শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন
নিউজ ডেস্ক :: রাত পৌনে দশটা। রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে পাঞ্জাবি পায়জামা টুপি পরিহিত একজন তরুণকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার খোঁজে একবার বিএসএমএমইউ সংলগ্ন ওভার ব্রিজের সামনে আরেকবার উল্টোদিকে বারডেম হাসপাতালের দিকে ছুটতে দেখা যায়। যতবারই তিনি অটোরিকশা দেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ততবারই আরও ৮/১০জন যাত্রীকে একই অটোরিকশা ভাড়া করার জন্য দরকষাকষি করতে দেখে অন্যদিকে ছুটতে দেখা যায়।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, জরুরি একটা কাজে এক্ষুণি উত্তরা যেতে হবে। কিন্তু জুতসই কোনো পরিবহন খুঁজে পাচ্ছি না। মিনিট দশেক আগে একজন সিএনজি চালক ৮০০ টাকা ভাড়া চাইলেন। কিন্তু এত টাকা আমার সঙ্গে নেই। ধর্মঘটের ফলে বাস বন্ধ থাকায় জরুরি কাজে কখন কীভাবে যাবো বুঝতে পারছি না।
এ যুবকের মতো অসংখ্য মানুষকে শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কেউ রিকশাচালককে কেউ ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক আবার কেউবা পণ্যবাহী পিকআপভ্যান চালককে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছিলেন। দিনের চেয়ে রাতের বেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের অতিরিক্ত ভাড়া হাকতে দেখা যায়।
এ দৃশ্যপট শুধু শাহবাগের নয়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গণপরিবহন ধর্মঘটের ফলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘরে ফেরা হাজারো মানুষের চরম দুর্ভোগ হাতে হয়।
সরেজমিন রাজধানীর নিউমার্কেট, আজিমপুর, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন মোড়ে অসংখ্য মানুষ যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছে। কেউবা অতিরিক্ত ভাড়া গুনে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল কিংবা রিকশায় গন্তব্যে ছুটছিলেন। আবার কেউবা হেঁটেই গন্তব্যে রওনা হচ্ছিলেন। বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল এবং গার্মেন্টসকর্মীদের ভোগান্তি বেশি হয়।
রাজধানীর নিউমার্কেটের একটি পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কর্মচারী মিরপুরের বাসিন্দা হায়দার আলীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, করোনাকালে অর্ধেক বেতনে চাকরি করেছি। করোনা কমলেও এখন পর্যন্ত আগের বেতন দিচ্ছে না মালিক। মার্কেট খোলা থাকায় আজ দ্বিগুণ ভাড়া খরচ করে কিছুটা পথ হেঁটে কিছুটা পথ ভ্যানে করে মার্কেটে এসেছি। এখন রাতের বেলায় কীভাবে যাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ব্লকে হৃদরোগে আক্রান্ত বাবাকে নিয়ে গত চারদিন ধরে দৌড়ঝাঁপ করছেন মাতুয়াইলের বাসিন্দা আফসানা বেগম। তিনি বলছিলেন, বাবার জন্য তাদের কয়েকজন ভাই-বোন প্রতিদিন পালা করে হাসপাতাল থেকে বাসায় বাসা থেকে হাসপাতালে এসে ডিউটি করেন। গণপরিবহন ধর্মঘটের ফলে এত দূরের পথ বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে বলে গত রাত থেকে আজ রাত পর্যন্ত তিনি একা থাকছেন। তার আরেক বোন একটু আগে হাসপাতলে আসায় তিনি বাসায় উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন।
তিনি ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, আমাদের মতো গরিবরা বাস ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনের চলাচল চিন্তা করতে পারে না। এখন অতিরিক্ত ভাড়া গুনে কোনো যানবাহনে যাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন।