সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন

‘ভুক্তভোগীর কথা শোনা ছাড়া সরকারের উপায় নেই’

নিউজ ডেস্ক :: জ্বালানিখাতের সংকট দূর করতে ভুক্তভোগীর কথা শোনা ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সরকারের ভুল নীতি আর অব্যবস্থাপনাই মূলত আজকের সংকটের জন্য দায়ী।

অধ্যাপক শামসুল আলম বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের সংকট ও সংকট উত্তরণে করণীয় প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, যে মূল্যে জ্বালানি কিনছে জনগণ, তা তাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। আবার সরকার এ খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই পরিস্থিতির মধ্যে সরকার যখন ফের জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জন্য গণশুনানির আয়োজন করলো আমরা তখন প্রতিবাদ করলাম। আমরা বলেছি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। জ্বালানি নিয়ে সরকার একের পর এক যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অনেকাংশেই ভুল এবং আত্মঘাতী বলে মনে করি। আজকের সংকট যার প্রমাণ।

বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বৈশ্বিক সংকটের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি, সরকারের ভুল নীতির কারণেই আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কেন নতুন করে গ্যাস সম্পদের অনুসন্ধান করলো না, কেন উৎপাদন বাড়ালো না, কেন আমদানিতে জোর দিলো, তার উত্তর তো খুঁজতে হবে। সরকারের লোকজন এক সময় বললো, দেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে। ২০১৬ সালের পর থেকে বলছে মাটির নিচে গ্যাস নেই। তার মানে দুটোই অসত্য। এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৬০ শতাংশ আসে দেশীয় উৎস থেকে। কিন্তু দেশীয় সম্পদের ওপর জোর দেয়নি সরকার।

‘আর কোনো বিতর্ক তোলার সময় নেই। এই অবস্থার জন্য কারা দায়ী, কীভাবে এই সংকটের সৃষ্টি হলো, তা সবই জানা। এই বিতর্কে আটকে থাকলে সমাধান মিলেবে না।’

এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, আমরা বিদ্যুৎ পরিস্থিতির সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক কাজটি করতে পারি। সরকারের ভুল বা দুর্নীতির কারণে মানুষ যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তা তো এখন দৃশ্যমান। যারা আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী, তারা তো বিদ্যুৎখাত বা জ্বালানিখাতের উন্নয়নের কথা বলছেন। এখনো তারা এ খাতের উন্নয়নের কথা বলছেন। তাদের কথা শুনলে তো সংকট আরও বাড়বে। তাদের কথা বাদ দিয়ে যারা ভোক্তা বা ভুক্তভোগী তাদের কথা গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের পথ বের করতে হবে।

‘গণশুনানির ব্যবস্থা সরকার মাঝে মধ্যে করে। এমন গণশুনানি করেই ভুক্তভোগী মানুষদের কথা আমলে নিতে হবে। মানুষ আসলে কী বলে, তারা কীভাবে সমাধান চায় এটি আগে বুঝতে হবে।’

ভুক্তভোগীর কথা শোনা ছাড়া সরকারের কোনো উপায় নেই। সরকার সাধারণের কথা শোনেনি বলে নিজেদের বিপদে ফেলেছে, জাতিকে বিপদে ফেলেছে। আমাদের ভালোমন্দ অন্য কেউ দেখুক এটি আর আমরা চাই না। আমাদের ভালোমন্দ আমাদেরই দেখতে দিতে হবে। আমি বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করি। অবশ্যই আমার চাহিদা গুরুত্ব দিয়ে সরকার মাথা ঘামাবে, জ্বালানিখাতের সমাধান দেবে- বলছিলেন অধ্যাপক শামসুল আলম।

সংকটের সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বহু কথা বলেছি আগে। বহু পথ দেখিয়েছে মানুষ। সরকার খুব ভালো করে জানে কোন পথে সমাধান হতে পারে। আজকের এই সংকট যেসব কারণে দেখা দিয়েছে তা আগে খুঁজে বের করতে হবে। এরই মধ্যে সব কারণ সামনে এসেছে।

‘আমরা বারবার টেকসই উন্নয়নের কথা বলে আসছি। টেকসই হলে ক্রেতা ও উৎপাদনকারী উভয়পক্ষই লাভবান হয়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান অথচ তাদের বলে দেওয়া হলো এই পরিমাণ লাভ করতে হবে। ভোক্তার কথা বিবেচনা না করেই এ লাভের ভাগ বসানো হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভোক্তা।’

বেসরকারিভাবে বিদ্যুতের উন্নয়নে গুটিকয়েক মানুষকে যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা না থাকায় বিশেষ গোষ্ঠী সুবিধা নিয়েছে এবং তাদের পকেট ভারী করেছে। উৎপাদনে না গিয়েও তারা সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিয়েছে। এ অব্যবস্থাপনা কাটিয়ে উঠতে না পারলে মহাবিপদে পড়তে হবে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: