মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

নিউজ ডেস্ক :: বাংলা সিনেমার আঁতুড়ঘর এফডিসিতে আগামীকাল শুক্রবার দিনভর অনুষ্ঠিত হবে বড়পর্দার শিল্পীদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৭তম নির্বাচন। নির্বাচনে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ এবং মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্যানেল, ২ জন স্বতন্ত্রসহ মোট ৪৪ জন অংশ নিচ্ছেন। দুটি প্যানেলেই রয়েছেন ঢালিউডের তারকা অভিনয়শিল্পীরা। শুরু থেকেই দুই প্যানেলের প্রার্থী এবং সমর্থকের মধ্যেই ছিল দারুণ উৎসাহ ও উদ্দীপনা। নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে প্রচার। নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে পাওয়া যাচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস। আজ শেষে দিনের মতো চলবে প্রচার। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এবারের নির্বাচন অন্য যে কোনোবারের থেকে আলাদা হবে। কারণ বর্তমান কমিটি মিশা-জায়েদ প্যানেল চাইছে আবার ক্ষমতায় বসতে; অন্যদিকে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল মাঠে নেমেছে পরিবর্তন আনতে।

এবারের নির্বাচনের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। বিষয়টিকে সবাই ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। এমনকি তার প্রতি™^›™^ী খোদ মিশা সওদাগর বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন ভাই আমাদের উপদেষ্টা ছিলেন। একজন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পীও সমিতির সেবা করতে চান। তার মানে আমাদের গত পরিষদ এমন হাইপ তুলেছে, যার কারণে ইলিয়াস কাঞ্চন ভাই সেবা করার জন্য আসতে চাইছেন। এটি ভালো দিক। আমার বিশ্বাস, এবারের নির্বাচন খুব ভালো ও সুন্দরভাবে হবে।’

ইলিয়াস কাঞ্চন চাচ্ছেন সবাইকে নিয়ে কাজ করতে। তিনি বলেন, ‘আমরা শিল্পী। আমাদের মানুষ চেনে। সমিতিতে শিল্পীদের চেহারা দামি একটা ব্যাপার। এ কাজগুলো তো অন্যরা খুব একটা সহজে করতে পারবে না। আমরা শিল্পীরা চেষ্টা করব যখন, তখন চলচ্চিত্রের সামগ্রিক উন্নতি হবে। এতে শিল্পী, ডাইরেক্টর, প্রডিউসার, নৃত্যশিল্পী, ফাইটিং গ্রুপ এবং টেকনিশিয়ানরা বেনিফিটেড হবেন। বেনিফিট যেন পুরো ইন্ডাস্ট্রি ভোগ করতে পারে, সেটি নিয়ে শিল্পী সমিতি অনেক ভূমিকা রাখতে পারে।’

ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ বলেন, ‘আমাদের প্যানেল ভালোভাবে সাজিয়েছি। বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। বিজয়ী হয়ে চলচ্চিত্রের এ মন্দা অবস্থা কাটিয়ে তুলতে চলচ্চিত্রের সব সংগঠনকে এক ছাতার তলে এনে কাজ করার চেষ্টা করব।’ মিশা-জায়েদ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জায়েদ খান বলেন, ‘জয়-পরাজয় এখানে বিষয় না। আমরা সব সময় সাধারণ শিল্পীদের পাশে ছিলাম, থাকব। তবে বিগত দিনগুলোয় আমরা যে কাজ করেছি, তাতে আমাদের পাশে সাধারণ শিল্পীরা থাকবেন বলে আশা করি।’

শিল্পী সমিতির নির্বাচনে বাধা নেই : হাইকোর্ট

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন হতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান এ আদেশ দেন। এর আগে এ নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া সদস্যরা নির্বাচন স্থগিত চেয়ে সম্পূরক আবেদন করেছেন। গতকাল বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। তিনি বলেন, ‘ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া সদস্যরা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন স্থগিত চেয়ে সম্পূরক আবেদন করেছেন। অন্যদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া শিল্পীদের আবেদনের ওপর শুনানি হয় আজ (গতকাল)।’

নির্বাচনের ধারেকাছে নেই যেসব তারকা

জনপ্রিয় তারকাদের প্রায় সবাই এবারের নির্বাচনে কোনো না কোনোভাবে আছেন। তবু নেই অনেকে! এমন কয়েকজন বড় তারকা আছেন, যারা কোনো দলের প্রার্থীও হননি এবং কারও পক্ষে কাজও করছেন না। তাদের মধ্যে আছেন ঢালিউড কিং শাকিব খান। যিনি ২০১১-১৫ এবং ২০১৫-১৭ দুই মেয়াদের নির্বাচনে জয়ী হয়ে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব সামলেছিলেন। কিন্তু ২০১৭-১৯ এবং ২০১৯-২১ মেয়াদের নির্বাচনগুলোয় তার দেখা মেলেনি। এবারও তিনি নির্বাচনের ধারেকাছেও নেই। নেই পূর্ণিমা, আমিন খান, আরিফিন শুভ, সিয়াম আহমেদ, জিয়াউল রোশান, অপু বিশ্বাস, শবনম বুবলী, মাহিয়া মাহি, বিদ্যা সিনহা সাহা মিম, পূজা চেরি, রেসি, আঁচল আঁখি, ইয়ামিন হক ববির মতো তারকারা।

না থেকেও আছেন পপি!

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ নায়িকা ২০১৭-১৯ মেয়াদের নির্বাচনে মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে জিতেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরই নিজ প্যানেলের কর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে কমিটি থেকে বেরিয়ে আসেন। তবে গত দেড় বছর খোঁজ মিলছিল না ঢাকাই সিনেমার ‘গ্ল্যামার কন্যা’খ্যাত এ নায়িকার। হুট করেই নির্বাচন নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে একটি ভিডিওবার্তা ছেড়েছেন পপি। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের শ্রদ্ধেয় বড় ভাই ইলিয়াস কাঞ্চন, বোন নিপুণ, বন্ধু রিয়াজসহ সবার জন্য শুভ কামনা রইল। ভেবেছিলাম আর কখনো ক্যামেরার সামনে আসব না। তবে না এসেও পারলাম না। বর্তমান সমিতির একটি মাত্র ব্যক্তি যার নানা অপকর্ম, কুকর্ম আর নোংরামিতে সহায়তা না করায় আমাকে বারবার অপমানিত হতে হয়েছে। তার কারণে আমি এখন ভিকটিম। আমার মতো জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীর সদস্যপদ বাতিলের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমার মতো আরও ১৮৪ জন একইভাবে অপমানিত হয়েছেন। আমি জানের ভয়ে চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। আমার সদস্য পদ বাতিলের চিঠি এখনো আমার কাছে আছে। সবার কাছে আমার অনুরোধÑ আমরা যে ভুল করেছি, আপনারা তা করবেন না। সঠিক মানুষকে ভোট দিন। আমরা পরিবর্তন চাই।’

দুই প্যানেলে প্রার্থী যারা

ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ : সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ, সহসভাপতি রিয়াজ ও ডিএ তায়েব, সহসাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনূর, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নিরব, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক আরমান, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক ইমন, কোষাধ্যক্ষ আজাদ খান। কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য অমিত হাসান, শাকিল খান, নানা শাহ, আফজাল শরীফ, সাংকো পাঞ্জা, জেসমিন, কেয়া, পরীমনি, গাঙ্গুয়া ও সীমান্ত।

মিশা সওদাগর-জায়েদ খান : সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, সহসভাপতি ডিপজল ও রুবেল, সহসাধারণ সম্পাদক সুব্রত, সাংগঠনিক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক জয় চৌধুরী, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ ফরহাদ। কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য রোজিনা, অঞ্জনা, সুচরিতা, অরুণা বিশ্বাস, মৌসুমী, আসিফ ইকবাল, বাপ্পারাজ, আলীরাজ, নাদের খান ও হাসান জাহাঙ্গীর।

স্বতন্ত্র প্রার্থী : কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য ডন ও হরবোলা। এবারের নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন পীরজাদা হারুন। তার সঙ্গে থাকছেন বিএইচ নিশান ও বজলুর রাশীদ চৌধুরী। আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকছেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। সদস্য হিসেবে আছেন মোহাম্মদ হোসেন জেমি ও মোহাম্মদ হোসেন।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: