মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৫ পূর্বাহ্ন

মাছ চাষে গড়ব দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ-মাঈনুল ইসলাম

প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও আগামী ২৮ আগস্ট হতে ০৩ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী ২৯তম “জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২১” উদযাপিত হতে যাচ্ছে । এবারের মৎস্য সপ্তাহ দিবসের স্লোগান হচ্ছে ‘বেশি বেশি মাছ চাষ করি, বেকারত্ব দূর করি’। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে দেশের জনগণের মাঝে আরও সচেতনতা সৃষ্টি ও সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে আগামীকাল ২৯ আগস্ট জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ ভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্তকরণের মাধ্যমে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২১-এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মাননীয় স্পীকার কর্তৃক জাতীয় সংসদ ভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে। একইদিন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের প্রতিটি কর্মসূচি সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করা হবে। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২১ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দেশব্যাপী জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে কেন্দীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কেন্দীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২৪ আগস্ট, ২০২১ তারিখে সংবাদ সম্মেলন ও ব্যানার, ফেস্টুনসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কদ্বীপ সজ্জিতকরণ এবং ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় শহরে বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যাল ও দর্শনীয় স্থানে অবস্থিত ডিজিটাল ডিসপ্লেতে মৎস্য খাতে বর্তমান সরকারের অবদান এবং অর্জন স্ক্রল ও টিভিসি আকারে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বঙ্গভবনস্থ পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে তৃতীয় দিন; এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের জলাশয়/পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে। হাওর, বিল ও উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে চতুর্থ দিন ; ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র জনাব মোঃ আতিকুল ইসলাম কর্তৃক কুড়িল ফ্লাইওভার লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে পঞ্চম দিন; মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত বর্তমান সরকারের মৎস্য খাতের বিশেষ বিশেষ সাফল্যের তথ্যচিত্র ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক সায়েন্টিফিক সেমিনার আয়োজন ও বাংলাদেশ টেলিভিশন চত্বরের পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে ৬ষ্ঠ দিন ; বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সাভার, ঢাকা -এর পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে ৭ম দিন; এবং সেই দিন বিকালে ঘটিকায় ভিডিও কনফারেসিং এর মাধ্যমে মৎস্য অধিদপ্তর ও মাঠ পর্যায়ের বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের সাথে মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের সমাপ্তি ঘোষণা হবে। সপ্তাহব্যাপী মৎস্য খাতের বর্তমান আস্থা, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের কেন্দীয় কর্মসূচির পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও ৭ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সপ্তাহের প্রথমদিন জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে জেলা/উপজেলায় মাইকিং ও ব্যানার ফেস্টুন-এর মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি গ্রহণ ও সাংকাদিকগণের সাথে মতবিনিময় করা হবে। ২য় দিন স্থানীয় পর্যায়ে সফল মৎস্যচাষি/ব্যক্তি/উদ্যোক্তা/প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার প্রদান ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে। ৩য় দিন প্রান্তিক পর্যায়ে মৎস্যচাষি ও মৎস্যজীবীদের সাথে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মতবিনিময় করা হবে। ৪র্থ দিন মৎস্যচাষিদের মাছ চাষ বিষয়ক নিবিড় পরামর্শ সেবাপ্রদান, পুকুরের মাটি, পানি পরীক্ষা কর্মসূচি পালিত হবে। ২য় দিন ও ৫ম দিন মৎস্য সেক্টরে বর্তমান সরকারের অগ্রগতি ও সাফল্য বিষয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রর্দশন করা হবে। ৬ষ্ঠ দিন চাষি ও সুফলভোগীদের মাঝে মৎস্যচাষের বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হবে। ৭ম দিন ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের সাথে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মৎস্য সপ্তাহের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২১ উদযাপনে পোনামাছ অবমুক্তকরণসহ সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পালনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দেশের খাদ্যনিরাপত্তা এবং পুষ্টি নিশ্চিতকরণে মৎস্য অধিদপ্তরের গুরুত্বপূণ ভূমিকা রয়েছে। এগুলো হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২০১৬-১৭ সালে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। মৎস্য খাতে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ৬.১০ শতাংশ। দেশের মোট জিডিপির ৩.৫২ শতাংশ, কৃষিজ জিডিপি’র ২৬.৩৭ শতাংশ এবং মোট রপ্তানি আয়ের ১.৩৯ শতাংশ মৎস্য উপখাতের অবদান (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২০)।দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৪ লক্ষ নারীসহ ১৯৫ লক্ষ বা ১২ শতাংশের অধিক লোক এ সেক্টরের বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত থেকে জীবনজীবিকা নির্বাহ করে। সরকারের মৎস্যবান্ধব কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং চাষি ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক ও লাগসই কারিগরি পরিষেবা প্রদানের ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪৫.০৩ লক্ষ মে.টন; যা ২০০৮-০৯ সালের মোট উৎপাদনের (২৭.০১ লক্ষ মে.টন) চেয়ে ৬৬.৭১ শতাংশ বেশি। ১৯৮৩-৮৪ সালে দেশে মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৭.৫৪ লক্ষ মে.টন। কাজেই ৩৭ বছরের ব্যবধানে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ছয় গুণের অধিক। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার The State of World Fisheries and Aquaculture ২০২০ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ ৩য় স্থান ধরে রেখে বিগত ১০ বছরের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির হারে দ্বিতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে এবং বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থান ধরে রেখেছে।বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১ম; তেলাপিয়া উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ৪র্থ এবং এশিয়ার মধ্যে ৩য় স্থান অধিকার করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন হয়েছে ৫.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের মোট উৎপাদনের (২.৯৯ লক্ষ মে.টন) চেয়ে ৮৩.৯৫ শতাংশ বেশি।

বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার ২০১৮ এ ” পুকুরে মাছ চাষ ও যেখানে সম্ভব ধানক্ষেতে মাছ চাষের আরও প্রসারের জন্য উন্নত জাতের পোনা, খাবার, রোগব্যাধির চিকিৎসা, পুঁজির সংস্হান ও সুলভে বিদুৎ সংযোগসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখার ” পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও মৎস্য খাতের উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণার ব্যপক মানোন্নয়ন,কৃষকদের সম্পৃক্ত করে মাছ চাষের ব্যবস্হাপনাগত উন্নতি সাধন ও ধৃত মাছের অপচয় ও ক্ষয়ক্ষতির হ্রাস করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় মৎস্য খাতের উন্নয়নে চলমান কার্যক্রমের পাশাপাশি মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির বাজার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য মাননিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করেছে। গ্রামীণ মৎস্যচাষি জেলে ও মৎস্যজীবীদের তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে দেশব্যাপী জেলে নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদান ও ডাটাবেইজ তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মৎস্য সেক্টরের উপর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় Community Based Climate Resilient Aquaculture Development Project in Bangladesh শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। হলদা নদীকে ” বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ” ঘোষণা করা হয়েছে।

দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্যমোচন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মৎস্যখাত বিগত কয়েক দশক যাবৎ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। যুগোপগযোগী পদক্ষেপ ও উন্নয়ন কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়নের ফলে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে মৎস্যখাতে রপ্তানি আয়। আর এ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের অগ্রযাত্রায় আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে প্রিয় বাংলাদেশ।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: