সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৮ অপরাহ্ন

সময় থাকতে শৃঙ্খলা ফেরান

ইকমার্সের বিকাশকালে দেশে এ খাতে যে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে, তা দুঃখজনক। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত ব্যবসায়িক মডেলের কারণে শুধু গ্রাহক নন; ব্যবসায়ীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার সমকালের প্রতিবেদনে প্রকাশ, ব্যাপক ডিসকাউন্টের ফাঁদে দেশের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের অন্তত আট হাজার কোটি টাকা আটকা পড়েছে। আমরা দেখছি, করোনার এ সময়ে দেশে অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্যবসা ও পরিচিতির জন্য ব্যাপক মূল্যছাড় পদ্ধতিতে ব্যবসা করে। এসব কোম্পানির আকর্ষণীয় অফারে অনেকেই পণ্য কিনতে আগাম টাকা দিয়েছেন।

কিন্তু বিপত্তি হলো, ব্যাপক সংখ্যক গ্রাহক চাহিদামতো পণ্য বা টাকা পাননি। ফলে অনেকেই দ্বারস্থ হয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ‘ডিজিটাল কমার্স’ পরিচালনায় নির্দেশিকা জারি করে প্রধানত পণ্য সরবরাহ ও রিফান্ড দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়ায় কথা বলেছে। তারপরও পরিস্থিতির সন্তোষজনক উন্নতি হয়নি। কার্যত, ই-কমার্স যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় একটি আইনি কাঠামোর বিকল্প নেই।

বর্তমানে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ তথা ই-ক্যাবের সদস্য সহস্রাধিক হলেও ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠান অনলাইন ব্যবসায় যুক্ত। অনেকে যেমন নিজস্ব ওয়েবসাইট কিংবা পোর্টালের মাধ্যমে ই-কমার্স পরিচালনা করছেন; আবার অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। পচনশীল পণ্য থেকে শুরু করে ওষুধ, ইলেকট্রনিক, প্রসাধনীসহ চাল-ডাল তথা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এমনকি পশুও অনলাইনে কেনাকাটা হচ্ছে। সমকালের প্রতিবেদনে এসেছে, করোনার কারণে গত দেড় বছরে এ খাতের ব্যাপক প্রসার হয়েছে; যেখানে গত এক বছরে ই-কমার্সে পণ্য বিক্রি বেড়েছে ২০০ শতাংশেরও বেশি। ঠিক একই সময় গুটিকতক প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকাণ্ডে গ্রাহক যেভাবে প্রতারিত হয়েছেন, স্বাভাবিকভাবেই এ খাতে দেখা দিয়েছে আস্থাহীনতা।

একই সঙ্গে ক্রেতার অসচেতনতা ও তদারকিতে ঘাটতিসহ নানা কারণ ই-কমার্সের অস্থিরতার জন্য দায়ী। ই-ক্যাবের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় আট হাজার কোটি টাকার বিশাল এ বাজার দেশের জন্য কতটা সম্ভাবনার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে শুধু প্রশাসন নয়; ই-কমার্স খাতে কর্মরত সৎ ও প্রতিশ্রুতিশীল উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসবেন। তবে সবচেয়ে জরুরি গ্রাহক সচেতনতা। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা বলেছি, চটকদার বিজ্ঞাপন, মূল্যছাড় ও প্রতিশ্রুতিতে আকৃষ্ট না হয়ে বাস্তবতার নিরিখে বাজারদর বিবেচনা করলে প্রতারণার ঝুঁকি বহুলাংশে কমতে বাধ্য। বলাবাহুল্য, সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্সে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক হয়রানির চিত্র ব্যাপক আকারে স্পষ্ট হলেও এটা সত্য- এক ধরনের পণ্য দেখিয়ে অন্য ধরনের পণ্য সরবরাহ; নকল পণ্য দেওয়া বা মান ভালো না হওয়া; সঠিক সময়ে সরবরাহ না করা কিংবা প্রলোভন দেখিয়ে হয়রানি এমন অভিযোগ আগে থেকেই ছিল।

আমরা মনে করি, ই-কমার্সের বড় বিষয় হলো গ্রাহকের আস্থা। তা রক্ষা করা না গেলে তাতে দু-একটি প্রতিষ্ঠান নয়, গোটা শিল্পের ওপরেই মানুষ আস্থা হারাবে। সে জন্য যেসব অভিযোগ আসছে, প্রশাসনিকভাবেই সেগুলো দ্রুত খতিয়ে দেখা জরুরি। এ ক্ষেত্রে আইন করার পাশাপাশি সরকারেরও ই-কমার্স সংক্রান্ত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান থাকা দরকার, যারা এখানকার সার্বিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে। ওয়েবসাইট-ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা ই-কমার্স পরিচালনা করছেন, তাদের মধ্যে কারা অস্বাভাবিক মূল্যছাড় দিচ্ছে, কাদের পণ্য কিনলে গ্রাহক প্রতারিত হতে পারেন ইত্যাদি নজরদারি করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াও হবে ওই প্রতিষ্ঠানের কাজ। মূল্যছাড় দিলে তার সীমা কত থাকবে, সেটিও নির্ধারিত হওয়া দরকার।

এ রকম প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের সচেতনতার কাজ যেমন করবে, তেমনি অভিযোগেরও দ্রুত নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ই-কমার্স খাতে পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলা এলে তা ব্যবসার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এর মাধ্যমে শুধু নতুন কর্মসংস্থানই হবে না; ক্রেতা-বিক্রেতাসহ দেশও লাভবান হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: