শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন

বরগুনার তালতলীতে স্বামীর নির্মম নির্যাতন, স্ত্রীর শরীরে খুন্তির ছ্যাঁকা

মংচিন থান, বরগুনা প্রতিনিধি : দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় স্বামী মানিক খাঁন স্ত্রী মার্জিয়া আক্তারের ওপর নির্মম নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মার্জিয়াকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা এবং চুল কেটে দিয়েছে। মার্জিয়াকে স্বজনরা উদ্ধার করে শুক্রবার সকালে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। ঘটনা ঘটেছে তালতলী উপজেলার বড় আমখোলা গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে।

জানাগেছে, ২০০৯ সালে উপজেলার বড় আমখোলা গ্রামের আব্দুল খালেক খাঁনের মেয়ে মার্জিয়াকে বরগুনা সদর উপজেলার দুপতি গ্রামের আনোয়ার খানের ছেলে মানিক খাঁনের সাথে বিয়ে দেয়। বিয়ের পরে শ্বশুর খালেক খাঁন জামাতা মানিককে বাড়ী নির্মাণের জন্য দুই লক্ষ টাকা দেন। ওই টাকা দিয়ে মানিক শ্বশুর বাড়ীর পাশে বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। মানিক দম্পতির দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। গত তিন বছর পূর্বে মানিক ঢাকা চলে যান। ওই সময় থেকেই স্বামী মানিক স্ত্রী মার্জিয়া ও দুই কন্যার কোন খোজ খবর নিচ্ছে না।

গত বৃহস্পতিবার মানিক শ্বশুর বাড়ীতে আসেন এবং স্ত্রীকে তার বাড়ীতে নিয়ে যান। ওইদিন রাত ১১ টার দিকে স্বামী মানিক ব্যবসার কথা বলে স্ত্রী মার্জিয়ার বাবার কাছ থেকে ফের দুই লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলে। এ টাকা দিতে স্ত্রী অস্বীকার করায় ক্ষিপ্ত হয় মানিক। পরে মানিক স্ত্রী মার্জিয়াকে বেধরক মারধর শুরু করে। এক পর্যায় স্বামী মানিক, ননদ জাকিয়া ও শাশুড়ি আলেয়া মিলে মার্জিয়ার শরীরের ১২টি স্থানে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা এবং চুল কেটে দেয়। তার ডাক চিৎকারে পাশর্^বর্তী লোকজন ছুটে আসলে মার্জিয়া অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায়। পরে স্বজনরা মার্জিয়াকে উদ্ধার করে শুক্রবার সকালে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

হাসপাতাল গিয়ে দেখাগেছে, মার্জিয়া শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা নিয়ে হাসপাতাল বেডে বিষম যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। তার শরীরের পোড়া স্থানগুলোতে ফোসকা পড়ে কালো ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। মাথার পিছনের চুল কাটা রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী পাশ্ববর্তী সুর্য্যভানু বলেন, রাতে মানিক খানের বাড়ীতে ডাক চিৎকার শুনে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি মার্জিয়াকে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মারধর করছে। তারা মার্জিয়ার শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি যাওয়ার পরে তারা মার্জিয়াকে ছেড়ে দেয়।

মার্জিয়ার বাবা আবদুল খালেক খান বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার মেয়েকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করে আসছে জামাতা মানিক। গত তিন বছর ধরে আমার মেয়ের কোন খোঁজ খবর নেয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে আমার মেয়েকে তার বাড়ীতে নিয়ে যায়। পরে জামাতা মানিক, তার বোন জাকিয়া ও মা আলেয়া মিলে আমার মেয়েকে নির্মম নির্যাতন করেছে। গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে। পাশ্ববর্তী লোক না হলে ওরা আমার মেয়েকে মেরেই ফেলতো। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

তালতলী থানার ওসি মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেয়া অমানবিক। এ বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: