বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০২ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফর: উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসিপে কোঁতের আমন্ত্রণে চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফর সম্পন্ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে বাংলাদেশ ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী এক বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এ আলোচনার ওপর ভিত্তি করে পরে ঢাকা ও রোমের পক্ষ থেকে ৯ দফা যৌথ বিবৃতি দেয়া করা হয়। বিবৃতিতে উভয় পক্ষ রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে গত ২৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক পরিলক্ষিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে যৌথ ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে- দুই নেতা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের মধ্যে উন্নয়ন, শ্রম ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আরও নিবিড় সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ অগ্রাধিকারমূলক শুল্কনীতির আওতায় ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানির গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

যৌথ বিবৃতিতে উভয় পক্ষই টেক্সটাইলসহ বাংলাদেশে ইতালীয় সংস্থাগুলোর উপস্থিতির প্রশংসা করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-ইতালি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত, ওষুধ শিল্প, হাল্কা প্রকৌশল, চামড়া, হাইটেক এবং প্রচলিত ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত সমৃদ্ধকরণে আস্থা ব্যক্ত করার পাশাপাশি ‘নীল অর্থনীতি’কে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

এ ছাড়া অভিবাসন ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় করাসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষ’ উদ্যাপনের বিষয়টি যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ (১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ২৬ মার্চ ২০২১ সাল) উদ্যাপনকালে ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ ছাড়া সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ভ্যাটিকান সিটিতে যান এবং ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফর ছিল নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর জোরালো সমর্থন ও সহযোগিতা আমাদের জন্য জরুরি।

উল্লেখ্য, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অমানবিক অত্যাচার, ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে এরই মধ্যে অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশু বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার ও নিজভূমে ফিরে যাওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের অন্যায়-অবিচারের বিচার হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফর বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও মিয়ানমারকে শাস্তির সম্মুখীন করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে গত কয়েক বছরে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে, যার পরিমাণ ২ বিলিয়ন ইউরোরও বেশি। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এটি নিঃসন্দেহে বড় ধরনের অগ্রগতি। প্রধানমন্ত্রীর ফলপ্রসূ সফরের পর বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে সম্পর্কের অগ্রগতির এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতালি ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং ইউরোপের উল্লেখ্যযোগ্য অর্থনৈতিক শক্তি ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর এ সফর দেশটির সঙ্গে বিরাজমান সম্পর্ক সম্প্রসারিত করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে- এটাই প্রত্যাশা।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: