মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ৩৯ বছর পর জমি ফিরে পেলেন যদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

দীর্ঘ ৩৯ বছর মামলা লড়ারার পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ক্রয়কৃত জমি ফিরেন পেলেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুসের পরিবার।
জামালপুর শহরের বজ্রাপুর মালগুদাম রোডে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ জমি বুধবার (১৭ এপ্রিল) মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জেলা মেজিস্ট্রেট দখল ও দুটি চারতলা আবাসিক ভবন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।

এসময় আবাসিক ভবনে বসবাসকারী ভাড়াটিয়াদের ১ ঘন্টার মধ্যে আসবাবপত্র বেড় করে ভবনটি খালি করার নির্দেশ দেয়া হলে বিদ্যুত, ডিশ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর দুপুর ২ টায় বাউন্ডারি ওয়াল এবং ভবন দুটি ভেকু মেশিন দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়।

স্থানীয় ও পরিবারসূত্রে জানা যায়, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস ১৯৭৯ সালে মৃত. ঊজির আলী সরদারের স্ত্রী হালিমা খাতুন এর কাছ থেকে জামালপুর পৌর এলাকার সাহাপুর মৌজার দক্ষিণ মুকন্দবাড়ী এলাকায় ১৪.২৫ শতাংশ ভূমি বায়না দলিল মূলে ক্রয় করেন। মৃত. উজির আলীর সন্তানাদি নাবালক থাকায় উজির আলীর স্ত্রী গার্ডিয়ান শীপের জন্য কোর্টে আবেদন করেন এবং গার্ডিয়ান শীপের আবেদন মঞ্জুর হলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কুদ্দুস জমিটি সাব- কবলা দলিল করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। হালিমা খাতুন নানা তাল বাহানা করতে থাকলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস মামলা দায়ের করেন।

ইতিমধ্যে মাহাবুবুল হক নামে এক ব্যক্তি ভূমির মালিক এর সাথে যোগসাজশে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছের বায়না দলিল এর পূর্বের তারিখ দেখিয়ে একটি জাল বায়না দলিল তৈরি করেন যা পরবর্তীতে আদালতে প্রমাণিত হলে ৯২ সালে বিজ্ঞ সাব জজ আদালত মামলার বাদী আব্দুল কুদ্দুস এর পক্ষে রায় প্রদান করেন। সেই সাথে পণ মূল্যের বিক্রি টাকা জমা প্রদানের নির্দেশসহ বায়না সংশ্লিষ্ট তফসিল ভূমি আদালত কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন করে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয় ।

এরপর ১৯৯৯ সালে বিজ্ঞ আপীল আদালতে জেলা জজ কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মাহাবুবুল হক গং মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে ১০৬৩/২০০০ ও ১০৬৪/২০০০ নং সিভিল রিভিশন দায়ের করেন। হাইকোট ২০১১ সালে মাহাবুবুল হক গংদের পক্ষে রায় প্রদান করেন। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের রায়ের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কুদ্দুস মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট ডিভিশনের আপীলেট ডিভিশনে লিভ টু আপিল এবং স্থীতি অবস্থা এর আবেদন করলে বিজ্ঞ সুপ্রিম কোর্ট আবেদন গ্রহণ করে সকল পক্ষকে স্থিতি অবস্থা বিরাজ করার নির্দেশ প্রদান করেন।

এইদিকে হাইকোর্টের রায়ের সুবাদে মাহাবুবুল হক স্থানীয় কতিপয় ব্যাক্তির কাছে অত্যন্ত চতুরতার সাথে নালিশী ভূমি বিক্রয় করে স্বপরিবারে রাতের আঁধারে জামালপুর ত্যাগ করেন এবং রাতারাতি নালিশী ভূমি মাটি ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে।

এমতাবস্থায় আবুল কুদ্দুস মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার কপিসহ সদর থানায় জিডি এন্ট্রি করলে সদর থানার পুলিশ তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদান করে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অবজ্ঞা করে জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় Contempt Petition শুনানি অন্তে মাহাবুবুল হক গংদের বিরুদ্ধে Court of Contempt আনয়ন করেন। পরিশেষে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ২০২১ সালে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছ এর পক্ষে রায় প্রদান করে। একই সাথে মামলা চলমান অবস্থায় সমস্ত দলিল বাতিল করে আদালত কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কুদ্দুসকে জমির দখল বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করে।

উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে জামালপুর সদর থানার ওসি মুহাম্মদ মহব্বত কবীরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজাত আলী ফকিরের নেতৃত্বে দুই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য যে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছ ২০২২ সালে ৮৫ বছর বয়সে স্ত্রী এবং দুই পুত্র রেখে পরলোক গমন করেন ।

দীর্ঘ ৩৯ বছর পর বহু প্রতীক্ষার পর রায় বাস্তবায়ন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হওয়ায় যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছের পরিবারেরপক্ষ থেকে জৈষ্ঠ পুত্র খাজা ওয়াছিউল্লাহ্ মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে বিশেষ ধন্যবাদ জানান।

সুমন মাহমুদ, স্টাফ রিপোর্টার


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: