বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ অপরাহ্ন

গিলগিট-বালটিস্তানের ভোটে এগিয়ে ইমরানের দল

নিউজ ডেস্ক :: আজাদ কাশ্মীরের গিলগিট-বালটিস্তানে গতকাল রোববারের নির্বাচনে এগিয়ে আছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। রোববারের সর্বশেষ অনানুষ্ঠানিক খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) কিছু অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলেছে। তবে ভোট বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণই ছিল।

ডন-এর খবরে বলা হয়েছে, মোট ৯টি আসনের অনানুষ্ঠানিক ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্য প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তিনটি করে আসনে জয় পেয়েছেন। পিপিপি ২টি এবং মজলিস ওয়াহদাতুল মুসলিমিন (এমডব্লুএম) ১টি আসনে জয় পেয়েছে। বাকি ১৪ টি আসনের মধ্যে পিটিআই ৫টিতে, ৪টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী, পিপিপি ৩টিতে, পিএমএল-এন এবং জেইউআই-এফের প্রার্থীরা ১টি করে আসনে এগিয়ে আছেন।

জিপিএলএ-৭ স্কার্ডু-আই আসনে জয় পেয়েছেন পিটিআইয়ের প্রার্থী রাজা জাকারিয়া খান। তিনি পিপিপি নেতা গিলগিট-বালটিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সৈয়দ মেহেদি শাহকে পরাজিত করেছেন। অনানুষ্ঠানিক ফল অনুসারে পিটিআইয়ের প্রার্থী ৫ হাজার ২৯০ ভোট পেয়েছেন। সৈয়দ মেহেদি শাহ ৪ হাজার ১১৪ ভোট পেয়েছেন। পিএমএল-এনের মুহাম্মদ আকবর ১৯৬ ভোট পেয়েছেন।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এ নির্বাচনকে দেশের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল পিটিআই, পিএমএল-এন এবং পিপিপির জনপ্রিয়তা মাপার একটি পরীক্ষার ছিল বলে মন্তব্য করেছেন। সরকারবিরোধী বিরোধী জোট পিডিএমের এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার দেশটির দুটি প্রধান বিরোধী দল পিপিপি এবং পিএমএল-এন এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।

পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বে প্রচার চালিয়েছিল দলটি। তবে নির্বাচনের পরে পিপিপি ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে। পিপিপির গিলগিট-বালটিস্তানের তথ্যবিষয়ক সম্পাদক সাদিয়া দানিস জিবিএলএ-১৮ ডায়ামার-চতুর্থ আসনের প্রার্থী ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, গিলগিট -১ (জিবিএলএ -১) আসনের সারকাই সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে পিপিপির প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের আটকে রাখা হয়েছিল। প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কিছু ব্যালটে বাইরে সিল মারার অভিযোগও তিনি করেছেন।

ভোটের আগের দিন পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি টুইটে বলেছিলেন, কেন্দ্রে ভোটারদের আসতে দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে ব্যর্থ হলে চলবে না। এটা নিশ্চিত করতে হবে যে সব ভোটার ভোটকেন্দ্র গেছেন এবং সব ভোট গণনা হয়েছে। জনগণের উৎসাহ গণতন্ত্রের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতির কথাই প্রমাণ করে।

গিলগিট-বালটিস্তানে এটা তৃতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনে ২৪টি সাধারণ আসনের মধ্যে ২৩টিতে ভোট হয়েছে। একটি আসনের প্রার্থী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় পরে ভোট হবে ওই আসনে। চারজন নারীও নির্বাচনে লড়েছেন। নির্বাচন আগস্টে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। পিপিপির ২৩, পিএমএল-এনের ২১ ও পিটিআইয়ের ২২ জন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

সম্প্রতি ভারতের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও পাকিস্তান তাদের নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের গিলগিট-বালটিস্তানকে বিশেষ প্রদেশের মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। সাংবিধানিক বৈধতা পেলে এটি হবে পাকিস্তানের পঞ্চম প্রদেশ। পাকিস্তানের এ ঘোষণায় নয়াদিল্লি মনে করছে, কাশ্মীরের উত্তর সীমান্তঘেঁষা গিলগিট-বালটিস্তানকে জোর করে শাসন করে আসছে ইসলামাবাদ। বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখাওয়া, পাঞ্জাব ও সিন্ধ—পাকিস্তানের চারটি প্রদেশ।

গিলগিট-বালটিস্তানের পাশে চীন ও আফগানিস্তানের সীমান্ত রয়েছে। গিলগিট-বালটিস্তানকে পাকিস্তানের পঞ্চম প্রদেশ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই গিলগিট-বালটিস্তানকে আলাদা অঞ্চল হিসেবে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। এই অংশের আলাদা মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের প্রশাসনিক সরকারও রয়েছে। আজাদ কাশ্মীর সীমান্তের এই ভূখণ্ডকে সরাসরি প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করলে পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশ থেকে অনেক মানুষের যাতায়াত বেড়ে যাবে এবং অন্যান্য অঞ্চল থেকে সেখানে মানুষের আসার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।

গিলগিট-বালটিস্তান অঞ্চলটি বৃহত্তর কাশ্মীরের অংশ। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতার পর কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালের পর ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত কাশ্মীর নিয়ে লড়াই বাধলে কাশ্মীরের একটি অংশ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে এবং আরেকটি অংশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। গিলগিট-বালটিস্তান মূল কাশ্মীরের অংশই ছিল।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: