সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন

আপনিও পারবেন

নিউজ ডেস্ক :: কিসের অভাব আপনার? কেন আপনি ক্লাসে ১ম হতে পারবেন না? কেন গোল্ডেন এ প্লাসটা আপনার দখলে আসবে না? কেন মেডিকেলে সুযোগ পাননি বলে জীবনকে ব্যর্থ মনে করতে হবে? কেন অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেননি বলে হতাশায় ভেঙে পড়তে হবে?

ড. বি আর আম্বেদকর। জন্ম ১৯ শতকের শেষভাগে ব্রিটিশ ভারতের মধ্যপ্রদেশে এক দলিত পরিবারের ১৪ নম্বর সন্তান হিসেবে। অস্পৃশ্য হওয়ায় স্কুলে তাকে বসতে হতো ক্লাসের বাইরে বারান্দায়। এমনকি তেষ্টা পেলে স্কুলের উচ্চবর্ণের দপ্তরীটি ছোঁয়া বাঁচিয়ে ওপর থেকে পানি ঢেলে না দেয়া পর্যন্ত পানি খাওয়ার অনুমতিটুকুও ছিল না তার। এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে ১৯ মাইল দূরের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মাঝপথে গাড়োয়ান তাকে গরুর গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিল অস্পৃশ্য হয়ে গাড়িতে ওঠার অপরাধে।

এতকিছুর পরও হার মানেননি। দারিদ্র্য আর রোগ-শোকের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে যাওয়া মাত্র পাঁচ ভাইবোনের একজন ছিলেন তিনি এবং একমাত্র তিনিই পেরোন হাইস্কুলের গণ্ডি। ভারতের ইতিহাসে তিনিই প্রথম দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য, যিনি কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তীতে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ও লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে আইন ও অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রিসহ অর্জন করেন কয়েকটি ডক্টরেট।

দেশে ফিরে একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীর পাশাপাশি তিনি হয়ে ওঠেন সমকালীন রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে জীবনকে উৎসর্গ করেন। স্বাধীন ভারতের সংবিধান প্রণয়নের গুরুদায়িত্ব পালন করেন উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, যা অর্জন করে সবার সপ্রশংস সমর্থন।

বাবা আম্বেদকর নামে ভারতবর্ষে তিনি হয়ে ওঠেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়। প্রতিবছর তার জন্ম ও মৃত্যুদিবসে হাজারো মানুষ সমবেত হয় তার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবার উদ্দেশ্যে। বাবা আম্বেদকর যদি পারেন, তাহলে আপনিও পারবেন।

একবার ভেবে দেখুন এই মিনিটেই বিশ্বে যে ১০৭ জন মানুষ মারা গেল, আপনি তাদের মধ্যে পড়েননি। কারণ আপনি এখনো বেঁচে আছেন। একটু কি ভেবে দেখবেন, আর কী কী কারণে আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাতে পারি? আপনি ভেবে দেখুন —

মাতৃগর্ভে একটি ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হওয়ার জন্যে পিতার দেহ থেকে যে ৩০ থেকে ৫০ কোটি শুক্রাণু যাত্রা শুরু করেছিল, আপনি হচ্ছেন সেই শুক্রাণুর বিকশিত রূপ, যে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হতে পেরেছিল। ৩০/৫০ কোটির সাথে প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছিলেন বলেই আপনি পৃথিবীতে আসতে পেরেছিলেন।

নিজের দেহের কথাই ভাবুন। পাঁচ শতাধিক মাংসপেশি, দুই শতাধিক হাড়, ৭০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন দেহকোষ বা সেলের সমন্বয়ে গঠিত এই শরীরের প্রতিটি সেলে খাবার পৌঁছানোর জন্যে রয়েছে শিরা ও ধমনীর ৬০ হাজার মাইল দীর্ঘ পাইপ লাইন। আর আপনার হার্ট কোনোরকম ক্লান্তি বা প্রতিবাদ ছাড়াই প্রতিদিন এক লক্ষ বার স্পন্দনের মাধ্যমে ১৬ শত গ্যালনেরও বেশি রক্ত পাম্প করে দেহকে সচল রাখছে।

বিস্ময়কর আপনার মনে রাখার ক্ষমতা! আপনি কি জানেন, আপনার মস্তিষ্কের মেমোরি ব্যাংক প্রতি সেকেন্ডে হাজারেরও বেশি নতুন তথ্য গ্রহণ করতে পারে এবং আপনি নতুন যত তথ্যই মস্তিষ্ককে দিন না কেন, সে ঠিকই এর জন্যে জায়গা করে নিচ্ছে?

নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির অধ্যাপক পল রিবার এটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, মানবমস্তিষ্কে যে এক বিলিয়নের মতো নিউরোন আছে তার প্রতিটি আবার আরো হাজারটি নিউরোনের সাথে সংযুক্ত। এভাবে সংযোগায়ন সংখ্যা দাঁড়াল ট্রিলিয়নেরও বেশি। যদি ধরে নিই, প্রতিটি নিউরোন একটি করে স্মৃতি ধারণ করে, তাহলেও মস্তিষ্কের স্মৃতিধারণ ক্ষমতা এত যে, এক জনমে তা ফুরোনোর কোনো সুযোগ নেই।

আমাদের ব্যবহার্য পেনড্রাইভ, আইপডের মেমোরি স্পেসের সাথে তুলনা করে বোঝাতে গেলে তা ২.৫ পেটাবাইট (মানে কয়েক মিলিয়ন গিগাবাইট)। ধরুন আপনার ব্রেন যদি একটা ভিডিও রেকর্ডার হতো তাহলে এখানে যে স্পেস আছে, তা দিয়ে আগামী ৩০০ বছর একটানা ভিডিও করে গেলেও মেমোরির কোনো ঘাটতি হবে না! মানবমস্তিষ্কের এমনি মনে রাখার ক্ষমতা। (সায়েন্টিফিক আমেরিকান, ১৯ এপ্রিল, ২০১০ সংখ্যা)

তাহলে এবার বলুন, না পারার জন্যে বা ব্যর্থতার জন্য কি দায়ী আপনার মস্তিষ্ক, না মস্তিষ্ককে দেয়া আপনার ভুল কমান্ড।

এএইচ/


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: