বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন

মহামারিতেও থেমে নেই কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদের কার্যক্রম

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :: ঠাকুরগাঁওয়ের আঞ্চলিক গানগুলো লোকজ সংস্কৃতির গ্রামীণ জীবনের প্রাণের স্পন্দন। এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে করোনাকালেও কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদ চালিয়ে যাচ্ছে শিল্প ও সংস্কৃতির চর্চা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে জেলার কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদ।

জানা যায়, ১৯৮২ সালে মরহুম গোলাম রব্বানী চৌধুরীর আর্থিক সহোযোগীতায় ও অনুপ্রেরনায় সাইফুল ইসলাম প্রবাল চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন যুবক মিলে ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদ প্রতিষ্ঠা করে। দেশের গান নাটক,সাংস্কৃতিক উৎসবের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদ নামের এই সংগঠনটি ১৯৯৩ সালে কর্নেট ক্লাবের নাম নামকরন পরিবর্তন করে সংগঠনের নতুন নামকরন করা হয় কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদ।

২০০২সালে প্রথম ঈদ মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব পালন করে ব্যাপক সাফল্য পেয়ে ৭ বছর নিয়মিত উৎসব পালন করেছে। এবং ২০০৮ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি হলে ঠাকুরগাঁওয় লোকজ ঐতিহ্য “ধামের গান”পরিবেশন করে খ্যাতি অর্জন ও ২০১২সাল থেকে ১৬ ডিসেম্বর থেকে প্রতিবছরেই বিজয় ও সাংস্কৃতিক মেলা উদযাপন করে আসছে। সংঙ্গীত ও শিল্প সাহিত্য অঙ্গন সম্পৃক্ত করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিরলস ভাবে কাজ করে জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ ভূনিকা পালন করে যাচ্ছে কর্নেট সংস্কৃতি সংসদ।

তবে সংগঠনটির নিজস্ব ভবন না থাকায় শিল্পীরা নানা প্রতিকুলতায় চলছে সাংস্কৃতি কার্যক্রম। করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের শিক্ষাঙ্গন যেখানে বন্ধ সেখানে সংগঠনটি স্বাস্থ্য বিধি মেনে করোনাকালেও চালিয়ে যাচ্ছে সংগীত চর্চা । হারমোনিয়াম আর তবলার তালে তালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নাটক, গান, অভিনয়, দেশাত্ববোধক ও লোকজ গানে গানে মুখরিত হয়ে উঠে সংগীতশিল্পীদের অনুশীলন। সংগঠনটি নিয়মিত বিজয় ও সাংস্কৃতিক মেলা ২০১৯ সালে সফল ভাবে উদযাপন করেছে বর্তমানে সংগঠনটি অতীত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের জীবনী সংগ্রহ করে সাংস্কৃতিক মিউজিয়াম তৈরির কাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমাজে অসংগতি দূরসহ দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধকে তরুণদের মাঝে উদ্বুদ্ধ করতে সাংস্কৃতিক চর্চার কোনো বিকল্প নেই। আর কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদ শুরু থেকেই ভালো কাজ করে যাচ্ছে। বিজয়ের মাসে বিজয় ও সাংস্কৃতিক মেলা, বাংলা নববর্ষে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বস্ত্র বিতরনসহ বিভিন্ন দিবসে অনুষ্ঠান করে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, এ জেলায় ছোট-বড় ৩০টি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে তবে ঠাকুরগাঁও কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদ যে ভাবে মুক্তিযুদ্ধকে তরুণদের মাঝে উদ্বুদ্ধ করতে সাংস্কৃতিক চর্চা করে যাচ্ছে জেলায় আর কোন সাংস্কৃতিক সংগঠন এমন চর্চা করে কিনা সন্দেহ আছে। তবে তারা যদি সরকারি ভাবে কোন সাহায্য-সহযোগিতা পায় তাহলে আরও ভালো করবে।

সংগঠনের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে আমরা (কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদ) নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করতে প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছি। এই সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। আমরা বিজয় ও সাংস্কৃতিক মেলায় জেলা ও উপজেলায় শিল্পী ও সাংস্কৃতি সংগঠনের সমন্বয়ে অনুষ্ঠান পরিবেশনের ব্যবস্থা করে থাকি।

তারা আরও বলেন, আমাদের কোন নিজস্ব ভবন নেই। অন্যের বাসা ভাড়া নিয়ে আমরা শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতি চর্চা চালিয়ে যাচ্ছি। আর সরকারিভাবে আমরা কোন সাহায্য- সহযোগিতাও পাইনা। নিজস্ব অর্থায়নে ৩৮ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি। সাহায্য-সহযোগীতার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে কোন আবেদন করা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে কর্তারা বলেন, ৩৮ বছরে অনেকবার জমি /ভবন ও আর্থিক সহোযোগীতার জন্য আবেদন করা হয়েছিল জেলা প্রশাসক মহোদরগন আমাদের আশ্বস্ত করলেও বাস্তাবায়ন করননি।

কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদের সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম প্রবাল চৌধুরী বলেন, আমরা লোকজ সাংস্কৃতি চর্চাকে এগিয়ে নিতে ক্জ করছি বিজয় ও সাংস্কৃতিক মেলা আয়োজন করে জেলা উপজেলা ও পাশ্ববতি জেলা গুলোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে দেশ প্রেম ও সাংস্কৃতিক চর্চাকে ত্বরান্বিত করতে কাজ করছি।

কর্নেট সাংস্কৃতি সংসদের সভাপতি সৈয়দ নুর হোসেন বাবলু বলেন, আমারা জেলায় সাংস্কৃতিক মিউজিয়াম তৈরি করতে কাজ করছি, মিউজিমে অতীত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের জীবনি সংগৃহীত থাকবে যা দেখে নতুর প্রজন্ম ইতিহাস সম্বন্ধে জানবে। সহযোগীতা ও পৃষ্টপসকতা পেলে আমরা গতি পাবো।

এবিষয়ে জেলা কালচারাল অফিসার সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদ সম্পর্কে আমরা জানি তারা বিজয় মেলাসহ আরও বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে।

এব্যাপারে জেলা প্রশাসক কেএম ড. কামরুজ্জামান সেলিমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জেলায় কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদ নামে একটি সংগঠন আছে এটা জানি। সংগঠনটি ভালো কাজ করে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রোগ্রাম করে। সংগঠনটি তো কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান না যে সরকারি সহযোগিতা চাইলেও তো দেওয়ার কোন নীতিমালা নেই।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: