বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৬ অপরাহ্ন

একমাত্র কৃষিই দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচাতে পারে : ড. মো. শাহজাহান কবীর

করোনা মহামারী উত্তর সারা বিশ্বে নিশ্চিত পরিণতি যেখানে খাদ্য সংকট ঠিক তখন বাংলাদেশ সম্পর্কে উল্টো তথ্য দিচ্ছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ), ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় চাল উৎপাদনে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাদের তথ্যে, চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) চালের উৎপাদন তিন কোটি ৬০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। বিগত আমন, আউশ ও চলতি বোরোর আশাতীত বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রকৃতপক্ষে এবছর চালের উৎপাদন হবে মোট ৩৮.৫৪ লাখ টন। এতদিন চাল উৎপাদনের তিন নম্বর স্থানটি দখলে ছিল ইন্দোনেশিয়ার। আর প্রথম স্থানে চীন এবং দ্বিতীয় স্থানে ছিল ভারত। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে চীন-ভারত থাকলেও তিন নম্বর স্থানটি দখল করে নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরে আমন মওসুমে রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। আবার গত আউশ মওসুমেও চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ চলতি বোরো মওসুমে সাড়ে চার লাখ টন বাড়তে পারে চালের উৎপাদন। তিন মওসুমে উৎপাদন বৃদ্ধির সম্মিলিত ফলাফলই বাংলাদেশ শীর্ষ তিনে চলে আসার মূল কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনা প্রাদুর্ভাবকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক মহাবিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। করোনা নিয়ে আমাদের মধ্যে মারাত্মক ভীতি থাকলেও করোনা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে কোথায় কোথায় গুরুত্ত¦ দিতে হবে। ধান নিয়ে সবার মধ্যে এক ধরনের অনীহা/আত্মতৃপ্তি তৈরি হয়েছিল, অনেক ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব কমে গিয়েছিলো কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে ত্রাণ/সাহায্য/প্রণোদনা যাই বলি না কেন বাহ্যত চালই প্রধান এবং দেশের প্রধান জীবন রক্ষাকারী এবং খাদ্য নিরাপত্তাকারী ফসল। সবারই এখন উপলব্ধি হচ্ছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কৃষিই মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এদিকে সরকার দেশের সকল মানুষকে সাথে নিয়ে যখন করোনা মোকাবেলা, খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করার একধাপ এগিয়ে গেছে ঠিক তখনই মরার উপর খাড়ার ঘা এর মতো আবির্ভূত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এতে প্রায় এক লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার হেক্টর কৃষি জমি আক্রান্ত হয়েছে। টাকার অংকে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সারাদেশে এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২কোটি ৪ লাখ ৩৬হাজার মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে হাওড়ের শতভাগ এবং সারাদেশে প্রায় ৮০ভাগ ধান কর্তন হয়েছে। করোনার লকডাউনের কারণে এবারের বোরো ধান ঠিক মত কাটা ও ঘরে তোলা নিয়ে সর্বমহলে এক ধরনের উৎকণ্ঠা ছিল এটা ঠিক কিন্তু পরিস্থিতির উত্তরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কৃষিমন্ত্রী মহোদয়ের নেতৃত্বে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের পুরো প্রশাসন এসে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে এক ধরনের উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষও ঝাঁপিয়ে পড়েন বছরের সবচেয়ে বড় ফসল বোরো ধান ঘরে তুলতে। ধান কাটার এই কর্মযজ্ঞটি প্রতিদিন সরাসরি মনিটর করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ কাজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, এমপি। এবার সরকারের যান্ত্রিক সহযোগিতা হাওড়সহ সারা দেশের ধান কাটায় যোগ করে এক নতুন মাত্রা। কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার দিয়ে মহা ধুমধামেই কৃষকরা এখন ঘরে তুলছেন তাদের মাঠের সোনালি ফসল। সময় মতো ধান কাটা, ঘরে তুলতে পারা এবং আশাতীত ফলন ও দাম পেয়ে দারুন খুশি কৃষকরা এবং খাদ্য নিরাপত্তায় এসেছে স্বস্তি।

তবে এই আশাতীত ফলন মিরাকেল কোন বিষয় নয়। বোরো মওসুম শুরুর আগেই কৃষি মন্ত্রণালয়, ব্রি, ডিএই এবং বিএডিসিসহ সবার উৎপাদন বাড়ানোর যৌথ পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের ফল এটি। একদিকে বীজ, সার, সেচসহ সকল উপকরণ সময়মত কৃষকের কাছে যেমন নিশ্চিত করা হয় অন্যদিকে সঠিক ব্যবস্থাপনা যেমন সঠিক জাত নির্বাচন, সঠিক সময়ে সঠিক বয়সের চারা রোপণ, সার, পানি, আগাছা, রোগ বালাই, পোকা মাকড়ের দমন ইত্যাদি বিষয়ে কৃষকদেরকে অবহিত করার জন্য ব্রি-ডিএইর যৌথ উদ্যোগে ১৪টি অঞ্চলে ১৪টি ওয়ার্কশপ করা হয়। এসব ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ফলন বৃদ্ধির নেপথ্যের বিজ্ঞানটা হচ্ছে সুষম সারের পরিমিত ব্যবহার। এ বছর বোরো মওসুম শুরুর পূর্বেই উৎপাদন খরচ কমানো ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার ১৬ই ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে ২৫টাকা কেজির ডিএপি ১৬টাকায় নামিয়ে আনা হয় এবং কৃষকের কাছে সহজলভ্য করে। ফলে কৃষকরা এ সার ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে, এতে ধান গাছ তার দুটি মূল পুষ্টি উপাদান যেমন- N ও P একত্রে পায়। N ও P উপাদানের মধ্যে Synergistic বা অতিপ্রভাব বিদ্যমানের ফলে ধান গাছ মাটি থেকে অধিক পরিমাণ N আহরণের পাশাপাশি P আহরণের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। ফলে ধান গাছের কুশি উৎপাদন, দানার গঠন ও পরিপুষ্টতা ত্বরান্বিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে, এ বছর বোরো ধানের ফলন আশাতীত ভালো হয়েছে। এবারের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে আগামী আউশ ও আমন এবং পরবর্তী বছরের পরিকল্পনা সাজাতে পারলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজেই সম্ভব।

এবার বোরো মওসুমে ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলো (ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৬৩, ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৭৪, ব্রি ধান৮১, ব্রি ধান৮৪, ব্রি ধান৮৬, ব্রি ধান৮৮ ব্রি ধান৮৯) সারা দেশে আশাতীত ভালো ফলন দিয়েছে। এ জাতগুলোর ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি ৭.৫-৯.৫ টনের মধ্যে। এছাড়া ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ এর ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি ৯.৫-১২.০ টন। অতএব আগামী দিনের খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলো নিশ্চিতভাবে ভুমিকা রাখবে।

২০২০ সালের করোনা মহামারী পরবর্তী সময়ে কি ঘটবে সেই আশঙ্কার মাথায় নিয়ে এখনই জরুরি পদক্ষেপের বিকল্প নেই। করোনা পরিস্থিতির দ্বারা খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা আক্রান্ত হওয়া মানে বাঁচা-মরার আরেক সংকটের মুখোমুখি হওয়া। এ কারণে কৃষির ওপর করোনা পরিস্থিতির প্রভাব সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ বা উত্তরণের জন্য করণীয় নির্ধারণ করতে হবে এবং তা করতে হবে এখনই। এসব কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলছেন, এক ইঞ্চি জমি যেন পতিত না থাকে। যে যেভাবেই পারেন প্রতিটি ইঞ্চি জায়গার সদ্ব্যবহার করবেন। বাড়ির উঠানে, আশপাশে তরিতরকারি, ফল-মূলের গাছ লাগালেও পরিবারের কাজে লাগবে। অনেকে বিক্রি করে কিছু পয়সার মুখ দেখবেন। এ ছাড়া কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষিমন্ত্রীকেও বিশেষভাবে নজরদারি করতে বলেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন খাদ্যে উদ্বেৃত্ত দেশ। তারপরেও বসে থাকলে চলবে না। করোনার কারণে অনেক দেশ সংকটে পড়বে। আমাদের থাকলে আমরা যেন তাদের সহযোগিতা করতে পারি।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার বিষয়ে জাতিসংঘের সতর্কবাণীর প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই করোনার মহামারির কারণে মন্দার হাত থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও মজুদ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়ে তিনি ঘোষণা করেছেন ৫০০০ কোটি টাকা কৃষি প্রণোদনা। এটি সহ কৃষি প্রণোদনায় মোট বরাদ্দ ১৯৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া সারের জন্য ঘোষণা করেছেন ৯০০০ কোটি টাকার ভর্তুকি।
বাংলাদেশে খাদ্যের সঙ্কট যাতে না হয়, সেজন্য যা যা করা দরকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কেননা তিনি বিশ্বাস করেন কৃষিই একমাত্র আসন্ন সংকট থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে। তিনি সম্প্রতি এক সভায় বলেছেন, খাদ্যই একমাত্র সমাধান, কৃষিই একমাত্র বাঁচাতে পারে। সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় আমাদের বর্তমান সরকার কৃষিকে ঘিরে নানা পরিকল্পনা ও জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী কৃষিকে রক্ষায় কৃষকদের বাঁচাতে তাদের দুর্যোগের এ সময়ে দিয়েছেন আর্থিক সহায়তা ও উপকরণ প্রণোদনা, কৃষি মন্ত্রণালয়কে দিয়েছেন সময়োপযোগী দিক নির্দেশনা। তার প্রত্যাশা, খাদ্য উৎপাদন করে যেমন আমাদের চাহিদা মিটাবো, সেই সাথে আমরা রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করে আমাদের চাষাবাদ করতে হবে।

আশাব্যঞ্জক ব্যাপার হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনায় কৃষি বান্ধব পদক্ষেপের ফলে সা¤প্রতিক বছরগুলোতে দেশে চালের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। বর্তমান সরকারের গত ১১ বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদনে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ধান উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানটি দখলে নিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) খাদ্য উৎপাদন এবং প্রবৃদ্ধি সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে বিশ্বে অন্যতম ধান উৎপাদনকারী হিসেবে পরিচিত যেসব দেশ (যেমন-ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড) সে সব দেশের অধিকাংশেরই ধান উৎপাদন প্রবৃদ্ধি কমলেও একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল বাংলাদেশ। ধান উৎপাদনে বিশ্বের বড় দুই দেশ ভারতের প্রবৃদ্ধি ছিল ২ শতাংশ ও চীনের শূণ্য দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির হারে সবাইকে ছাড়িয়ে দেশের উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

উৎপাদন প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে চলতি খরিপ-১ মওসুমে উফশী আউশ উৎপাদন বাড়াতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলায় ৪ লাখ ৫৯ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে মোট ৪০ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার ৭৫০ টাকার বীজ ডিএপি, এমওপি সার, পরিবহন ও আনুষঙ্গিক ব্যয় প্রদান করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ ১ বিঘা জমির জন্য একজন কৃষক মোট ৮৭৫ টাকার প্রণোদনা পেয়েছেন। এ প্রণোদনা কার্যক্রম শেষ হতে না হতেই করোনাভাইরাসের থাবায় বৈশ্বিক খাদ্য পরিস্থিতিতে পরিবর্তন শুরু হয়। সেজন্য আউশের উৎপাদন আরো একটু বাড়িয়ে নিতে কৃষককে দ্বিতীয় ধাপে আরো সহায়তা দিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে প্রণোদনা কর্মস‚চির আওতায় আউশের জন্য কৃষকদের মাঝে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। আউশ ছাড়াও মওসুমের অন্যান্য শস্য বিশেষ করে পাট, তিল ও গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদে প্রণোদনা সুবিধা পাবেন কৃষক।

পাশাপাশি বিএডিসিও আওতাভুক্ত এলাকায় সেচ খরচ ৫০% হ্রাসের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিএমডিএ, তিস্তা, মেঘনা-ধনগোদা, জিকে সেচ প্রকল্পসহ প্রাতিষ্ঠানিক সেচ প্রকল্প এলাকাগুলোতে সেচ খরচ ফ্রি করা হচ্ছে। এইভাবে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সময় মতো যাতে আউশ রোপন নিশ্চিত করা যায় সেভাবে সমস্ত পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। আসন্ন আউশ মওসুমে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১১ লক্ষ হেক্টর থেকে ১৩.৫ লক্ষ হেক্টরে উন্নীত করা হয়েছে সেখান থেকে মোট উৎপাদন হবে ৩৭.৫ লক্ষ মেট্টিক টন।

আউশের গুরুত্ব সম্পর্কে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মিডিয়াকে বলেছেন, আউশের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। ভ‚গর্ভস্থ পানির ভারসাম্য ধরে রাখতে আউশ আবাদ বাড়ানো হবে। উচ্চফলনশীল জাতের আউশ ধান আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি করা হবে। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা আরো জোরদার করতে সহায়ক হতে পারে আউশ উৎপাদন।

আমনে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সম্পুরক সেচ নিশ্চিত করার জন্য সরকার তথা কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। উচ্চফলনশীল জাতের ব্যবহারের পাশাপাশি সময় মতো সেচ ও অন্যান্য পরিচর্যা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমনেও বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বোরো, আউশ এবং আমন সব মিলিয়ে উৎপাদিত হবে ৩৮৫.৪০ লাখ টন। আমাদের এক বছরে ভাতের জন্য চালের দরকার প্রায় ২৫০ লাখ টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ১১ মে এর তথ্যানুযায়ী বছরের প্রযোজন মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি গুদামে এখনো ৯.৯৭ টন চাল ও ২.৮২ টন গম মজুত আছে। দেশের বর্তমান মজুতকৃত চাল দিয়ে আগামী ৭-৮ মাস নিশ্চিত থাকা যাবে। করোনাকালে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ২২ লাখ ২৫ হাজার টন খাদ্যশস্য ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারি এই পদক্ষেপের কারণে চলতি মওসুমে ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।

কৃষি অর্থনীতিবিদদের হিসাবে কোন মওসুমে ধানের দাম ১% হারে বাড়লে পরবর্তী মওসুমে ২% হারে আবাদ বাড়ে। সুতরাং সামনের আউশ এবং আমনে আবাদ এলাকা বৃদ্ধিতে এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষি বিভাগের ১৪টি অঞ্চল ও জেলার কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকদের পাঠানো তথ্যানুসারে সারা দেশে বর্তমানে ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকা দরে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে। এবার ধানের যা দাম আছে তাতে কৃষকরা বেশ সন্তুষ্ট। তাছাড়া সামনের আউশ এবং তারপর আবার আমন থেকে সংগ্রহতব্য ধান ও চালে এই মজুতে বাড়তি নিরাপত্তা যোগ করবে। সুতরাং খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে আপাতত কোন ধরনের আশঙ্কা নেই।
আপাতত খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শংকা না থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদে করোনা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পরিকল্পিত পদক্ষেপের বিকল্প নেই। করোনা পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় উন্নত দেশ থেকে ঋণ পাওয়ার সম্ভবনা কমে যাবে। ফলে দেশীয় সীমিত সম্পদের ব্যবহার করে কিভাবে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জিত হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আগামী বাজেটে কৃষিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশাল জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখার কোনো বিকল্প নেই। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সমন্বিত কার্যক্রমই হতে পারে ভবিষ্যতে দুর্ভিক্ষের মতো দুর্যোগ মোকাবেলার অন্যতম উপায়।

শুরুতেই ইন্দোনেশিয়াকে পিছনে ফেলে তিন নম্বরে উঠে আসার উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করলেও এ অবস্থানটি ধরে রাখাও আমাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। এজন্য চাই সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা ও এর যথাযথ বাস্তবায়ন।

লেখক: মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট, গাজীপুর।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: