শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০৭ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি

প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়ানো হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে। ভোটারদের খুশি করতে বেকার সমস্যা, নগরের যানজট ও জলাবদ্ধতা দূর করা, বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো এবং চট্টগ্রামকে দুর্নীতিমুক্ত ও পর্যটন নগরীতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। গতকাল রোববারও তারা একেকজন এমন সব প্রতিশ্রুতির ঘোষণা দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, চসিক নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশেরই সিটি করপোরেশন আইন সম্পর্কে ধারণা নেই। মেয়র ও কাউন্সিলরদের কার্যক্রমবহির্ভূত যেসব প্রতিশ্রুতি তারা ভোটারদের দিচ্ছেন, তা রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিচ্ছে। নির্বাচনের পর ভোটাররা যখন প্রত্যাশার সঙ্গে নির্বাচিতের দেওয়া প্রতিশ্রুতির মিল পাবেন না, তখন তাদের বিরূপ ধারণা হবে। তাই প্রার্থীদের উচিত, আইন বুঝে এখতিয়ারভুক্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ অনুসারে সিটি করপোরেশনের মূল কাজ নগর পরিষ্কার রাখা, রাস্তাঘাট ঠিক রেখে আলোকায়নের ব্যবস্থা করা ও জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা দেওয়া। করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের কাজের মধ্যে রয়েছে- নতুন হোল্ডিং নম্বর দেওয়া ও ট্যাক্স নেওয়া, ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে রেজিস্ট্রি, রাস্তা খননের অনুমতি, কবরস্থান ব্যবস্থাপনা, রাস্তা-নর্দমা-ফুটপাত তৈরি, বহুতল ভবনের জন্য অনাপত্তিপত্র দেওয়া, সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া, পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট বসানো এবং পার্ক ও খেলার মাঠবিষয়ক সেবা দেওয়া। যদিও প্রার্থীরা এমন সব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, যা তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত।

গত শনিবার বিকেলে নগরীর গোসাইলডাঙ্গা ও উত্তর-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে গণসংযোগে গিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্ষমতা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করব। চট্টগ্রামকে গড়ে তুলব সিঙ্গাপুরের আদলে। গতকাল রোববার উত্তর ও দক্ষিণ আগ্রাবাদে গণসংযোগে গিয়ে চট্টগ্রামকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। ১২ মার্চ রেজাউল করিম গেছেন নগরীর উত্তর কাট্টলী, উত্তর পাহাড়তলী ও সরাইপাড়া ওয়ার্ডে। সেখানে গিয়ে তিনি চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতামুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। গত নির্বাচনের আগে একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করতে পারেননি বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। জলাবদ্ধতা-সংক্রান্ত প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনও দিচ্ছেন এখতিয়ারবহির্ভূত নানা প্রতিশ্রুতি। ১২ মার্চ ১৩ নম্বর খুলশী ও ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডের গণসংযোগে গিয়ে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করব। চট্টগ্রামকে পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তুলব। গতকাল রোববার ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকওয়ার্ডে গণসংযোগকালে তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে শিক্ষায় অগ্রগতির পাশাপাশি গবেষণায়ও মনোযোগ দেব। সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলব। এর আগে ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের লালিয়ারহাট, আমানবাজার ওয়ার্ডের গণসংযোগে গিয়ে ডা. শাহাদাত বলেন, চট্টগ্রামকে যানজটমুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তুলব। বেকার সমস্যা দূর করব।

আবার বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাওলানা এমএ মতিন ১১ মার্চ ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগে গিয়ে বলেন, চট্টগ্রামকে দুর্নীতিমুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তুলব। ইংল্যান্ডের নাগরিক সেবার আদলে সিটিজেন জার্নালিজম সেবা চালু করব, যাতে তাৎক্ষণিকভাবে নাগরিক সেবা পায় জনগণ।

মেয়রদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ ইসমাইল বলছেন, নির্বাচিত হলে এলাকাকে বেকারমুক্ত করবেন তিনি। এলাকায় হাসপাতাল করবেন। এলাকাকে জলাবদ্ধতামুক্ত করার ঘোষণাও দিচ্ছেন তিনি। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান কাউন্সিলর ও বিদ্রোহী প্রার্থী মোরশেদ আকতার চৌধুরী বলছেন, নির্বাচিত হলে পুরো এলাকাকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করবেন তিনি। ফুটপাত দখলমুক্ত করবেন। জলাবদ্ধতা নির্মূলে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করবেন।

১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নূরুল আমিন বলছেন, এলাকায় হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গড়ে তুলবেন তিনি। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবের আহমেদ বলছেন, পুরো এলাকাকে জলাবদ্ধতামুক্ত করবেন তিনি। দূর করবেন বেকারত্বও। এই ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শামসুল আলম বলছেন, নিজ উদ্যোগে ১১ তলার কাউন্সিলর ভবন করবেন তিনি। পুরো এলাকাকে জলাবদ্ধতামুক্ত করবেন। ফায়ার সার্ভিস স্টেশনও করবেন।

প্রার্থীদের এমন এখতিয়ারবহির্ভূত প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে এবারের নির্বাচনের নতুন ভোটার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাউজিয়া নূর বলেন, আগের মেয়ররাও তাদের অনেক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি। এখন যারা প্রার্থী হয়েছেন, তারা অতীত থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন না। অথচ এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কিছুই করার সুযোগ নেই।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: