ব্যবস্থায় কর্মচারীরা চাকরি শেষে অবসর–সুবিধা হিসেবে এককালীন আনুতোষিক পান; কিন্তু মাসিক পেনশন পান না। ফলে অবসরোত্তর–জীবনে প্রায় ক্ষেত্রেই আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কর্মচারীদের অবসরোত্তর–জীবনের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা দিতে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে সরকার ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রবর্তন করেছে।

প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা, যেটা কম হয়, সেটা তাদের বেতন হতে কাটা হবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দেবে।

এরপর উভয় অর্থ উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত উক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কর্পাস হিসাবে জমা করবে। এ প্রক্রিয়ায় কর্মকর্তা–কর্মচারীর পেনশন ফান্ড গঠিত হবে এবং সেই ফান্ড জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ জমাকৃত অর্থের ভিত্তিতে পেনশন দেওয়া হবে।

বিদ্যমান সিপিএফ ব্যবস্থায় কর্মচারী মূল বেতনের ১০ শতাংশ এবং প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ দেয়। তবে প্রত্যয় স্কিমে প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের ১০ শতাংশ দেবে; সিপিএফ ব্যবস্থা থেকে যা ১ দশমিক ৬৭ বেশি।

প্রত্যয় স্কিমে একজন ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর নিজ বেতন থেকে মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান একই পরিমাণ টাকা ৩০ বছর চাঁদা দিলে অবসরের পর অর্থাৎ ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা হারে পেনশন পাবেন।

৩০ (ত্রিশ) বছর ধরে মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে চাঁদা দিলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিজ বেতন থেকে প্রদত্ত মোট চাঁদার পরিমাণ দাঁড়াবে ৯ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থা জমা করবে আরও ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর সর্বমোট চাঁদার পরিমাণ হবে ১৮ লাখ টাকা।

তিনি যদি ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন, তবে ১৫ বছরে পেনশন পাবেন ১ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ টাকা, যা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিজ জমার ১২ দশমিক ৪৭ গুণ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, পেনশনের সুবিধা আজীবন মিলবে বলে এই অঙ্ক আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্য মুনাফার হার বৃদ্ধি পেলে মাসিক পেনশনের পরিমাণ আরও বাড়বে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় খরচ সরকার নির্বাহ করবে বলে চাঁদাদাতার কর্পাস হিসাবে জমাকৃত অর্থ এবং বিনিয়োগ লব্ধ আয় সম্পূর্ণ চাঁদাদাতার অ্যানুইটি হিসাবায়নের মাধ্যমে মাসিক পেনশন নির্ধারণ করা হবে।

জমাকৃত চাঁদার ওপর বিনিয়োগ রেয়াত পাওয়া যাবে এবং প্রাপ্য পেনশন আয়করমুক্ত হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। স্কিমটি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় এটি শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ।

এই স্কিমে নিবন্ধিত কর্মচারী পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার পরবর্তী মাস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ব্যাংক হিসাবে মাসিক পেনশনের অর্থ পাবেন।

মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে তাদের এ বিষয়ে অবহিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে তাকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো দপ্তরে যাওয়ার বা কোনো প্রকার প্রমাণ দেখানোর প্রয়োজন হবে না।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: