শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১১:৩০ অপরাহ্ন

খাদ্য সংকটে সুন্দরবনের বানর

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ন্ড হেরিটেজ সাইট বিশ্বের বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবন। বাঘ ও হরিণের পরই এ বনের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বানর। বনের মধ্যে যেদিকেই চোখ যায় শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক বানর আর বানরের চেচামেচি। সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্যকে আলিঙ্গন করে রেখেছে এ বানর। চলতি শীত মৌসুমে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র শুলো এখন মুখর পর্যটকদের পদচারণায়। পর্যটকদের দেখলেই খাদ্য খেতে ছুটে আসে দল বেঁধে বানর। এসময় পর্যটকরা বানরদের পোট্যাটো চিপস, সফট ড্রিষ্কস সহ বিভিন্ন ধরণের খাবার খাইয়ে থাকে। এতে খাদ্যভ্যাস বদলে যাচ্ছে সুন্দরবনের বানরদের ফলে সুন্দরবনের বানর আর আগের মতো গাছের ফল-মুল, কচিপাতা বা কাঁকড়া ধরে খাচ্ছে না। খাদ্য ঘাটতি হলে তারা দল বেঁধে লোকালয়ে চলে আসছে। এই অভ্যাস বদলের ফলে সমস্যা হচ্ছে দুটো। এক আগে বানরের দল খাবারের খোঁজে লোকালয়ে এলেও ফের জঙ্গলে ফিরে যেত। এখন তারা লোকালয়ে ধারে কাছেই ডেরা বাঁধছে। ফলে বানরের উৎপাতে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হওয়া ছাড়া বিপজ্জনক সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। মানুষের এত কাছাকাছি থাকার কারণে নানা ধরনের রোগ সংক্রমণ হওয়ার আশষ্কা থেকে যাচ্ছে বানরের যা গভীর জঙ্গলে মহামরীর মতোই ছড়িয়ে যেতে পারে।

সেক্ষেত্রে গোটা সুন্দরবনেরই পরিবেশগত ভারসাম্য যে নষ্ট হবে, সেটা বলাই বাহুল্য দ্বিতীয় সমস্যা বানরের খাদ্যাভ্যাস বদলে যাওয়াতে প্রাকৃতিক স্থিতি কিছুটা নষ্ট হচ্ছে। প্রাণী-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জঙ্গলে বানরের দল যেমন গাছ থেকে গাছে লাফিয়ে বেড়ায়, জমিতে তাদের সঙ্গে সঙ্গে চলে হরিনের দল এবং অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণিরা। কারণ বানর গাছে উঠে যত ফল খায়, বা পাতা ছিড়ে খায়, তার থেকে বেশি ফল-ফাতা নীচে ফেলে গাছের তলায় হরিনেরা সেইসব কুড়িয়ে খায়। কিন্তু আরও একটা কারণ আছে বানরের সঙ্গে হরিনের ঘুরে বেড়ানোর সেটা একেবারে প্রাণের তাগিদ। বাঘ শিকার ধরতে এলে গাছের উঁচু ডালে বসা বানর সেটা সবার আগে দেখতে পায় এবং চিৎকার করে সবাইকে সতর্ক করে দেয়, তাতে সাবধান হয়ে যায় হরিনের দলও। জঙ্গলের এই চরাচরিত নিয়ম ব্যাহত হচ্ছে, ফাস্ট ফুডের লোভে বাঁদরের দল জঙ্গলছাড়া হওয়ায় পরিবেশবিদরা বলছেন, ট্যুরিস্ট রিজর্ট হয়ত বন্ধ করা যাবে না, কিন্তু তাদের উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলাকে নিয়মে বাঁধতে হবে। ঢাকা আবর্জনার পাত্রে সেই উচ্ছিষ্ট ফেলে, প্রতি দিন নিয়ম করে সেটা পরিস্কার করতে হবে। আর বানরের খাবার দেওয়া বন্ধ করতে হবে পর্যটকদের। আচরণবিধি না মানলে শাস্তি বা জরিমানা করতে হবে। তারা বলছে সময় থাকতে সাবধান না হলে এক ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়াবে গর্বের সুন্দরবন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের হরিণ, বানর, শূকর, উদবিড়াল বা ভোঁদড়ের সবশেষে শুমারি হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ওই শুমারির তথ্য অনুযায়ী, বনে হরিণ ছিল এক থেকে দেড় লাখ; বানর ৪০ থেকে ৫০ হাজার; শূকর ২০ থেকে ২৫ হাজার; উদবিড়াল ২০ থেকে ২৫ হাজার। এর পর আর এই চারটি বন্যপ্রাণীর কোনো শুমারি হয়নি। ফলে বর্তমান সংখ্যা বা অবস্থা বন বিভাগের জানা নেই। সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পশ্চিম বনবিভাগের কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র এখন মুখর। ভ্রমনপ্রেমি শাহিনুর, আলিম, রবিউল, আনোয়ার জানান, প্রকৃতির সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতে চাইলে সুন্দরবন ভ্রমণের বিকল্প নেই। সুন্দরবন ভ্রমণের অনুভ‚তি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এত সুন্দর জায়গা আগে দেখিনি। বারবার আসতে মন চাই এখানে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উদ টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক নাজমুস সাদাত বলেন, সুন্দরবনের সব বন্যপ্রাণীর একটি পূর্ণাঙ্গ শুমারি প্রয়োজন। একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর এই শুমারি করতে হবে। সেই সঙ্গে বন্যপ্রাণীর খাবারের কী অবস্থা, তাও জানা জরুরি। খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক বলেন, বন্য ও জলজ প্রাণী রক্ষায় সুন্দরবনে এখন জিপিএসের সাহায্য ‘স্মার্ট প্যাট্রোলিং’ চলছে। এছাড়া বন্যপ্রাণী রক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে কাজ চলমান।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: