সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫১ পূর্বাহ্ন

শ্রীপুরে খাটে দুই সন্তান, মেঝেতে মেয়েসহ মায়ের গলাকাটা লাশ

নিউজ ডেস্ক : শোবার ঘরের খাট ও মেঝের ওপর পড়ে থাকা বস্ত্রহীন নিথর দেহগুলোতে জামাট বেধে আছে রক্ত। ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে ঘরের দেয়াল ও ফ্লোর জুড়ে। ক্ষত বিক্ষত গলাকাটা মা ও তার তিন সন্তানের লাশের ওপর ভনভন করছে মাছি।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দোতলা একটির বাড়ির দ্বিতীয় তলায় একই ঘরের ভেতর এভাবেই মা ও তিন সন্তানের গলাকাটা লাশ পড়ে ছিল।

ইন্দোনেশিয়া বংশোদ্ভূত বিথী ফাতেমা ও তার তিন সন্তাননের লাশ রাতে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

পুলিশের ধারণা, বুধবার রাতের কোনো এক সময় মালয়েশিয়া প্রবাসী রেজোয়ান হোসেন কাজলের দোতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় উঠে উঠে দুর্বৃত্তরা ধর্ষণের পর মা ও দুই মেয়েকে হত্যা করে। বাকপ্রতিবন্ধী শিশুপুত্র রক্ষা পায়নি দুর্বৃত্তদের এই হত্যাকাণ্ড থেকে।

জানা যায়, ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার লংগাইর ইউনিয়নের গোলাবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে রেজোয়ান হোসেন কাজল দীর্ঘ দিন ধরে মালয়েশিয়ায়প্রবাসী জীবন যাপন করছেন। সেখানেই ইন্দোনিশিয়ার অধিবাসী বিথী ফাতেমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে কাজল ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে ফাতেমাকে বিয়ে করে সংসার গড়েন। তাদের সংসারে সাবরিনা সুলতানা নূরা ( ১৬), নাওরিন হাওয়া ( ১২) ও ফারদিন ফাদিল নামে ( ৮) সন্তানের জন্ম হয়। বড় মেয়ে কলেজে ও ছোট মেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করছিল। ছোট ছেলেটা জন্ম থেকেই বাক প্রতিবন্ধী। কাজল জৈনাবাজার এলাকায় জমি কিনে স্ত্রী সন্তানদেরকে দোতলা বাড়ি করে দেন। সুখেই কাটছিল এই দম্পতির জীবন।

কাজলের বাবা আবুল হোসেন বলেন, হঠাৎ করেই সব এলোমেলো করে দিল কারা?

কাজলের ছোট ভাই জাহিদ হাসান আরিফ জানান, তার ভাইয়ের বাসার পাশেরই তার বাসা। প্রায় ২৫ বছর আগে জমি কিনে দুই ভাই জৈনা বাজার এলাকায় বাড়ি করেন। ভাই প্রবাসে থাকার কারণে পরিবারটি তিনিই দেখভাল করতেন।

তিনি বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় তার ভাবী তাকে ডেকে বাজার থেকে গরুর মাংস কিনে আনতে বলেছিলেন। তিনি সকালে মাংস কিনে আনেন। সকাল ১০টার দিকে বাড়ির প্রধান ফটকে গিয়ে ডেকে কারো সাড়া পাননি তিনি। ঘুমাচ্ছেন ভেবে তিনি চলে যান। এরপর দুপুর ১২টার দিকে ফের ডেকে সাড়া না পেয়ে স্থানীয়দের জানান। পরে দুপুর ২টার দিকে প্রতিবেশী এক যুবককে মই বেয়ে দোতলায় উঠতে বলেন। যুবকটি সেখানে উঠে দোতলায় পিছনের দরজা খোলা দেখেন। তা দিয়ে উকি দিলে ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।

গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এভাবে চারটা তাজা প্রাণ যারাই কেড়ে নিয়েছে পুলিশ তাদেরকে খুঁজে বের করবেই।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ধর্ষণের পর মা ও ২ মেয়েকে হত্যা করা হয়। পরে বাকপ্রতিবন্ধী শিশুকে হত্যা করা হয়।

গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ জানান, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসার পর রাত ৯টার দিকে লাশ ৪টি উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে আলামত সংগ্রহের ক্ষেত্রে জেলা পুলিশকে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ সহযোগিতা করছে।

শ্রীপুর থানার ওসি মো. লিয়াকত আলী বলেন, মরদেহগুলোর পাশেই রক্তমাখা একটি দা ও ছুরি পাওয়া গেছে।

খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ। মালয়শিয়া প্রবাসী রেজোয়ান হোসেন কাজলের বাবার সঙ্গে তিনি কথা বলেন। সাংসদকে কাছে পেয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

সংসদ সদস্য সবুজ বলেন, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাবা সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে। প্রত্যাশা করছি খুব শিগগিরই এর কারণ ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে।

র‌্যাব ১-এর পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের ইনচার্জ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, র‌্যাব সদস্যরা তাদের সর্বোচ্চ মেধা ও দক্ষতা দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও খুনিদের গ্রেপ্তারে কাজ করবে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: