বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন

বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত, আউসের ফলন নিয়ে শঙ্কা

শামীম আহমেদ, বরিশাল : বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে পানি বন্যা ও পূর্নিমার জোতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত পুরো বিভাগ। সপ্তাহব্যাপী জোয়ারের পানি যেমন ক্ষতি করেছে রাস্তাঘাট তেমনি ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ফসলের ক্ষেত্রেও। জলবন্ধ হয়ে পড়েছে ধানের বীজতলা। তলিয়ে গিয়েছে অন্যান্য ফসলও। মাঠে এখনও রয়েছে আউশের আবাদ। ইরিধানও রয়েছে কিছু। তবে বৃষ্টিপাত এবং জোয়ারের পানিতে ধানের আবাদ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

গত ২০ বছরের মধ্যে চলতি মাসে ডেঞ্জার লেভেল অতিক্রমের রেকর্ড সৃষ্টি হয় বরিশালের নদ-নদীতে। ফলে আউশ ধান আবাদে বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়েও দেখা দিয়েছে জটিলতা। যদিও এখনও শঙ্কার কিছু নেই বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ২ লাখ ৪২ হাজার ৫৯৬ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৯ দশমিক ৩২ ভাগ।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের আওতাধীন বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ১৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর, পিরোজপুরে ১৭ হাজার ১৩৫ হেক্টর, ঝালকাঠিতে ১৪ হাজার ২৬৫ হেক্টর, পটুয়াখালীতে ৩৭ হাজার ৯৭৬, বরগুনায় ৫৫ হাজার ৮২৫ এবং ভোলায় সর্বাধিক ৯৮ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে।

সূত্রমতে, করোনা-পরবর্তী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ বছরের উৎপাদিত আউশ বিশেষ সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এবার আউশের উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা পূরণ হলে দক্ষিণাঞ্চলের খাদ্যভাণ্ডারে যোগ হবে বাড়তি এক লাখ ৩৫ হাজার ১১৯ টন অতিরিক্ত চাল। তবে চলতি মাসে ‘বন্যার’ কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা থাকছেই।

জানা গছে, আউশের চারা রোপণ সম্পন্ন হয় জুন-জুলাই মাসে। সে হিসেবে মাঠে এখনও পরিপক্ক ধান আছে। অপরিপক্কও আছে কিছু। এছাড়া মৌসুম শেষ হলেও কোন কোন স্থানে ইরি ধান মাঠে রয়েছে এখনও। বেশ কয়েকদিন দুই বেলা অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ডুবছে-ভাসছে ধানের গাছ, নুয়ে পড়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। এ অবস্থায় ফসলের ক্ষতির আশঙ্কায় দিশেহারা কৃষক। ২/১ দিনের মধ্যে পানি নেমে না গেলে বা ক্ষেত জলাবদ্ধ হয়ে পড়লে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে অনেকটাই।

যদিও এ বছর আউশ উৎপাদনে গত ৫০ বছরের রেকর্ড ভাঙার আশা রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। গত মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে আউশ আবাদ হয়েছিল এক লাখ ৮১ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে। যা এ বছরের চেয়ে ৬১,০৭১ হেক্টর কম।

এদিকে জোয়ারের পানি কমতে শুরু করেছে বরিশালের নদ-নদীতে। তবে এখনও বিপদসীমার উপরেই রয়েছে পানির প্রবাহ। আউশ আবাদের রেকর্ডের সাথে রেকর্ড পরিমাণ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে নদ-নদীতেও।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, শনিবার (২২ আগস্ট) সকালে জোয়ারে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ২১ সেন্টিমিটার, ভোলার দৌলতখানের সুরমা-মেঘনা নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ৭৪ সেন্টিমিটার, ভোলা খেয়াঘাট সংলগ্ন তেতুলিয়া নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডারদের তথ্যানুযায়ী গত ২০ বছরের মধ্যে কীর্তনখোলা নদীর পানি বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) সর্বোচ্চ লেভেল অতিক্রম করে। ওইদিন কীর্তনখোলা নদীর পানির উচ্চতা ছিলো ৩.৭ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে কীর্তনখোলার নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম জানান, গত কয়েকদিন ধরে বরিশালের বেশিরভাগ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নেমেও যাচ্ছে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যেই।

জানতে চাইলে বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শষ্য) তৌফিকুল ইসলাম জানান, জোয়ারের পানি উঠলেও তা আবার দ্রুতই নেমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বরিশাল নদীপ্রবণ এলাকা। তাই জোয়ারকালীন ৮/১০ সেন্টিমিটার পানি বাড়লেও ৩/৪ ঘণ্টা পর ভাটির টানে দ্রুতই নেমে যায়। ফলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটাই কম। তবে যেহেতু মাঠে এখনও আউশ ধান পরিপক্ক অবস্থায় আছে, সেক্ষেত্রে মাঠে সপ্তাহখানেক পানি আবদ্ধ হয়ে থাকলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বীজতলার ক্ষয়-ক্ষতি এখনও পর্যন্ত তারা নিরূপণ করেননি।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: